ফুড পয়জনিং থেকে সুস্থ হতে কত সময় লাগে?
আমি বার্গারে একটি কামড় দেওয়া মাত্রই বুঝতে পারি এতে কোনো সমস্যা আছে। প্রথমে ভেবেছিলাম শেফ হয়ত ভুলবশত প্যাটিটি (কিমা) বেশি রান্না করে ফেলেছে। যার ফলে স্বাভাবিক স্বাদটা আর নেই। কিন্তু পরে আমার সন্দেহ সঠিক প্রমাণিত হয়। এক ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে, আমি ভয়ানক ফুড পয়জনিং এর শিকার হই।
যিনি আগে ফুড পয়জনিং এর শিকার হয়েছেন তিনি জানেন, এটি এমন একটি অভিজ্ঞতা যা কেউ দ্বিতীয় বার ভোগ করতে চায় না। আমার স্ত্রীও অসুস্থ হয়ে পড়েছিল, কিন্তু সে কয়েক ঘণ্টা পরই সুস্থ বোধ করতে শুরু করে। অন্যদিকে আমি দুই দিন পার হয়ে গেলেও পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ওঠতে পারিনি।
খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করা সংস্থা স্টপ ফুডবর্ন ইলনেসের সিইও মিটজি বাউমের মতে, ফুড পয়জনিং থেকে সেরে ওঠার সময় নির্ভর করে খাবারের মধ্যে থাকা জীবাণুর পরিমাণের উপর। বেশিরভাগ ফুডপয়জনিং-ই বাড়িতে কয়েকদিন বিশ্রামের পরেই ভালো হয়ে যায়। যদিও কিছু ক্ষেত্রে কারও কারও অবিলম্বে চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে।
ফুড পয়জনিং কতক্ষণ স্থায়ী হবে তা অনুমান করার কোনো সঠিক উপায় নেই, তবে সহজে সুস্থতা ফিরে পাওয়ার নানা প্রক্রিয়া আছে।
ফুড পয়জনিং এর শুরু কীভাবে হয় ?
দূষিত খাবার বা পানীয় খেলে খাদ্যজনিত এ অসুস্থতা দেখা দেয়। বাউম ব্যাখ্যা করেন, জীবাণুগুলো বিভাজিত হয়ে আরও বৃদ্ধি হতে পারে জন্য এমন কোনো অনুকূল পরিবেশে প্রবেশ করলেই এমনটা হয়ে থাকে।
সাধারণত ৪০ থেকে ১৪০ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রায় বেশিরভাগ অসুস্থতা সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসগুলো বৃদ্ধি পায়।
খুব বেশি সময় ধরে ঘরের তাপমাত্রায় রেখে দেওয়া খাবার অথবা কম রান্না করা এবং কাঁচা খাবার খাওয়ার ফলেও এমনটা হতে পারে । ইউএস ডিপার্টমেন্ট অফ এগ্রিকালচার অনুযায়ী, ঘরের তাপমাত্রায় ই. কোলি, স্ট্যাফিলোকক্কাস অরিয়াস এবং সালমোনেলা-র মতো ব্যাকটেরিয়া খাবারে ২০ মিনিটেরও কম সময়ে তাদের সংখ্যা দ্বিগুণ করতে পারে।
ইউএস সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের অনুমান অনুসারে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী প্রতি ছয় জনের মধ্যে এক জন খাদ্যজনিত অসুস্থতার সম্মুখীন হবে, যার মধ্যে ফুড পয়জনিংও রয়েছে। এর পেছনে থাকা প্রধান জীবাণুগুলো হচ্ছে নরোভাইরাস, সালমোনেলা, ক্লোস্ট্রিডিয়াম পারফ্রিনজেনস, ক্যাম্পাইলোব্যাক্টর এবং স্ট্যাফিলোকক্কাস অরিয়াস ।
ফুড পয়জনিং-এর লক্ষণ প্রকাশ পায় কতক্ষণে?
মানুষ প্রায়শই মনে করে যে ফুড পয়জনিং সাথে সাথে ঘটে, তবে এমন সবসময় হয়না ।
স্টেটেন আইল্যান্ড ইউনিভার্সিটি হাসপাতালের মেডিকেল টক্সিকোলজির ডিরেক্টর নিমা মাজলেসির মতে, খাবারে বিষক্রিয়ার প্রভাব অনুভব করতে মানুষের কতটা সময় লাগে তা নির্ভর করে ব্যাকটেরিয়ার ধরনের উপর। কিছু ব্যাকটেরিয়ার এক থেকে দুই দিন লাগে তার লক্ষণ প্রকাশ করতে।
মাজলেসি বলেন, মানুষ যখন খাওয়ার পরে খুব দ্রুত অসুস্থ বোধ করে, তখন এটি স্ট্যাফিলোকক্কাস অরিয়াসের কারণে হতে পারে। এ ব্যাকটেরিয়া বিষাক্ত পদার্থ তৈরি করে, যা সেবনের ৩০ মিনিট থেকে আট ঘণ্টার মধ্যে আপনাকে অসুস্থ করতে পারে। স্ট্যাফিলোকক্কাস অরিয়াসের কারণে হওয়া ফুড পয়জনিং সাধারণত পেটে ব্যথা, বমি বমি ভাব এবং বমি দিয়ে শুরু হয়।
ফুড পয়জনিং থেকে সুস্থ হতে কতদিন লাগে?
যদি ফুড পয়জনিং স্ট্যাফিলোকক্কাস অরিয়াস প্ররোচিত টক্সিন থেকে আসে, তাহলে অসুস্থতা সাধারণত একদিনের বেশি স্থায়ী হয় না। ম্যানহাটনের মেডিক্যাল অফিসার গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজিস্ট ডা. প্রতিমা দিব্বা বলেন, মানুষ এক থেকে দুই দিনের মধ্যে ফুড পয়জনিং থেকে সেরে ওঠতে থাকে, কিন্তু লক্ষণ দুই থেকে চার সপ্তাহ পর্যন্তও স্থায়ী হতে পারে।
মজলেসি বলেন, 'এটা নির্ভর করে। কিছু ফুড পয়জনিং ১৪ দিন স্থায়ী হতে পারে, এ ক্ষেত্রে আপনার ক্রমাগত ডায়রিয়া হতে পারে। সাধারণভাবে বলতে গেলে, যত বেশি গুরুতর, সময়কাল তত কম।'
ফুড পয়জনিং থেকে তড়িৎ সুস্থ হওয়ার উপায় আছে কি?
ড. দিব্বা বলেন, এমন কোনো চিকিৎসা নেই যা আপনাকে সাথে সাথেই সুস্থ করে তোলবে । ফুড পয়জনিং সৃষ্টিকারী টক্সিনগুলোকে বের করতে আপনার শরীরের সাধারণত ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টা সময় লাগে।
নিজেকে সুস্থ রাখতে এবং পানিশূন্যতা এড়াতে, মজলেসি ক্রমাগত পানি খাওয়ার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, 'আপনি যদি ইলেক্ট্রোলাইট পানীয় পান করতে চান তবে নিশ্চিত করুন যে এটিতে চিনি কম রয়েছে। কিছু ইলেক্ট্রোলাইট পানীয়তে প্রচুর পরিমাণে চিনি থাকে এবং এটি আসলে ডায়রিয়াকে আরও খারাপ পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারে। তাই এ বিষয়ে সতর্ক থাকবেন।'
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেলথ প্রাপ্তবয়স্কদের শরীর থেকে বেড়িয়ে যাওয়া পানি পূরণ করতে ব্রথ (এক ধরনের স্যুপ) এবং স্পোর্টস ড্রিংক্স গ্রহণের পরামর্শ দেয়। এনআইএইচ ফলের জুসের সাথে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি মেশানোরও পরামর্শ দেয়।
অন্যদিকে, শিশুদের খাদ্যে পয়জনিং উপসর্গ কমানোর জন্য পেডিয়ালাইটের মতো ওরাল রিহাইড্রেশন দ্রবণ ব্যবহার করা উচিত।
এছাড়াও আপনাকে ২৪ ঘণ্টার জন্য শক্ত খাবার থেকে দূরে থাকতে হবে, বিশেষ করে যদি আপনার কিছু খেলেই বমি হয়ে যায়। মজলেসি বলেন, এটি তখন পরিপাকতন্ত্রকে পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও সুস্থ হওয়ার সময় দেয়।
প্রাপ্তবয়স্করা ডায়রিয়ার লক্ষণগুলো নিরাময় করতে অ্যান্টিডায়রিয়াল ওষুধ যেমন- বিসমাথ সাবসালিসিলেট বা লোপেরামাইড গ্রহণ করতে পারে।
মজলেসি ২৪ ঘণ্টা পরে উচ্চ কার্বোহাইড্রেটযুক্ত খাবারের ছোট ছোট টুকরো করে খাওয়ার পরামর্শ দেন। যদি আপনার ডায়রিয়া হয়ে থাকে তবে কলা, ভাত, আপেল সস, টোস্টের মতো খাওয়ার খাওয়া ভালো। লবণাক্ত ক্র্যাকারও খেতে পারেন কারণ তা হারিয়ে যাওয়া ইলেক্ট্রোলাইট পূরণে সাহায্য করে ।
কেউ যদি বমি বমি ভাব এবং বমিজনিত সমস্যায় ভোগেন তবে ড. দিব্বা তাকে ভারী খাবার, দুগ্ধজাত খাবার, পেটে গ্যাস উৎপাদনকারী খাবার এবং আঁশযুক্ত খাবার না খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, 'অনেকে মনে করে যে সালাদ খাওয়া তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াবে, কিন্তু আসলে উচ্চ ফাইবারযুক্ত খাবার উপসর্গগুলোকে বাড়িয়ে তুলতে পারে এবং ফুলে যাওয়া এবং পেটে অস্বস্তি তৈরি করতে পারে।"
কখন ডাক্তার দেখাবেন
তবে কিছু পরিস্থিতিতে হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয় । বয়স্ক, প্রাপ্তবয়স্কদের এবং যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল তাদের ফুড পয়জনিং এর চিকিৎসার জন্য অবিলম্বে একজন ডাক্তারের সাথে দেখা করা উচিত।
মাজলেসি বলেছেন , যাদের লক্ষণগুলো এক সপ্তাহ ধরে চলতে থাকে এবং যদি তারা হালকা মাথাব্যথা অনুভব করে বা তাদের রক্তাক্ত ডায়রিয়া হয় তবে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসা নেওয়া প্রয়োজন। স্বাস্থ্যকর্মীরা তাকে আইভি স্যালাইন সরবরাহ করতে পারবেন এবং কোনো ইলেক্ট্রোলাইট ভারসাম্যহীনতা বা অন্যান্য সমস্যা আছে কিনা তা নির্ণয় করে তার চিকিৎসা করতে পারবেন।
ড. ডিব্বা আরও বলেন, 'যদি উপসর্গগুলো খুব গুরুতর হয়ে যায় তবে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।'
অনুবাদ: সেহরীণ বিনতে রশীদ