১৮০৭ সালের জাহাজ: ২০০ বছরের পুরোনো সোয়েটার, দেখে মনে হয় গতকালকেই কেনা!
লাল সোয়েটারটি দেখে মনে হয় যেন গতকালকেই দোকান থেকে কেনা। কিন্তু, চোখের দেখা ধোঁকা দেবে আপনাকে, কারণ এটি প্রায় ২০০ বছরের পুরোনো। হাতে বোনা এই সোয়েটার উপহার হিসেবে পাঠানো হচ্ছিল। কিন্তু, শেষপর্যন্ত আর গন্তব্যে পৌঁছতে পারেনি।
ঘটনাটা ১৮০৭ সনের। দ্বিতীয় কোপেনহেগেন যুদ্ধের সময়কার। তখন ডাচদের বিরুদ্ধে নৌযুদ্ধ করছে ইংল্যান্ড। এমন সময়েই উত্তর মেরু বলয়ের সুদূর ফ্যারো দ্বীপপুঞ্জ থেকে ডেনমার্ক হয়ে আসছিল অ্যান মেরি নামের একটি জাহাজ। কিন্তু, নরওয়ের উপকূলে ওই বছরের ২ সেপ্টেম্বরে জাহাজটি আটক করে ব্রিটিশ রণতরী এইচএমএস ডিফেন্স। জাহাজের সব মালামাল ও মেইলবক্স (পার্সেল এর বাক্স) জব্দ করা হয়। এই সোয়েটারও তার মধ্যে ছিল।
২০০ বছরের বেশি সময় জাহাজটির অন্যান্য পার্সেলের সাথে এ সোয়েটারও মোড়কবন্দি ছিল যুক্তরাজ্যের জাতীয় সংরক্ষণাগারে। গত বৃহস্পতিবার যেগুলো খুলেছেন ব্রিটিশ সংরক্ষণাগারবিদেরা। এসময় গরম পা মোজা (স্টকিংস), রুপার মুদ্রাসহ আরো নানান পুরোনো আমলের জিনিস পান তাঁরা।
তবে সবচেয়ে চমৎকার নমুনা আলোচিত এই সোয়েটার। সংরক্ষণবিদ ড. আমান্ডা বেভান বলেন, "প্রাইজ পেপারে মোড়া কোনো পার্সেল এতদিন টিকে থাকার এটি একটি বিরল উদাহরণ। তখনকার দিনে সাগরপথে চিঠি বা পার্সেল পাঠাতে এই ধরনের এই কাগজে মুড়িয়ে তা পাঠানো হতো।"
ফ্যারো দ্বীপপুঞ্জের বাসিন্দা নিলস সি উইন্থার নামের এক কাঠমিস্ত্রী এই পার্সেলের প্রেরক। প্রাপক ছিলেন জনৈক পি ল্যাডসেনের বাগদত্তা। পার্সেলের সাথে থাকা চিঠিতে উল্লেখ ছিল "আমার স্ত্রী তাঁর আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। তোমাদের পুডিংয়ের জন্য ধন্যবাদ। সে তোমার বাগদত্তাকে এই সোয়েটারটি পাঠাল, আশা করি ওর পছন্দই হবে।"
চিঠিটি ছিল ডেনিশ ভাষায় লেখা। সংরক্ষণবিদেরা জানান এই চিঠিসহ পার্সেলের অন্যান্য মালামালের ডিজিটাল রেকর্ড তৈরির কাজ করবেন তাঁরা।
সাম্প্রতিক সময়ে বেশকিছু জাহাজের ধবংসাবশেষ থেকে চাঞ্চল্যকর সব জিনিসপত্র উদ্ধার হয়েছে। এরমধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত ছিল কানাডার উপকূলে ডুবে যাওয়া ব্রিটিশ মেরু অভিযানের জাহাজ এইচএমএস ইরিবাস। জাহাজটি থেকে অক্ষত থার্মোমিটার, পিস্তল ও মুদ্রাসহ ঐতিহাসিক অনেক নিদর্শনই উদ্ধার করেছেন ডুবুরিরা।
এছাড়া, গত বছর ইংল্যান্ডের দক্ষিণ উপকূলে একটি ডাচ জাহাজের ধবংসাবশেষ আবিষ্কার হয়। অভিজাত শ্রেণির বাড়ি নির্মাণের জন্য মার্বেল পাথর দিয়ে তৈরি টাইলস বহন করছিল জাহাজটি।
অনুবাদ: নূর মাজিদ