টানা তৃতীয় মেয়াদে লন্ডনের মেয়র সাদিক খান, স্থানীয় নির্বাচনে লেবার পার্টি শক্ত অবস্থানে
টানা তৃতীয়বারের মতো যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনের মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন লেবার পার্টির প্রার্থী সাদিক খান। ২০১৬ সালে প্রথমবারের মতো লন্ডনের মেয়র হিসেবে যাত্রা শুরু হয় পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত এই রাজনীতিবিদের।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার (২ মে) রাত ১০টায় লন্ডনের মেয়র পদে নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শেষ হয়। ভোট গণনা শুরু হয় শুক্রবার থেকে। আর স্থানীয় সময় শনিবার (৩ মে) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ফল প্রকাশ করা হয়।
৪৩ দশমিক ৭ শতাংশ ভোট পেয়ে কনজারভেটিভ পার্টির সুসান হলকে পরাজিত করেছেন মেয়র সাদিক। সুসান হল পেয়েছেন ৩২ দশমিক ৬ শতাংশ ভোট। প্রকাশিত ফলাফলে দেখা যায়, সাদিক খানের প্রাপ্ত ভোট ১০ লাখ ৮৮ হাজার ২২৫ এবং প্রতিদ্বন্দ্বী সুসান হলের ভোটসংখ্যা ৮ লাখ ১১ হাজার ৫১৮।
ইংল্যান্ডের বিভিন্ন অঞ্চলে লেবার পার্টির সাফল্য বলছে, আসন্ন সাধারণ নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক ও কনজারভেটিভদের চ্যালেঞ্জ জানাতে তারা শক্ত অবস্থানে রয়েছে।
কনজারভেটিভরা স্থানীয় নির্বাচনে বেশ ভালোই পিছিয়ে পড়েছে। বৃহস্পতিবার ১০ টি কাউন্সিল এবং প্রায় ৫০০ কাউন্সিলরের নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে তারা। এই পরাজয়ে দলের অভ্যন্তরে সদস্যসহ অনেকেই অবাক হয়েছেন খানিকটা।
লেবার নেতা কেইর স্টারমার শনিবার সাংবাদিকদের বলেন, 'আমি দুঃখিত, আপনি কোন রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করেন তা নিয়ে আমার কিছু যায় আসে না, আপনি যদি ১৪ বছর পর আপনার দেশকে আরও খারাপ অবস্থায় ফেলে দেন, তাহলে আপনি আর এক মুহূর্তের জন্য সরকারে থাকার যোগ্য নন।'
স্থানীয় নির্বাচনে লেবার পার্টি ভালো ফল করলেও দলের ভেতরের কেউ কেউ যে অপ্রতিরোধ্য বিজয় আশা করেছিল তা অর্জন করতে পারেনি।
আন্তর্জাতিক ইস্যু, বিশেষত ইসরায়েলের সাথে গাজার সংঘাত নিয়ে অবস্থান উল্লেখযোগ্য মুসলিম জনসংখ্যার অঞ্চলগুলোতে ভোটারদের মধ্যে তাদের সমর্থনকে প্রভাবিত করতে পারে।
লেবার পার্টির শ্যাডো হোম সেক্রেটারি ইভেট কুপার বিবিসিকে বলেন, 'ভবিষ্যতে জনগণের সমর্থন ও ভোট ফিরে পেতে দেশের প্রতিটি ক্ষেত্রে আমরা যেমন কাজ করে থাকি তেমনি কাজ চালিয়ে যাব।'
এই নির্বাচনে লেবার পার্টির সাফল্য সুনাকের নেতৃত্বের ওপর কিছুটা চাপ সৃষ্টি করেছে, যদিও তিনি পরাজয় সত্ত্বেও তার দলের মধ্যে কিছুটা সমর্থন ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছেন। এই স্থানীয় নির্বাচনকে আসন্ন সাধারণ নির্বাচনের পূর্বলক্ষণ হিসেবে দেখা হচ্ছে, যা আগামী জানুয়ারির মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে।
৯০ লাখ মানুষের শহর লন্ডন বহুসংস্কৃতিবাদ, মুক্তমনা এবং ইউরোপপন্থী মনোভাবের জন্য পরিচিত। এজন্য অনেক সময় নিজের দলের সদস্যের সাথেও মতবিরোধ হয় সাদিক খানের, যেমন—ব্রেক্সিট ইস্যুতে।
মেয়র হিসেবে লন্ডনের পরিবেশগত উন্নয়ন ও দূষণ হ্রাসে কাজ করেছেন সাদিক খান। অভিবাসন ও জলবায়ু পরিবর্তনের মতো বিষয়গুলোতে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে প্রকাশ্যে মতবিরোধের কারণে এসেছিলেন আলোচনায়।
তবে লন্ডনে ছুরিকাঘাতের মতো অপরাধ কমাতে না পারায় ও বিশ্বের প্রথম আল্ট্রা লো ইমিশন জোনকে (স্বল্প নির্গমন এলাকা) আরও সম্প্রসারণ করায় কনজারভেটিভদের কাছ থেকে বেশ সমালোচনার মুখোমুখি হয়েছিলেন।
আল্ট্রা লো ইমিশন জোনে কোনো গাড়ি প্রবেশ করতে হলে বিশেষ পরিবেশগত মানদণ্ড পূরণ করতে হয়। সমালোচকরা যুক্তি দেখান যে, এই নীতিগুলো লন্ডনের বাইরের অঞ্চলের দরিদ্র পরিবারগুলোকে অসামঞ্জস্যপূর্ণভাবে প্রভাবিত করতে পারে, যারা হয়ত পুরোনো মডেলের গাড়ি ব্যবহার করেন।
অনুবাদ: সাকাব নাহিয়ান শ্রাবন