দক্ষিণ চীন সাগর বেইজিং দাবি করুক, যুদ্ধের দরকার নেই: মাহাথির
দক্ষিণ চীন সাগরের বেশিরভাগ অংশ নিজেদের বলে দাবি করে আসছে চীন। তবে দেশটির এই দাবিকে প্রত্যাখ্যান করেছেন মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ।
গত শুক্রবার টোকিওতে অনুষ্ঠিত ফিউচার অব এশিয়া কনফারেন্সে নিজের স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে এমন কথা বলেন মাহাথির। এক্ষেত্রে 'উচ্চাভিলাষী' প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের নেতৃত্বে থাকা দেশটির সাথে সংঘর্ষ এড়ানো গুরুত্বপূর্ণ বলে অভিহিত করেন তিনি।
মাহাথির যুক্তি দিয়ে চীনের উদ্দেশ্যে বলেন, "দক্ষিণ চীন সাগরকে দাবি করতেই পারেন। তবে আমাদের কাছে শি জিনপিংয়ের নেতৃত্বে দেশটির সাথে সংঘর্ষ এড়ানো আরও গুরুত্বপূর্ণ। আমরা শুধু নিজেদের মধ্যে এবং ব্যবসায়িক অংশীদারদের সাথে শান্তিতে থাকতে চাই।"
মাহাথির মনে করেন, যতক্ষণ পর্যন্ত চীনের অবস্থান বাস্তবে ক্ষতি না করে কিংবা মালয়েশিয়ার নিজস্ব দাবিকে লঙ্ঘন না করে, ততক্ষণ কোনো সমস্যা নেই।
অভিজ্ঞ এই রাজনীতিবিদ বলেন, "দক্ষিণ চীন সাগরে চীন জাহাজ চলাচল নিষিদ্ধ করেনি। সেখানে আমাদের তেলের উৎপাদন রয়েছে। এখন পর্যন্ত তারা কিছু করেনি। হয়তো একদিন বুঝতে পারবে যে, তাদের এই দাবির কোনো মানে নেই।"
মালয়েশিয়ান সরকারের অবস্থান মাহাথিরের মতো এতোটা নমনীয় নয়। বরং তারা দক্ষিণ চীন সাগরের প্রায় সমস্ত অংশের উপর চীনের যে দাবি, সেটি সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাখ্যান করে।
এদিকে মাহাথির জোর দিয়ে বলেন, "দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলির অ্যাসোসিয়েশন আসিয়ানের বেশিরভাগ সদস্যের জন্য চীন সবচেয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য অংশীদার। যদিও এই দেশগুলো দক্ষিণ চীন সাগর নিয়ে চীনের অবস্থানের সাথে একমত নয়। তবে তারা তাদের উত্তরের অর্থনৈতিক এই জায়ান্টের সাথে দ্বন্দ্বে জড়াতে চাইছে না।"
মাহাথির আসিয়ানকে বাস্তববাদী হতে এবং ভূ-কৌশলগত সমস্যাগুলির পরিবর্তে নিজস্ব অর্থনৈতিক উন্নয়নের দিকে মনোনিবেশ করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, "চীন একটি বড় বাজার। আমরা সেই বাজার হারাতে পারি না। পক্ষ নিলে আমরা মার্কিন বাজার কিংবা চীনা বাজার হারাবো।"
তবে মাহাথির স্বীকার করেছেন যে, চীন প্রেসিডেন্ট শি-এর অধীনে আরও কঠোর হয়ে উঠেছে। এক্ষেত্রে ভবিষ্যৎ নেতারা বেইজিংয়ের সুর পরিবর্তন করতে পারেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
জুলাইয়ে ৯৯ বছর হতে যাওয়া প্রবীণ এই রাজনীতিবিদ বলেন, "শি জিনপিংকে আরও উচ্চাভিলাষী এবং আরও আক্রমণাত্মক বলে মনে হচ্ছে। নেতৃত্ব পরিবর্তনের কারণে চীনে অনেক পরিবর্তন এসেছে।"
সেক্ষেত্রে মাহাথির মনে করেন, কেউ যখন শি-এর স্থলাভিষিক্ত হবে, তখন চীনের অবস্থান অবশ্যম্ভাবীভাবে আবার পরিবর্তন হবে। যদিও পরিবর্তনটি ভালো হবে না-কি খারাপ সেটা জানা নেই।"
মাহাথির ১৯৮১ থেকে ২০০৩ এবং ২০১৮ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত দুবার মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। পরবর্তীতে ২০২২ সালের নভেম্বরে সাধারণ নির্বাচনে তিনি সংসদীয় আসন হারান। কিন্তু এখনও একজন সক্রিয় ও কঠোর কণ্ঠস্বরের ভূমিকা পালন করছে বর্ষীয়ান এই রাজনীতিবিদ।
দীর্ঘদিন ধরেই মাহাথির বলে আসছেন যে, তাইওয়ান ইস্যুসহ মার্কিন-চীন উত্তেজনা বৃদ্ধিতে আসিয়ানকে নিরপেক্ষ থাকতে হবে। বেইজিং যদিও তাইওয়ানকে নিজেদের অংশ বলেই মনে করে। প্রয়োজন দেশটি বলপ্রয়োগ করে তা দখলের জন্যও প্রস্তুত। যদিও মাহাথির অবশ্য এই বিবাদের জন্য ওয়াশিংটনকে দায়ী করেছেন।
তিনি বলেন, "দুর্ভাগ্যবশত আমেরিকা তাইওয়ান এবং চীনের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখতে চায়। আমাদের এমন কিছুর প্রয়োজন নেই। তারা শুধু দাবি করলেও (কার্যত) কিছু করে না।"
এদিকে গত বৃহস্পতিবার চীন তাইওয়ানকে ঘিরে বড় আকারের সামরিক মহড়া শুরু করেছে। এমনকি গত শুক্রবার দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, চীনা বাহিনী মক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে।
মাহাথির মনে করেন, মার্কিন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তাইওয়ান সফর করে চীনকে উসকানি দিচ্ছে। যার মধ্যে প্রাক্তন হাউস স্পিকার ন্যান্সি পেলোসিও রয়েছে। তার ২০২২ সালের সফর অনুরূপ চীনা সামরিক মহড়ার জন্ম দিয়েছিল।
এদিকে আগামী নভেম্বরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচিত হলে কূটনৈতিক সম্পর্ক আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে। মাহাথিরের মতে এজন্যই আসিয়ানের নিরপেক্ষ থাকা উচিত।
অনুবাদ: মোঃ রাফিজ খান