চিত্রশিল্পী ফ্রিদা কাহলোর শাড়ি পরে ছবি তোলার নেপথ্য কাহিনী
'বর্ডার অ্যান্ড ফল'-এর ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে দুই নারীর পাশে শাড়ি পরা ফ্রিদা কাহলোর একটি ছবি পোস্ট করা হয়েছে। এই পোস্টের কমেন্ট বক্স ছিল একেবারে খালি। সাধারণদের প্রতিক্রিয়া ছিল: ওয়াও (বাহ)!
এই ছবির এক নারীকে আমার পরিচিত মনে হলো। তিনি ফ্রিদা কাহলোর বাম পাশের জন। দেখে মনে হলো ইনি তরুণী নয়নতারা সায়গল। বর্তমানে এই লেখিকা দেরাদুনে থাকেন। কাহলোর ডান দিকে থাকা নারীটি দেখতে অনেকটা নয়নতারার বোন রীতা দারের মতো।
নয়নতারা সায়গল ও রীতা দার বিজয়লক্ষ্মী পণ্ডিতের ছোট দুই মেয়ে। বিজয়লক্ষ্মী পণ্ডিত সোভিয়েত ইউনিয়ন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও মেক্সিকো এবং তারপরে জাতিসংঘে ভারতের প্রথম রাষ্ট্রদূত ছিলেন (তিনি জওহরলাল নেহেরুর বোন ছিলেন)।
মনু ভগবানের ইন্ডিয়া দ্য কোয়েস্ট ফর ওয়ান ওয়ার্ল্ড (পালগ্রাভ, ২০১৩) গ্রন্থে বিজয়লক্ষ্মী পণ্ডিতের একটি চমৎকার পরিচয় রয়েছে।
আমি নয়নতারা সায়গলকে চিঠি লিখে জানতে চেয়েছিলাম এটা কি সত্যিই ফ্রিদা কাহলো আর তার বোনের সঙ্গে তার তোলা ছবি।
তিনি জানান, হ্যাঁ, আমার অনুমান সঠিক।
তিনি লিখেছেন, 'আমি ছবির ডানদিকে, আমার বোন রিতা বাম দিকে।'
১৯৪০-এর দশকের গোড়ার দিকে, সায়গলের পুরো পরিবার ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনে আন্দোলিত হয়েছিল।
তার বাবা-মা কারাগারে ছিলেন। এমনকি তার বড় বোন চন্দ্রলেখাও ১৯৪২ সালে ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময় কারাগারে ছিলেন।
ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী সরকার নেহরু-পণ্ডিত পরিবারকে বলেছিল, রাজনীতিতে অংশ না নেওয়ার প্রতিশ্রুতি না দিলে তাদের বাড়ির কোনো সন্তানকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার অনুমতি দেওয়া হবে না।
সেসময়, চীনা নেতা চিয়াং কাই-শেক এবং তার স্ত্রী সুং মেই-লিং ভারতে এসেছিলেন।
তাদের যুক্তি ছিল, এটি যুদ্ধের প্রচেষ্টাকে সহায়তা করবে।
সুং মেই-লিং, ম্যাডাম চিয়াং নামে পরিচিত ছিলেন। তিনি ওয়েলেসলি কলেজে পড়াশোনা করেছিলেন।
ম্যাডাম চিয়াং ওয়েলেসলির কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন, তাই তারা এই দুই বোনকে ভর্তির সুযোগ দেন।
সায়গল লিখেছেন, '১৯৪৭ সালের গ্রীষ্মে আমি সবেমাত্র ওয়েলেসলি কলেজ থেকে স্নাতক হয়েছিলাম।'
তিনি বলেন, 'এরপর মেক্সিকো বেড়াতে গিয়েছিলেন। আমরা ফ্রিদার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম, তাকে মেক্সিকোতে আমাদের হোস্ট চিনতেন।'
শিল্পী ফ্রিদা কাহলো ১৯৪৭ সালে তার শৈশবের বাড়ি লা কাসা আসুলে বাস করতেন। তিনি মেরুদণ্ডের সমস্যায় মারাত্মকভাবে ভুগছিলেন। সেসময় তিনি তার পিঠকে সোজা রাখতে করসেট পরতেন।
সেহগাল এবং তার বোন কাহলোর বাড়িতে গিয়েছিলেন।
তিনি স্মৃতিচারণ করেন, 'আমরা তাকে আমাদের একটি শাড়ি পরিয়ে দিয়েছিলাম এবং তিনি এটি পছন্দ করেছিলেন।' ফ্রিদা আমাকে তার নিজের আঁকা দুটো সুন্দর ছবি উপহার দিয়েছিলেন।
এর ছয় বছর পর ৪৭ বছর বয়সে ফ্রিদা কাহলো মারা যান।
ভাবানুবাদ: তাবাসসুম সুইটি