দেশভাগে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া দুই বন্ধুর পুনর্মিলনের টিকটক ভিডিও ভাইরাল
১৯৪৭ সালে দেশভাগের আগে বন্ধু ছিলেন এক পাকিস্তানি ও এক ভারতীয়। দেশভাগে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার বহু বছর পর যুক্তরাষ্ট্রে ফের দেখা হয়েছে ৯০ ও ৮৯ বছর বয়সি এ দুই শৈশবের বন্ধু। তাদের গল্প ও পুনর্মিলনের একটি টিকটক ভিডিও অনলাইনে ভাইরাল হয়ে গেছে।
৩২ বছর বয়সি মেগান কোথারি তার দাদা সুরেশ কোথারির সঙ্গে তার শৈশবের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু এজি শাকিরের পুনর্মিলনের মুহূর্ত ক্যামেরাবন্দি করে রাখেন।
সুরেশ ও শাকির একসঙ্গে গুজরাতের দেসায় বেড়ে উঠেছিলেন। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় শাকিরের পরিবার পাকিস্তানে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। তখনই দুই বন্ধু যোগাযোগবিচ্ছিন্ন হয়ে যান। ওই সময় দুজনের বয়স ছিল ১২-র মতো।
মেগান তার দাদার বিষয়ে বলেন, 'একজন বন্ধুর কথা তিনি খুব বলেন। তাদের মধ্যে কতটা ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব ছিল, একসঙ্গে কত দুষ্টুমি করেছেন…এসব স্মৃতি রোমন্থন করেন সবসময়।'
শাকিরের ৯০তম জন্মদিনের পার্টিতে দুই বন্ধুর পুনর্মিলন হন। দেখা হতে হতেই তারা পরস্পরকে জড়িয়ে ধরেচিলেন। সেদিন সন্ধ্যার বেশিরভাগ সময় দুই বন্ধু হাত ধরে বসে ছিলেন।
এই ঘটনা পুরোটা ভিডিও করে রেখেছিলেন মেগান। তারপর চলতি সপ্তাহে ওই ভিডিও টিকটকে শেয়ার করার সিদ্ধান্ত নেন। দুই দিনে তার পোস্ট কয়েক লাখ ভিউ ও অজস্র কমেন্ট পেয়েছে।
মেগান জানান, দক্ষিণ এশীয় ব্যবহারকারীদের মন বেশি ছুঁয়ে গেছে এ গল্প। কারণ তাদের প্রায় সবারই দেশভাগের নিজস্ব গল্প আছে।
তিনি বলেন, 'পাকিস্তানিরা কমেন্ট করছেন, ভারতীয়রা কমেন্ট করছেন, তারা সবাই এক জায়গায় জড়ো হচ্ছে, বিষয়টি দারুণ সুন্দর।'
গুজরাটের দেসা পাকিস্তান সীমান্তের চেয়ে মাত্র কয়েক ঘণ্টার দূরত্বে অবস্থিত।
১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর রক্তাক্ত দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে উপমহাদেশে। ৫ লাখ থেকে ২০ লাখের মতো মানুষ প্রাণ হারায় ওইসব দাঙ্গায়; বাস্তুচ্যুত হয় ১৫ লাখ মানুষ। শাকিরের পরিবার ১৯৪৭-এর অক্টোবরে একটি নৌকায় করে দেসা ছাড়ে বলে এনবিসি নিউজকে জানান শাকিরের মেয়ে সাইমা শাকির। মাঝরাতে পালাতে হয় তাদের; বন্ধু বা প্রিয়জন কাউকেই জানিয়ে দেশ ছাড়ার সুযোগ পাননি তারা।
ওই সময় বোম্বেতে পড়াশোনা করছিলেন সুরেশ কোথারি। তিনি বাড়িতে ফিরে শোনেন, তার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু দেশ ছেড়ে চলে গেছে।
মেগান জানান, তার দাদা দেশভাগ নিয়ে তেমন কথা বলেন না। 'আমার মনে হয় তাদের প্রজন্মের জন্য এটাই স্বাভাবিক, কারণ তারা খুব বেশি ট্রমার মধ্য দিয়ে গেছেন।'
দেশভাগের পর চিঠি চালাচালি করার চেষ্টা করেছিলেন সুরেশ ও শাকির। কিন্তু দুই দেশের মধ্যে ভূরাজনৈতিক উত্তেজনার জন্য সেটি সম্ভব হয়নি বলে জানান মেগান।
এরপর ১৯৪৮ থেকে ১৯৮২ সালের মধ্যে দুই বন্ধুর মধ্যে যোগাযোগ ছিল না। ১৯৮২-তে শাকির যুক্তরাষ্ট্রের কানেক্টিকাটে চলে আসেন। নিউইয়র্ক সিটিতে দেসার এক ব্যক্তির সঙ্গে দেখা হয়ে যায় তার; তার মাধ্যমেই অবশেষে বন্ধুর সঙ্গে ফের যোগাযোগ হয়।
সুরশও ১৯৮২-তে কাজের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে আসেন। শাকির তখন তাকে জেএফকে বিমানবন্দরে নিতে আসেন। এরপর চারদিন তারা একসঙ্গে থাকেন।
এরপর বেশ কিছুদিন দুই বন্ধুর সঙ্গে নিয়মিত দেখাসাক্ষাৎ হয়। কিন্তু এরপর শাকির ভার্জিনিয়া চলে গেলে আবার দুজনের মধ্যে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
এর প্রায় নয় বছর পর, শাকিরের ৯০তম জন্মদিনের উৎসবে গত বছর ফের দেখা হয় দুই বন্ধুর। চার ঘণ্টা গাড়ি চালিয়ে দাদাকে ভার্জিনিয়া নিয়ে যান মেগান। ফের দেখা হয় দুই বন্ধুর।