পানি থেকে মাইক্রোপ্লাস্টিক কীভাবে দূর করবেন, সহজ পদ্ধতি জানালেন বিজ্ঞানীরা
ক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণা বা মাইক্রোপ্লাস্টিক উদ্বেগজনকভাবে সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে। এসব কণা খাদ্য, বুকের দুধ এবং এমনকি মেঘের মধ্যেও পাওয়া গেছে। এ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া একপ্রকার অসম্ভব বলে মনে হতে পারে। তবে নতুন এক গবেষণায় সুপেয় পানিতে থাকা মাইক্রোপ্লাস্টিক কমানোর একটি উপায় খুঁজে পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। আর সহজ এ সমাধান হলো পানি ফোটানো।
এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি লেটারস জার্নালে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত নতুন এক গবেষণাপত্রে ঝানজুন লি এবং এডি ওয়াই জেং জানিয়েছেন, পানি ফোটানো এবং ফিল্টার করার মাধ্যমে প্রায় ৯০ শতাংশ পর্যন্ত ক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণা অপসারণ করা সম্ভব। গবেষণায় ব্যবহৃত বিশ্বব্যাপী ১৪টি দেশের ১৫৯টি ট্যাপের/কলের পানির নমুনার মধ্যে ১২৯টিতে পাওয়া গিয়েছে এ মাইক্রোপ্লাস্টিক।
এ ক্ষুদ্র কণাগুলো খাবারের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে। তবে মানবদেহে এর প্রভাব এখনও স্পষ্টভাবে বোঝা যায়নি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাম্প্রতিক একটি প্রতিবেদনে মাইক্রোপ্লাস্টিকের সংস্পর্শে আসার ফলে বিভিন্ন সম্ভাব্য স্বাস্থ্য ঝুঁকির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তবে এ বিষয়ে আরও গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি।
নতুন এ গবেষণায় জড়িত না থাকা উডস হোল ওশানোগ্রাফিক ইনস্টিটিউশনের একজন জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী ক্রিস রেডি বলেন, 'বিজ্ঞান সাধারণত বেশ সময় নিয়ে থাকে। এ বিষয়টি নিয়ে এখনো কাজ চলছে।'
যে কারণে পানি ফুটিয়ে কমানো যায় মাইক্রোপ্লাস্টিক
গুয়াংঝো মেডিকেল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক লি এবং জিনান ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক জেং তাদের গবেষণার জন্য পানিতে পাওয়া যাওয়া সব ধরনের খনিজ ও রাসায়নিক পদার্থ এবং মাইক্রোপ্লাস্টিকগুলোর মিশ্রণে কলের পানির একটি নমুনা তৈরি করেছিলেন। তারা বুঝতে চেয়েছিলেন, কেবল পানিকে ফোটানো তা থেকে প্লাস্টিকের ক্ষুদ্র কণা অপসারণে কার্যকর হবে কি না।
ক্যালসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়ামের মতো খনিজগুলো প্রচুর পরিমাণে থাকা 'কঠিন' পানি (হার্ড ওয়াটার) নিয়ে গবেষণায় তারা বেশ অভাবনীয় সাফল্য পান। ক্যালসিয়াম কার্বনেট — যা সাধারণত কলের পানিতে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায় — যথেষ্ট উচ্চ তাপমাত্রায় শক্ত হয়ে যায়। এ প্রক্রিয়ায় এটি পানির মধ্যে থাকা প্লাস্টিকের কণাগুলোকে কার্যকরভাবে আবৃত করে ফেলে। পরে কফি ফিল্টারের মতো সাধারণ যেকোনো ফিল্টারের মাধ্যমে সহজেই এ শক্ত কণিকাকে পানি থেকে সরিয়ে ফেলা যায়।
বাড়িতে এ পদ্ধতি ব্যবহার করা উচিত?
গবেষক দুজন ই-মেইলের মাধ্যমে দ্য ওয়াশিংটন পোস্টকে জানিয়েছেন, মানবস্বাস্থ্যের ওপর মাইক্রোপ্লাস্টিকের প্রভাব সম্পূর্ণরূপে বোঝার জন্য এটা নিয়ে আরও অনেক কাজ করা প্রয়োজন। এছাড়া মাইক্রোপ্লাস্টিকের মতো এ ধরনের অপ্রাকৃতিক দ্রব্য দূর করতে পানি ফোটানো এবং ফিল্টার করার সুবিধাগুলো নিয়েও আরও নিরীক্ষার প্রয়োজন রয়েছে।
যেহেতু পানির গুণমান এবং পানিতে মাইক্রোপ্লাস্টিকের পরিমাণ অঞ্চলভেদে ভিন্ন হয়, তাই আপনি কোথায় থাকেন তার ওপর নির্ভর করে এ পদ্ধতিটি কম-বেশি কার্যকর হতে পারে।
'মাইক্রোপ্লাস্টিক নিয়ে আরও গবেষণাকে অনুপ্রাণিত করার লক্ষ্যেই এ গবেষণাটি করা হয়েছে, 'বিজ্ঞানীরা তাদের নতুন এই গবেষণাপত্রে এমনটাই লিখেছেন। তবে তারা এটাও উল্লেখ করেছেন যে, পানি ফোটানো তুলনামূলকভাবে সহজ এবং এর অন্যান্য স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। পানি ফোটানোর সময় নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় সম্ভাব্য ক্ষতিকারক জীবাণু, পরজীবী এবং ভাইরাস মারা যায়।
আপনি যদি নিজে এ পদ্ধতি চেষ্টা করতে চান, তবে গবেষকদের মতে কঠিন পদার্থগুলো স্থির হতে দেওয়ার জন্য আপনার পাঁচ থেকে ১০ মিনিট অপেক্ষা করা উচিত। পানি ঠাণ্ডা হলে আপনি সহজেই কঠিন পদার্থগুলোকে ফিল্টার করতে পারবেন।
রেডি মনে করেন না যে সবার তাদের পান করার পানি ফোটানো শুরু করা দরকার। বিশেষত 'নরম' পানি (সফট ওয়াটার), অর্থাৎ যেসব পানিতে খনিজ পদার্থের পরিমাণ কম থাকে, এমন পানির ক্ষেত্রে এ পদ্ধতি কম কার্যকর হতে পারে। কিন্তু নতুন গবেষণাপত্র সম্পর্কে তিনি আশাবাদী, কারণ এখানে উল্লেখ করা পদ্ধতিটি সহজেই প্রয়োগ করার মাধ্যমে আশানুরূপ ফলাফল পাওয়া সম্ভব।
'আমরা কি চাইলেই এখনই পৃথিবীতে থাকা সব প্লাস্টিকের কণা সরিয়ে ফেলতে পারব? না,' বলছিলেন রেড্ডি। তবে প্লাস্টিক আমাদের বর্তমান জীবনকে যেভাবে প্রভাবিত করছে, তা পরিবর্তন করা সম্ভব বলেই তিনি মনে করেন।