এআই লেখার দুর্বলতা কাটাতে সাহায্য করে: চ্যাটজিপিটির সাহায্যে জাপানের শীর্ষ সাহিত্য পুরস্কারজয়ী লেখক
এ বছর জাপানি সাহিত্যের সর্বোচ্চ পুরস্কার আকুতাগাওয়া পুরস্কার জেতা জাপানি লেখক রি কুদান, লেখকদের তাদের লেখায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই ব্যবহার করতে উৎসাহিত করেছেন।
'দ্য টোকিও টাওয়ার অফ সিম্পেথি' (জাপানি ভাষায় 'টোকিও টু দোজো তো') উপন্যাসের জন্য পুরস্কার জেতার পর লেখক একটি প্রেস কনফারেন্সে লেখক নিশ্চিত করেছিলেন যে, তার এই বইটির প্রায় ৫ ভাগ এআইয়ের সহায়তায় লেখা হয়েছে।
৩৩ বছর বয়সী এই লেখিকা তার প্রকাশনা সংস্থা শিনচোশায় বলেন, 'আপনি যদি ঠিকঠাক ব্যবহার করতে পারেন, তবে এআই আপনার দুর্বলতাগুলো কাটিয়ে ওঠতে সহায়তা করতে পারে।'
তার প্রকাশনা সংস্থা তার বইকে জেনারেটিভ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার যুগে ভবিষ্যদ্বাণী ধারণকারী হিসেবে প্রচার করে। যদিও, তিনি স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে তার বইয়ে এআইয়ের অবদান ছোট ছিল, ১৪৪ পৃষ্ঠার মধ্যে কেবল একটি পৃষ্ঠা এআইয়ের সহায়তায় লিখেছেন।
জাপানের মর্যাদাপূর্ণ একটি সাহিত্য পুরস্কার হলো আকুতাগাওয়া সাহিত্য পুরস্কার। জাপানি ঔপন্যাসিক রিয়ুনোসুকে আকুতাগাওয়ার স্মরণে ১৯৩৫ সাল থেকে এ পুরস্কার প্রদান করা হয়ে আসছে।
'দ্য টোকিও টাওয়ার অফ সিম্পেথি' উপন্যাসটির ব্যাপক প্রশংসা করেছেন বিচারকরা। বিচারক কমিটির সদস্যরা জানিয়েছেন, এই বইতে কোনো ত্রুটি খুঁজে পাওয়া কঠিন ছিল।
এই পুরস্কার ১৯৯৪ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী কেনজাবুরো ওয়ের মতো লেখকদের ক্যারিয়ার শুরু করতে সহায়তা করেছে। গত জানুয়ারিতে পুরস্কার বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হয়।
উপন্যাসে, প্রধান চরিত্র, টোকিওতে একটি অভিনব কারাগার ডিজাইনের দায়িত্বপ্রাপ্ত স্থপতি এআই-বিল্ট নামের একটি এআইকে জিজ্ঞেস করেন, এআই কেন ল্যাটিন ভাষায় অপরাধীদের হোমো মিসেরাবিলিস হিসেবে উল্লেখ করে।
প্রধান চরিত্র, এআইয়ের উত্তরে অসন্তুষ্ট হয়ে তাকে আবার জিজ্ঞেস করেন, তুমি কি জানো না যে তুমি ভালো করে লেখা বুঝতে সক্ষম না? এআই এতে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেয়।
লেখক কুদান ব্যাখ্যা করেছেন যে তিনি এআই ব্যবহারের মাধ্যমে ভাষার সারমর্ম বা প্রকৃতি অন্বেষণ করতে চেয়েছিলেন।
লেখক জানান বইয়ের ৫% এআই দিয়ে তৈরি করা হয়েছে, এটি জানার পর সম্পাদকরা কিছুটা ঘাবড়ে গিয়েছিলেন। বিশ্ব গণমাধ্যমে এটি যে মনোযোগ পেয়েছে তাতেও তিনি অবাক হয়েছেন।
আরেকজন পাঠকের মনে হয়েছে, বইয়ের প্রকৃত গল্পের চেয়ে লেখার ধরন বেশি প্রাধান্য পেয়েছে। তার মতে বইটি জাপানি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশিকা পরীক্ষার জন্য অধ্যয়নের জন্য উপযুক্ত, যেখানে ভাষাগত দক্ষতার ওপর প্রায়শই জোর দেওয়া হয়।
কুদান, যিনি নিজেকে পেদ্রো আলমোদোভারের চলচ্চিত্রের একজন ভক্ত এবং জাপানি লেখক ইউকিও মিশিমার অনুসারী বলে ঘোষণা করেন, পরামর্শ দেন যে দ্য টেম্পল অফ দ্য গোল্ডেন প্যাভিলিয়ন (১৯৫৬) এর মতো তার কাজও স্থাপত্য সম্পর্কে একটি বই হিসাবে পড়া যেতে পারে।
লেখক জানান, তিনি তার সৃষ্টিতে জেনারেটিভ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার চালিয়ে যাবেন কারণ এটি এমন একটি প্রযুক্তি যা লেখকদের সম্ভাবনাকে আরও প্রসারিত করতে পারে।
তিনি আরও যোগ করেন যে এআই ব্যবহার সম্পর্কিত জাপানি বিধিবিধান এখনও খুব অস্পষ্ট।
পাবলিক ব্রডকাস্টার এনএইচকের সাম্প্রতিক জরিপ অনুসারে, জাপানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কর্পোরেট পর্যায়ে বিস্তৃত আকারে ব্যবহৃত হয়। ১০০ টি বড় জাপানি সংস্থার মধ্যে, ৮৬ টি নিশ্চিত করেছে যে তারা এটি ডকুমেন্ট তৈরি বা সংক্ষিপ্ত করতে বা উন্নত অ্যাপ্লিকেশনগুলোতে তাদের নিজস্ব সিস্টেমের সাথে এআই ব্যবহার করে।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ন্ত্রণের জন্য বিশ্বের প্রথম আইন প্রণয়নের জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন তার সদস্যদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সমর্থন অর্জন করার পরে, ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি অফ জাপান (এলডিপি) ঘোষণা করেছে, তারাও এই বছর একই লক্ষ্য নিয়ে একটি নতুন আইন প্রস্তাব করবে।
অনেক জাপানি সংস্থা ২০১৭ সালে প্রতিষ্ঠিত অ্যাকাডেমিক গ্রুপ জাপান ডিপ লার্নিং অ্যাসোসিয়েশন (জেডিএলএ) দ্বারা নির্ধারিত বিধিবিধান অনুসরণ করে। জেডিএলএর লক্ষ্য শিল্পে নতুন জেনারেটিভ প্রযুক্তি গ্রহণকে উৎসাহিত করা এবং জনসংখ্যার অবক্ষয় মোকাবেলা করা।
জাপান ডিপ লার্নিং অ্যাসোসিয়েশনের (জেডিএলএ) নিয়মাবলি প্রখ্যাত লেখক শিনিচি হোশির (১৯২৬-১৯৯৭) নামে একটি বিখ্যাত বিজ্ঞান কল্পকাহিনি সাহিত্য প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হয়েছিল।
প্রতিযোগিতার ওয়েবসাইট অনুসারে, তারা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দ্বারা নির্মিত কাজগুলো গ্রহণ করে যতক্ষণ না কাজগুলো পরে কোনও মানুষের দ্বারা সম্পাদনা করা হয়।
অতিরিক্তভাবে, প্রতিযোগীদের অবশ্যই লেখকের আগ্রহ এবং মূল অভিপ্রায় স্পষ্ট করার জন্য এআইতে ব্যবহৃত প্রম্পট সম্পর্কে জুরিকে আগে থেকে অবহিত করতে হবে।
অনুবাদ: সাকাব নাহিয়ান শ্রাবন