সৌদি আরবের প্রথম হিউম্যানোয়েড রোবট ‘সারা’, কথা বলবে না রাজনীতি ও যৌনতা নিয়ে
সৌদি আরবের প্রথম হিউম্যানোয়েড রোবট যৌনতা বা রাজনীতি নিয়ে কোনো কথা বলবে না। এমনটাই জানিয়েছেন এর নির্মাতারা। রোবটটির নাম 'সারা'।
রিয়াদভিত্তিক কিউএসএস এআই অ্যান্ড রোবটস-এর প্রধান নির্বাহী এলি মেট্রি বিজনেস ইনসাইডারকে বলেন, 'সারা জানে যে সে একজন মেয়ে, তার বয়স ২৫ বছর, তার উচ্চতা ১.৬২ সেন্টিমিটার, সে সৌদি পোশাক পরে। তার আচরণ ও ব্যবহার সুন্দর হওয়া উচিত। সৌদি আরবে তৈরি রোবট হওয়ায় তার রাজনীতি ও যৌনতা নিয়ে কথা বলা উচিত না।'
ঐতিহ্যবাহী সৌদি আবায়া পরিহিত সারা, সৌদি আরব এবং সম্ভবত মধ্যপ্রাচ্যে ডিজাইন করা প্রথম হিউম্যানয়েড রোবট। সে আরবি এবং ইংরেজি উভয় ভাষাতেই কথা বলতে পারে।
মেট্রি জানান, সারা তার নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব ভাষা শেখার মডেল ব্যবহার করে। এটি একটি এআই প্রোগ্রাম যা টেক্সট এবং স্পিচ শনাক্ত এবং তৈরি করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে।
লার্জ ল্যাঙ্গুয়েজ মডেলগুলোকে (এলএলএম) বিস্তৃত ডেটাসেটগুলোতে মেশিন লার্নিং কৌশল ব্যবহার করে প্রশিক্ষণ দিয়ে তৈরি করা হয়। এই প্রশিক্ষণ প্রক্রিয়া চলাকালীন, মডেলগুলো ডেটার মধ্যে নিদর্শন, কাঠামো এবং সম্পর্কগুলো শেখে, তাদের মানুষের মতো পাঠ্য তৈরি করতে এবং বিভিন্ন ভাষার কার্য সম্পাদন করতে সক্ষম করে।
মেট্রি বিজনেস ইনসাইডারকে বলেন, 'আমরা অন্য কারও লাইব্রেরির ওপর নির্ভর করি না, এমনকি চ্যাটজিপিটিও নয়'।
সৌদি আরবের আইনি ব্যবস্থা শরিয়া আইনের ওপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত, যদিও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সৌদিকে নানাভাবে আধুনিকীকরণের চেষ্টা করা হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে মহিলাদের কাপড়চোপড় ও গাড়ি চালানোর ক্ষেত্রে নিয়ম শিথিল করা। তবুও, রাজনৈতিক সক্রিয়তা কিংবা যৌনতা নিয়ে আলাপের জন্য সৌদি মহিলাদের এখনও শাস্তির বিধান আছে।
মেট্রি জানান, বিভিন্ন প্রযুক্তি এক্সপোতে (টেক-এক্সপো) সারার উপস্থিতি মানুষের মধ্যে ব্যাপক মনোযোগ আকর্ষণ করেছে, সুপরিচিত হয়ে উঠেছে সে। তিনি আরও বলেন, রোবটিক্স এবং এআইতে সৌদি আরব কার্যকরভাবে অগ্রগতি করছে।
তবে চলতি মাসের শুরুর দিকে প্রতিষ্ঠানটির আরেক হিউম্যানোয়েড রোবট 'মুহাম্মদ'-এর একটি ঘটনা ভাইরাল হয়।
একটি ভিডিওতে দেখা যায়, রোবটটি হাত বাড়িয়ে আল আরাবিয়ার এক সাংবাদিকের পিঠ স্পর্শ করছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে ব্যবহারকারীরা রোবটটির বিরুদ্ধে প্রতিবেদককে অশালীনভাবে স্পর্শ করার অভিযোগ আনেন।
মেট্রি জানান, এই ঘটনার পর থেকে সারা বিশ্বের মিডিয়ার আলোচনার বস্তু হয়ে উঠেছে রোবট 'মুহাম্মদ'। তবে তিনি এ নিয়ে চিন্তিত নন। তার মতে রোবটটি ওই প্রতিবেদককে অশালীনভাবে স্পর্শ করেনি।
তিনি বলেন, 'মানুষ যখন কথা বলে, তখন সে হাত নাড়ায়, সে কোনো ম্যানিকুইন নয়।'
মেট্রির দৃষ্টিতে রোবটটি কথা বলার সময় তার হাত ও আঙ্গুলগুলো সামান্য নাড়াচাড়া করে এবং প্রতিবেদক মুহাম্মদের খুব কাছে দাঁড়িয়ে থাকায় এটি তার জ্যাকেট স্পর্শ করে।
'একটি রোবটের হাত একজন নারীর জ্যাকেট স্পর্শ করা এবং যৌন নিপীড়ন দুটো সম্পূর্ণ আলাদা জিনিস' , বলেন মেট্রি।
তিনি আরও জানান, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের নানা আলোচনা সমালোচনা সত্ত্বেও এ ঘটনা নিয়ে তিনি উদ্বিগ্ন নন এবং রিয়াদে অনুষ্ঠিত ডিপফেস্ট সম্মেলনেও ছিলেন না তিনি যেখানে এই ঘটনা ঘটেছিল।
মেট্রি বলেন, 'অদ্ভুত ব্যাপার হলো, পুরো মধ্যপ্রাচ্যে, এমনকি সৌদি আরবেও কেউ এটাকে খারাপ হিসেবে দেখেনি; কারণ তারা জানে ওটা শুধু একটা রোবট।'
অনুবাদ: সাকাব নাহিয়ান শ্রাবন