বিশ্বের যেসব রুটে সবচেয়ে বেশি ঘটে ফ্লাইট টার্বুলেন্স
গতকাল মঙ্গলবার লন্ডন থেকে সিঙ্গাপুরগামী সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে তীব্র ঝাঁকুনিতে যাত্রীকদের একজন নিহত এবং কয়েকজন আহত হয়েছেন। এই ঘটনায় নতুন করে আলোচনায় এসেছে আকাশপথে ভ্রমণের এই বিড়ম্বনা।
বিমানটি পরে থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককের সুবর্ণভূমি বিমানবন্দরে জরুরি অবতরণ করে। নিহত যাত্রী একজন ব্রিটিশ নাগরিক বলে জানা গেছে।
এই প্রেক্ষাপটে, আকাশপথের যেসব রুটে যাত্রীবাহী উড়োজাহাজ বেশি ঝাঁকুনির কবলে পড়ে- তাঁর একটি তালিকা করেছে ব্লুমবার্গ। গণমাধ্যমটি জানায়, এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি টার্বুলেন্স হয় চিলি থেকে বলিভিয়ার সান্তাক্রুজে যাতায়াতকারী ফ্লাইটগুলোতে।
এনিয়ে টার্বলি ডেটাবেজ নামের একটি তথ্যভাণ্ডারও রয়েছে। এর তথ্যমতে, দূরপাল্লার যাত্রায় বিমানের ঝাঁকুনিতে সবচেয়ে অস্বস্তি হয় টোকিও থেকে উড্ডয়ন করা ফ্লাইটে।
বিমানের গতিবিধি ও উচ্চতায় আকস্মিক পরিবর্তন আসলেই স্বাভাবিক গতিবিধিতে ছন্দপতন হয়। ফলে কেবিনে থাকা যাত্রীরা ঝাঁকুনির কবলে পড়েন। এটি খুবই মৃদু বা তীব্র – নানান মাত্রায় হতে পারে। একেই বলে ফ্লাইট টার্বুলেন্স।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, ভিন্ন ভিন্ন গতিতে প্রবাহিত বায়ুপ্রবাহগুলো যখন একত্রিত হয়, তখন এরমধ্যে দিয়ে উড়ে যাওয়া বিমান ঝাঁকুনির শিকার হয়।
পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে প্রবাহিত বায়ুর একটি দ্রুতগামী সংকীর্ণ স্রোত পৃথিবীকে ঘিরে রাখে, যাকে বলা হয় জেট স্ট্রিম। সাধারণত এই জেট স্ট্রিমের সীমানায় পড়লে টার্বুলেন্সের শিকার হয় উড়োজাহাজ। ঝড়ো মেঘ বা পর্বতমালার উপর দিয়ে উড্ডয়নের সময় সচরাচর এমনটা ঘটে।
যেমন চিলির সান্তিয়াগো থেকে বলিভিয়ার সান্তাক্রুজের আকাশপথে রয়েছে দুইটি মহাসাগরীয় বায়ুপ্রবাহ। প্রশান্ত ও আটলান্টিক মহাসাগরে উৎপন্ন হওয়া বিপরীত এ দুটি বায়ুপ্রবাহ সমান্তরালভাবে এসে ধাক্কা খায় আন্ডিজ পর্বতমালার গায়ে। একারণে এই রুটের ফ্লাইটে ঝাঁকুনিও হয় তীব্র।
টার্বলির তথ্যমতে, আরেকটি বেশি ঝাঁকুনিপ্রবণ ফ্লাইট রুট হচ্ছে বিষুবরেখা অঞ্চল। কারণ প্রায়ই এর বরাবর বাতাসের শক্তিশালী ঊর্ধ্বমুখী প্রবাহ ও বজ্রসহ মেঘের উপস্থিতি থাকে।
উঁচু উঁচু পাহাড় ও সামুদ্রিক বায়ুপ্রবাহ থাকায় জাপানেও টার্বুলেন্সের কবলে পড়ে বিমান।
যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের আবহাওয়া সংস্থাগুলোর দেওয়া তথ্যের ওপর ভিত্তি করে প্রায় দেড় লাখ ফ্লাইট রুটে টার্বুলেন্সের বিশ্লেষণ করেছে টার্বলি।
এর মধ্যে বিশ্বের সবচেয়ে ঝাঁকুনি প্রবণ হিসেবে প্রথমেই রয়েছে সান্তিয়াগো-সান্তাক্রুজ রুট।
আর দূরপাল্লার বিমানযাত্রায় বেশি টার্বুলেন্সের কবলে পড়ে, এমন রুটগুলোর মধ্যে যথাক্রমে রয়েছে: টোকিও-কাঠমান্ডু; টোকিও-নয়াদিল্লি এবং টোকিও-ঢাকা। এরমধ্যে টোকিও-কাঠমান্ডু রুটে ঝাঁকুনির গড় ঘটনা ১৫.৩৩ বার, টোকিও-নয়াদিল্লি রুটে ১৪.৮৪ বার এবং টোকিও-ঢাকা রুটে ঘটে ১৪.৮০ বার।
এশিয়া মহাদেশের মধ্যে ফ্লাইট চলাচলের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি টার্বুলেন্স হয় আলমাতি-বিশকেক রুটে (গড়ে ১৭.৪৬ বার); এরপরেই লাংঝু-চেংদু রুটে (গড়ে ১৬.৭৫ বার) এবং সেন্ট্রায়ার-সেন্ডাই রুটে (গড়ে ১৬.৫৮ বার)।
ইউরোপের মিলান-জেনেভা রুটে গড়ে ১৬.৪০ বার; মিলান-জুরিখ রুটে ১৬.০২ বার এবং জেনেভা-জুরিখ রুটে ১৪.৯৬ বার টার্বুলেন্সের ঘটনা ঘটে থাকে।
উত্তর আমেরিকা মহাদেশের গন্তব্যগুলোর মধ্যে ন্যাশভিল- রেলেইঘ/ ডারহাম রুটে গড়ে ১৪.৭৩ বার; শার্লট- পিটসবুর্গ রুটে ১৪.৫৮ বার এবং ডেনভার-পুয়ের্তো ভ্যালেরা রুটে গড়ে ১৪.৫৪ বার টার্বুলেন্স হয়।
অনুবাদ: নূর মাজিদ