হাই হিল পরা কীভাবে আপনার জন্য ভালো?
যে-সব পুরুষ ও নারীরা হাই হিল পরেন তারা বেশি ভালো ও দক্ষ কর্মী। সম্প্রতি এক গবেষণায় এমন চিত্রই উঠে এসেছে। এছাড়াও কেউ কখনও উঁচু হিল পরে ঘোরাঘুরি করলে ক্ষেত্রবিশেষে বাজেভাবে সমালোচনার শিকার হয় বলে দেখা গিয়েছে।
এ গবেষণায় দেখা যায়, তরুণ-তরুণীরা কয়েক মাস ধরে কাস্টমাইজড হাই হিল পরার পর তাদের হাটাচলায় উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন দেখা যায়। এক্ষেত্রে হিল পরা নিয়ে অসংখ্য ভুলভ্রান্তি থাকা সত্ত্বেও গবেষকরা দেখেন যে, এসব পরিবর্তনগুলোর মধ্যে কোনোটাই সমস্যাযুক্ত ছিল না।
বরং যে-সব পুরুষ ও নারীরা প্রায়শই হিল পড়েন তারা আরও ভালো ও দক্ষ কর্মী হয়ে উঠেছেন। কেবল হিল নয়, ফ্ল্যাট পরিহিতদের মধ্যেও একই পরিবর্তন দেখা যায়।
অস্টিনের টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের কাইনসিওলজির সহকারী অধ্যাপক ওয়েন এন এই গবেষণার নেতৃত্ব দিয়েছেন। তিনি বলেন, "গবেষণার ফলাফল অপ্রত্যাশিত এক সম্ভাবনাকে প্রকাশ করেছে। অর্থাৎ হাই হিল পড়ে চলাফেরা করতে সমস্যায় ভোগা ব্যক্তিদের জন্য বা স্বাস্থ্যকর নারী ও পুরুষদের জন্য এটি 'প্রশিক্ষণের সরঞ্জাম' হিসাবে কাজ করে।"
তাছাড়াও ক্রীড়াবিদ ও যারা আরো দ্রুত ও স্বাচ্ছন্দ্যে চলাফেরা করতে চান তারাও হাই হিলস পড়ে উপকৃত হবে বলে জানান ওয়েন। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে এর ক্ষতিকর দিকও রয়েছে।
বার্বির হিল
'বার্বি' সিনেমায় বার্বি তার জীবন নিয়ে বিভ্রান্তিতে ভুগতে শুরু করার আগে হাই-হিল খুলে ফেলে। এরপরে তাকে তার পায়ের আঙ্গুলের উপর ভর করে সুন্দরভাবে চলতে থাকতে দেখা যায়। এই দৃশ্যটি শুধু রসিকতাই নয় বরং আমাদের সংস্কৃতির দিকেও ইঙ্গিত দেয়।
গবেষণায় দেখা গেছে যে, দীর্ঘ সময় ধরে হাই হিল পরা মানুষদের হিলসহ বা ছাড়া উভয়ভাবেই চলা-ফেরাতে বেশ পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়।
অস্ট্রেলিয়ান বায়োমেকানিকস গবেষকরা বলেন, যে-সব নারীরা নিয়মিত হাই হিল পরেন, তারা ফ্ল্যাট জুতা পরিহিতদের চেয়ে ভিন্নভাবে হাঁটেন। এই পরিবর্তন খালি পায়ে থাকা অবস্থাতেও লক্ষ্য করা যায়।
যাইহোক, হিল পরার ফলে পায়ে কেমন প্রভাব পড়ে এবং এটি অস্বস্তিকর কি-না সে সম্পর্কে এখনও প্রশ্ন রয়ে যায়। এই গবেষণাগুলো বেশিরভাগই নারীদের উপর দৃষ্টিপাত করে করা হয়েছে। পুরুষরা এ গবেষণার অন্তর্ভুক্ত নয়।
পা হিলের উপর যেভাবে থাকে
জার্নাল অফ অ্যাপ্লাইড ফিজিওলজিতে এই মাসে প্রকাশিত নতুন গবেষণায় বেক ও তার সহকর্মীরা স্বাস্থ্যবান তরুণ ও নারীদের সন্ধান করেছেন যারা কখনও হাই হিল পরেননি। হাই হিল পরার ফলে মানুষের পায়ে কেমন প্রভাব ফেলে তা এই গবেষণা থেকে জানা যায়।
গবেষকরা আটজন স্বেচ্ছাসেবককে খুঁজে বের করেছেন যারা এর আগে খুব কমই বা কখনও হাই হিল পরেননি। বিজ্ঞানীরা এরপর ফ্ল্যাট চক টেলর অল-স্টার লো টপ স্নিকার্সের তলদেশে ফোম ওয়েজ সংযুক্ত করে স্বেচ্ছাসেবকদের জন্য হাই-হিল জুতা তৈরি করেন। প্রতিটি জোড়ায় কাস্টম লাগানো ছিল যাতে একজন অংশগ্রহণকারীর পা ১৪-ডিগ্রি কোণে নিচের দিকে বাঁকানো থাকে। অনুশীলনে এর অর্থ হল জুতাগুলোয় প্রায় আড়াই থেকো তিন ইঞ্চি ওয়েজ হিল।
তারপর তারা আল্ট্রাসাউন্ড ব্যবহার করে স্বেচ্ছাসেবকদের কাফ মাসল ও অ্যাকিলিস টেন্ডন পরিমাপ করে। ফ্ল্যাট স্নিকার্স ও হাই-হিল জুতা উভয় ক্ষেত্রেই ট্রেডমিলে হাঁটার সময় কত শক্তি ব্যবহার করেছে তাও তারা পরীক্ষা করে। অবশেষে তারা স্বেচ্ছাসেবকদের ১৪ সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন হাই হিল পরতে এবং তাদের কার্যকলাপ ট্র্যাক করতে বলে।
ছোট কাফ পেশি, শক্ত অ্যাকিলিস
এক্ষেত্রে সবাই এই পরিস্থিতি পছন্দ করেননি। বেকের মতে, কিছু স্বেচ্ছাসেবী এই স্নিকারগুলোর জন্য কিছুটা বিব্রত বোধ করেছিলেন। অন্যদের পায়ের আঙুলে অস্বস্তি হওয়ার অভিযোগ ছিল, যা সাধারণত যারা ফ্ল্যাট জুতা পরেন এবং মাঝে মাঝে হিল পরেন তাদের জন্য স্বাভাবিক।
যাইহোক, অর্ধেকেরও বেশি স্বেচ্ছাসেবক, নারী ও পুরুষ উভয়ই বেশিরভাগ সময় জুতা পরেন। ১৪ সপ্তাহ পর সবাই ল্যাবে ফিরে এসে আবার পরীক্ষা দেয়। যারা খুব বেশি হিল পরেন না তাদের পায়ে বা হাঁটার সময় কোনো পরিবর্তন দেখা যায়নি। কিন্তু যারা নিয়মিত হিল পরতেন তাদের কাফ পেশি ছোট ছিল এবং অ্যাকিলিস টেন্ডন আগের চেয়ে শক্ত ছিল।
গবেষকদের মতে, অবাক করা বিষয় হল যে, এই স্বেচ্ছাসেবীরা আগের ভালো ওয়াকার হয়ে উঠেছেন। তারা ট্রেডমিলে একই গতিতে হাঁটতে কম শক্তি ব্যবহার করে, শুধু হিল নয়, ফ্ল্যাট জুতাতেও।
বেক জানায়, তারা আশা করেছিল মানুষ সময়ের সাথে সাথে হিল পরে হাঁটার ক্ষেত্রে উন্নতি করবে।
বেক বলেন, "আপনি কাউকে একটি নতুন জুতা পরান, তারা স্বাভাবিকভাবেই সেটি পরে আরও ভালো হাঁটতে পারবে।" কিন্তু তিনি অগত্যা আশা করেনি যে, এটি অন্যান্য পরিস্থিতিতেও হাঁটা সহজ করে তুলবে। বেক বলেন, হিল পরিধানকারীরা সাধারণভাবে চলাফেরা করতে আরও দক্ষ হয়ে উঠেছে বলে মনে হচ্ছে।
দৌড়বিদদের জন্য হাই হিল?
বেক ও তার সহকর্মীরা মনে করেন যে, গবেষণার ফলাফলগুলো এমন লোকদের জন্য বেশি গুরুত্বপূর্ণ যাদের চলাফেরা করতে সমস্যা হয়, যেমন বয়স্ক মানুষ। তাদের প্রায়ই আলগা অ্যাকিলিস টেন্ডন থাকে। ফলে তাদের ঠিকভাবে হাঁটতে কষ্ট হয়।
হিল পরা তাদের অ্যাকিলিস টেন্ডনকে শক্তিশালী করতে এবং তাদের পায়ের নিচের আকৃতি পরিবর্তন করতে সহায়তা করবে। এর ফলে তারা হাঁটাচলা করতে সুবিধা বোধ করবেন এবং নড়াচড়া করতে উৎসাহী হবেন।
বাকি যারা হিল পরেন না, তারাও উপকৃত হব কি-না তা পরিষ্কার নয়। কিন্তু এমন সম্ভাবনা আছে যে, দৌড়বিদরা 'ক্রোকসের' মতো জুতার পরিবর্তে প্রশিক্ষণের পরে হিল পরতে পারে।
একটি শক্ত অ্যাকিলিস টেন্ডনের অধিকারী ব্যক্তি প্রতিটি পদক্ষেপে আরও দক্ষ এবং পারদর্শী হয়ে উঠতে পারবে। তাই বলা যায় যে, হিল পরা দৌড়বিদদেরও তাদের গতিকে উন্নত করতে সহায়তা করতে পারে।
যাইহোক, গবেষণাটি ছোট ও শুধু স্বাস্থ্যবান যুবকদের নিয়ে করা হয়। বয়স্ক, প্রাপ্তবয়স্ক বা ক্রীড়াবিদদের নিয়ে নয়। এ গবেষণায় আঘাতের বিষয়েও কোনো ট্রাক ছিলোনা।
হিল পরার ফলে ট্রিপ এবং গোড়ালি মচকে যেতে পারে। যা পেশি ও টেন্ডন পরিবর্তনের কারণ হতে পারে এবং এর কারণে আঘাতের ঝুঁকি বাড়ে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, "এতে ব্যথা বা অন্যান্য সমস্যা সৃষ্টির ঝুঁকি খুব বেশি নয়। তবে এ বিষয়ে ভালোভাবে বোঝার জন্য আরও গবেষণা প্রয়োজন। কিন্তু আপাতত যদি আপনি আপনার প্রতিদিনের হাঁটাচলাকে সহজ করতে চান, তবে আপনি মাঝে মাঝে হিল পরার চেষ্টা করতে পারেন।"
অনুবাদ: সৈয়দা শেহরিন