নির্বাচনী প্রচারণার সময় প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়েছিল বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত রুশনারাকে
বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত যুক্তরাজ্যের নাগরিক ও লেবার পার্টির এমপি রুশনারা আলী বিবিসিকে বলেছেন, ক্রমাগত হত্যার হুমকি এবং ভোটারদের ভয়ভীতি দেখানোর কারণে এবারের নির্বাচনী প্রচারণার সময় তিনি পুলিশি নিরাপত্তা নিতে বাধ্য হয়েছিলেন। খবর বিবিসির
বিবিসিকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে আলী বলেন, জনগণ যাতে লেবার পার্টিকে সমর্থন না করে, তাই তাদের ভয় দেখাতে তার নির্বাচনী প্রচারণাকে 'অস্থিতিশীল' করে তোলা হয়েছিল।
তার আগেও আরও বেশ কয়েকজন প্রার্থী নির্বাচনী প্রচারণায় হয়রানির অভিযোগ করেছেন।
লেবার এমপি জেস ফিলিপস এবং শাবানা মাহমুদও ভয়ভীতি দেখানো ও হুমকি দেওয়ার কথা বলেছেন। তারা এটিকে 'গণতন্ত্রের উপর হামলা' বলে অভিহিত করেছেন।
এছাড়া ট্রুরো ও ফালমাউথ আসনের রিফর্ম ইউকের প্রার্থী স্টিভ রুবিজ নির্বাচনী প্রচারণার সময় মারাত্মকভাবে আহত হন।
রুশনারা আলী পুরো নির্বাচনী প্রচারণার সময়জুড়ে 'নজিরবিহীন' হয়রানি, হুমকি এবং তার বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর অভিযোগ করেছেন।
তার অফিসে পাঠানো একটি চিঠি বিবিসি দেখেছে। ওই চিঠিতে কয়েক দিনের মধ্যে তাকে 'পেটানো ও হত্যা' করা হবে বলে জানানো হয়েছে।
তিনি বলেন, তার অফিসের বাইরে ঘন ঘন বিক্ষোভ করা হচ্ছিল এবং ব্যক্তিগতভাবেও তাকে হুমকি দেওয়া হয়েছিল।
রুশনারা বলেন, আমাকে প্রটেকশন অফিসার রাখতে হয়েছিল। কারণ আশঙ্কা ছিল লেবার পার্টির প্রচারণা সমাবেশে 'কিছু মানুষ সহিংসতা ঘটাবে'।
তিনি বিবিসিকে বলেন, নির্বাচনের দিন একটি ভোটকেন্দ্রের বাইরে একটি গাড়ি দাঁড় করিয়ে 'মাইক্রোফোন হাতে কেউ তাকে গালিগালাজ করছিল', যা দেখে ভোটাররা 'ভয় পেয়ে যায়'।
রুশনারা বলেন, 'আমি এই প্রচারণার সময় ভোটারদের সাথে কথা বলে যতটা সময় ব্যয় করেছি, ঠিক ততটাই সময় ব্যয় করেছি পুলিশের সাথে কথা বলে এবং হুমকি ও হয়রানির উত্তর দিয়ে।'
তিনি বলেন, ১৪ বছর বেথনাল গ্রিনের হয়ে কাজ করার সময় আমরা অনেক কিছু দেখেছি, কিন্তু এই মাত্রার বৈরিতা দেখিনি।
লেবার পার্টির এই এমপি বলেন, গাজায় যা ঘটছে তা নিয়ে 'বৈধ ক্ষোভ' থাকা বিভিন্ন গোষ্ঠী 'অস্ত্র' ব্যবহার করছে।
গাজায় যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে হওয়া গুরুত্বপূর্ণ ভোটাভুটিতে রুশনারার ভোট দেওয়ায় বিরত থাকার সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী আজমল মাশরুর।
রুশনারা বলেন, যুদ্ধবিরতি ভোটে বিরত থাকলেও, তিনি ধারাবাহিকভাবে শত্রুতা অবসানের আহ্বান জানিয়েছেন। লেবার পার্টির অবস্থান সবসময় এই অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা।
তিনি অভিযোগ করেন, কিন্তু অন্যান্য প্রার্থী এই ইস্যুকে ব্যবহার করে দেশটির বাংলাদেশি মুসলিম সম্প্রদায়কে তার বিরুদ্ধে দাঁড় করানোর চেষ্টা করে।
ওই এলাকার মসজিদগুলোতে মুসল্লিদের বলা হয়, 'আপনি যদি লেবার পার্টি বা মূলধারার অন্য কোনো দলকে ভোট দাও, তাহলে আপনি ভালো মুসলমান নন।'
রুশনারা বলেন, 'মানুষের প্রতিবাদ করার অধিকার আছে, কিন্তু হুমকি ও হয়রানি দেওয়ার বিষয়টি অগ্রহণযোগ্য।'
মাসরুর বলেন, যারা লেবার ভোটারদের ভালো মুসলিম নয় বলে দাবি করছেন, তাদের সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই এবং তারা কেন এ কথা বলেছেন সে সম্পর্কে তার কোনো ধারণা নেই।
হয়রানির অভিযোগের জবাবে মাসরুর বলেন, 'কখনোই কারোর রুশনারাকে হয়রানি বা নির্যাতন করা উচিত হয়নি।'
তিনি বলেন, 'কিন্তু গণহত্যার শিকার ফিলিস্তিনিদের চোখ বন্ধ করে রাখাও ভুল।'
মাসরুর দাবি করেন, তাকে ভয় দেখানোর চেষ্টাও করা হয়েছে।
তিনি জানান, তার নির্বাচনী প্রচারণার সময়ও প্রায় ১৬ জনের একটি দল চিৎকার করে তার সমর্থকদের গালিগালাজ করেছে এবং ভয় দেখানোর চেষ্টা করেছে।
তিনি আরও বলেন, 'কাউকেই ভয় দেখানো উচিত নয়, এই ধরনের আচরণ নিষিদ্ধ করা উচিত।'
তিনি বলেন, 'আমি প্রচারণার শুরুতেই বলেছিলাম, রুশনারাকে কেউ আক্রমণ করলে আমি তার সামনে দাঁড়াবো। কিন্তু আমার প্রতি কাউকে এ রকম আচরণ করতে দেখিনি।'
জানা যায়, রুশনারা আলী ১৫ হাজার ৮৯৬ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম স্বতন্ত্র প্রার্থী আজমল মাশরুর পেয়েছেন ১৪ হাজার ২০৭ ভোট।
যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টের প্রথম বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এমপি রুশনারা আলী। লন্ডনের বাংলাদেশি অধ্যুষিত টাওয়ার হ্যামলেটসের বেথনাল গ্রিন অ্যান্ড বো আসনে ২০১০ সাল থেকে এর আগে টানা চারবার এমপি নির্বাচিত হন তিনি।