চ্যাটজিপপিটির মতো এআই আলোচনায় যত ঝড় তুলেছে, বাস্তবে এর ব্যবহার ততটা নয়: গবেষণা
চ্যাটজিপিটির মতো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি নিয়ে বেশ আলোচনা হচ্ছে। কিন্তু সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা যায়, খুব কম মানুষই চ্যাটবট প্রযুক্তিগুলো ব্যবহার করছে।
গবেষণায় ছয়টি দেশের মোট ১২ হাজার জন মানুষের ওপর ভিত্তি করে জরিপ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে দেখা যায়, যুক্তরাজ্যের মাত্র ২ ভাগ মানুষ প্রতিনিয়ত এআই চ্যাটবট টুলগুলো ব্যবহার করছে।
রয়টার্স ইন্সটিটিউট ও অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি মিলে গবেষণাটি করেছে। সেখানে দেখা যায়, ১৮ থেকে ২৪ বছর বয়সী তরুণ-তরুণীরা প্রযুক্তিটি সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করছে।
তবে গবেষণাটির মূল লেখক রিচার্ড ফ্লেচার প্রাপ্ত ডেটা থেকে বিবিসিকে জানান, এআই টুলগুলো নিয়ে যে 'আলোচনা' তৈরি হয়েছে তার সাথে এটি 'ব্যবহারের' অসামঞ্জস্য রয়েছে।
গবেষণায় জেনারেটিভ এআই টুলটির উপর মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি পরীক্ষা করা হয়েছে। যা কি-না প্রম্পট অনুযায়ী টেক্সট, ছবি, অডিও ও ভিডিও তৈরি করতে পারে।
২০২২ সালের নভেম্বর মাসে চ্যাটজিপিটি বাজারে আসে। তখন থেকেই এই সংক্রান্ত এআই টুলগুলো মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে থাকে।
এআই চ্যাটবটগুলোর সম্ভাবনা বুঝতে পেরে ওপেনএআইয়ের সাথে পাল্লা দিয়ে প্রতিযোগিতা শুরু করে বিশ্বের বড়ও বড়ও টেক জায়ান্ট কোম্পানি। গুগলের মতো কোম্পানিগুলো তাদের নিজস্ব জেনারেটিভ এআই টুল তৈরিতে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খরচ করে।
তবে সম্প্রতি গবেষণায় দেখা যায়, এত অর্থ খরচের পরেও আলোচনায় থাকা প্রযুক্তিটি এখনও মানুষের দৈনন্দিন ইন্টারনেট ব্যবহারের অংশ হতে পারেনি।
ফ্লেচার বলেন, "জনসাধারণের একটা বৃহৎ অংশ এখনও জেনারেটিভ এআই-তে আগ্রহী নয়। জরিপে অংশ নেওয়া যুক্তরাজ্যের ৩০ ভাগ মানুষ জানান, তারা চ্যাটজিপিটিসহ জনপ্রিয় এআই টুলগুলোর নাম শোনেননি।"
নতুন প্রজন্মের এআই পণ্যগুলি ইতিবাচক না-কি নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে তা নিয়ে অবশ্য বিতর্ক চলছে। তবে অনেকেই আশা প্রকাশ করছেন যে, প্রযুক্তিটি ব্যবহার করে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি থেকে শুরু করে জীবন রক্ষাকারী নতুন ওষুধের আবিষ্কার পর্যন্ত সম্ভব হবে। অন্যদিকে আরেকদল মানুষ এটিকে 'মানবজাতির জন্য হুমকিস্বরূপ' বলে আখ্যায়িত করেছেন।
তবে এই গবেষণায় মানুষের বেশকিছু ভবিষ্যদ্বাণী তুলে ধরা হয়েছে। সেখানে দেখা যায়, বেশিরভাগ মানুষই মনে করে যে, জেনারেটিভ এআই আগামী পাঁচ বছরে সমাজে বিশেষ করে সংবাদ, মিডিয়া ও বিজ্ঞানের উপর বড় প্রভাব ফেলবে। একইভাবে বেশিরভাগই মনে করে প্রযুক্তিটি তাদের জীবনকে বদলে দেবে।
তবে যখন জিজ্ঞাসা করা হয়ে যে, জেনারেটিভ এআই সমাজকে সামগ্রিকভাবে উন্নত না-কি নেতিবাচক প্রভাব রাখবে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে হতাশার কথা শোনা যায়।
ফ্লেচার বিবিসিকে বলেন, "সেক্টরের ওপর নির্ভর করে জেনারেটিভ এআইয়ের ওপর মানুষের আশাবাদী হওয়া কিংবা ভয়ের ব্যাপারটি অনেকাংশে নির্ভর করে। এক্ষেত্রে তারা বিজ্ঞান ও স্বাস্থ্যসেবাতে এর ব্যবহার নিয়ে আশাবাদী। তবে সংবাদ ও সাংবাদিকতায় এটি ব্যবহৃত হওয়ার বিষয়ে মানুষ বেশ সতর্ক। আর চাকরিতে এর ব্যবহার নিয়ে চিন্তিত।"
ফ্লেচার জানান, ফলাফলটি ছয়টি দেশের নাগরিকদের ওপর একটি অনলাইন জরিপের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে। দেশগুলো হলো আর্জেন্টিনা, ডেনমার্ক, ফ্রান্স, জাপান, যুক্তরাজ্য ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
অনুবাদ: মোঃ রাফিজ খান