যুক্তরাষ্ট্রের ‘নস্ট্রাডেমাস’ প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ২০২৪ নিয়ে যে ‘হিসাবনিকাশ’ করেছেন
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল সম্পর্কে সঠিক পূর্বাভাস দিতে অ্যালান লিখটম্যান এতই পারদর্শী যে, তাঁকে বলা হয় এই নির্বাচনের 'নস্ট্রাডেমাস'। দেশটির গত ১০টি নির্বাচনের মধ্যে ৯টিতেই প্রেসিডেন্ট কে হবেন– ঠিকই সেটির ভবিষ্যদ্বাণী করেন তিনি। অবশ্য জ্যোতিষ শাস্ত্র নয়, বরং নানান তথ্যের ভিত্তিতে এর একটি পদ্ধতি দাঁড় করিয়েছেন অ্যালান।
বাইডেন বনাম ট্রাম্প – প্রেসিডেন্ট কে হবেন
দেশের অর্থনীতির জন্য বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের চেয়ে ট্রাম্পই ভালো করবেন বলে মনে করছেন যুক্তরাষ্ট্রের ভোটারদের বড় অংশ। এমন চিত্রই উঠে এসেছে রয়টার্স/ ইপসস এর সাম্প্রতিক জরিপে। তিন দিনের এই সমীক্ষায়, ৪১ শতাংশ ভোটার অর্থনীতির বিষয়ে ট্রাম্পের দৃষ্টিভঙ্গিকে সমর্থন করেন। আর প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে সমর্থন দেন ৩৪ শতাংশ। বাকিরা এবিষয়ে নিশ্চিত নন; অথবা মনে করছেন কোনো প্রার্থীই এক্ষেত্রে অন্যজনের চেয়ে সেরা নন।
সামনের নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। তাই এত আগেভাগের জরিপ ফলাফলে সম্পূর্ণ আস্থা রাখা উচিত না বলেই মন্তব্য করেছেন অ্যালান লিখটম্যান।
তাঁর মতে, "পূর্বাভাস দেওয়ার ক্ষেত্রে এত আগের জরিপগুলোর অবদান হচ্ছে শূন্য। আসলে এগুলো একটা নির্দিষ্ট সময়ের ছবি তুলে ধরে। অর্থাৎ, যদি এখনই নির্বাচন হতো – তাহলে প্রার্থীদের কার অবস্থান কেমন হতো সেই বার্তাই দেয়। কিন্তু, নির্বাচন তো এখনই হচ্ছে না, তাই পূর্বাভাস দেওয়ার জন্যও জরিপের ফলাফলের কোনো মূল্য নেই। নির্বাচনের বেশ আগে করা এসব জরিপ ধরে বসে থাকলে বড় ভুল হবে।"
"যেমন ২০১৬ সালের নির্বাচনপূর্ব জরিপে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতিপক্ষ এগিয়েছিলেন, কিন্তু আমি ট্রাম্পই জিতবেন বলে ঠিকঠাক আভাস দিয়েছিলাম। বা ১৯৮৮ সালের নির্বাচনের আগে মে ও জুন মাসেও জরিপের ফলে প্রতিদ্বন্দ্বী মাইক ডুকাইসের চেয়ে ১৭ পয়েন্ট পিছিয়ে ছিলেন জর্জ এইচ ডব্লিউ বুশ। পরে তিনিই জেতেন। তাই আমি সবাইকে বলি, জরিপের সঠিক ফল বুঝতে– মূল্য নির্ণায়কগুলো বুঝতে হবে" - তিনি যোগ করেন।
অ্যালান লিখটম্যানের পূর্বাভাস দেওয়ার ক্ষমতা অবশ্য প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছিল ২০০০ সালের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে। ওই নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ছিলেন আল গোর এবং জর্জ ডব্লিউ বুশ। আল গোর জিতবেন বলেই ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন লিখটম্যান। কিন্তু, ইলেক্টোরাল কলেজে বুশ জিতে যান।
এই একটি ঘটনা বাদ দিলে অন্য সবক্ষেত্রেই তিনি সফল বার্তা দিয়েছেন।
ওভাল অফিসে কে আসীন হচ্ছেন তার সঠিকভাবে অনুমান করতে লিখটম্যান ১৩টি নির্ণায়ক ব্যবহার করেন। এগুলোকে তিনি বলেন, 'হোয়াইট হাউসের ১৩টি চাবিকাঠি'।
প্রার্থীদের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার পারদর্শিতা, সামাজিক স্থিতিশীলতা এবং ব্যক্তিগত কারিশমাসহ নানান বিষয় নিয়ে এসব সূচক বা চাবিকাঠি নির্ধারণ করা হয়েছে।
অ্যালান লিখটম্যান বলেন, "এখনও আমি চূড়ান্ত কোনো পূর্বাভাস দেইনি, তবে ১৩টি চাবিকাঠির এই মডেল রয়েছে আমার– যার সাহায্যে ১৯৮৪ সালের পর থেকে টানা ১০টি নির্বাচনে সঠিক পূর্বাভাস দিতে পেরেছি। এটা অনেকটা এভাবে কাজ করে, যদি ১৩টির মধ্যে ৬টি বা তারও বেশি চাবি বর্তমান প্রেসিডেন্টের বিপক্ষে চলে যায় – তখন তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী জয়ী হন। বর্তমানে যে পরিস্থিতি, তাতে আরো অনেককিছু তাঁর প্রতিকূলে যদি চলে যায় তাহলেই হারতে পারেন জো বাইডেন। কিন্তু, বর্তমানে মাত্র দুটি চাবি বা সূচক তাঁর বিরুদ্ধে রয়েছে।"
গত নির্বাচনের মতো ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেও ট্রাম্পের মুখোমুখি হতে চলেছেন বাইডেন। ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট হিসেবে বাইডেন কিছু সুবিধা পেয়েছেন, যার ফলে দলীয় প্রাইমারিতে তেমন কোনো শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল না তাঁর বিপক্ষে। এই প্রেক্ষাপটে, ট্রাম্পের বিরুদ্ধে বাইডেন একজন অতি-শক্তিশালী প্রার্থী বলেই মনে করছেন লিখটম্যান।
অনুবাদ: নূর মাজিদ