গাজায় যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে সমর্থন নিরাপত্তা পরিষদের
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজার যুদ্ধবিরতির জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনার প্রতি সমর্থন জানিয়েছে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ। সোমবার (১০ জুন) নিরাপত্তা পরিষদ এ প্রস্তাবটির সমর্থন জানিয়েছে। খবর বিবিসি'র।
প্রস্তাবে একটি 'পূর্ণ যুদ্ধবিরতি', হামাসের হাতে আটক জিম্মিদের মুক্তি, মৃত জিম্মিদের দেহাবশেষ ফেরত এবং ফিলিস্তিনি বন্দি বিনিময়ের শর্ত নির্ধারণ করা হয়েছে।
নিরাপত্তা পরিষদের ১৫ সদস্যের মধ্যে ১৪টি দেশ যুক্তরাষ্ট্রের উত্থাপিত ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধবিরতির খসড়া প্রস্তাবকে সমর্থন জানিয়েছে। শুধু রাশিয়া ভোটদানে বিরত ছিল।
প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ইসরায়েল যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব গ্রহণ করেছে এবং হামাসকেও এতে সম্মত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদসহ বেশ কয়েকটি দেশের সরকারের পাশাপাশি বিশ্বের শিল্পোন্নত দেশগুলোর জি-৭ জোট গত ৩১ মে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রস্তাবিত সুনির্দিষ্ট তিন ধাপের প্রস্তাবটির প্রতি তাদের সমর্থন ব্যক্ত করেছে।
এই ভোটাভুটি সংঘাত অবসানের প্রস্তাবে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানাতে উভয় পক্ষের ওপর চাপ বাড়াবে বলে মনে করা হচ্ছে।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুসহ বিদেশি নেতাদের সঙ্গে শান্তি চুক্তির পক্ষে সমর্থন আদায়ে বৈঠকের পরপরই জাতিসংঘে প্রস্তাব পাসের খবর পাওয়া গেল।
জাতিসংঘে ভোটাভুটির মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগেই আরব নেতাদের উদ্দেশে মি. ব্লিঙ্কেন আহ্বান জানিয়ে বলেন, 'যদি যুদ্ধবিরতি চান, তাহলে 'হ্যাঁ' বলতে হামাসের ওপর চাপ প্রয়োগ করুন।'
সশস্ত্র গোষ্ঠীটি এর আগে বলেছিল তারা পরিকল্পনার কিছু অংশ সমর্থন করে। সোমবার এক বিবৃতিতে নিরাপত্তা পরিষদের সিদ্ধান্তকে 'স্বাগত জানায়' দেশটি।
তবে হামাস এমন নিশ্চয়তা চাইবে যে, এই প্রস্তাবের মাধ্যমে একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতি এবং গাজা উপত্যকা থেকে ইসরায়েলি বাহিনী সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করা হবে। কাতারের দোহায় হামাসের রাজনৈতিক নেতারা এ প্রস্তাবে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে সাড়া দেননি বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলি কর্মকর্তারা।
যুদ্ধবিরতির যে তিনটি ধাপ প্রস্তাব করা হয়েছে:
প্রথম ধাপ: জিম্মি-বন্দী বিনিময় এবং একটি স্বল্পমেয়াদি যুদ্ধবিরতি।
দ্বিতীয় ধাপ: যুদ্ধের স্থায়ী অবসান এবং গাজা থেকে ইসরায়েলি বাহিনী পুরোপুরি প্রত্যাহার।
তৃতীয় ধাপ: বহু বছর মেয়াদি পরিকল্পনাসহ গাজার দীর্ঘমেয়াদি পুনর্গঠন।
প্রেসিডেন্ট বাইডেন ইসরায়েল এই পরিকল্পনায় সম্মত হয়েছে বলে জানানোর ১০ দিন পর সোমবারের প্রস্তাবটি পাশ হলো। তবে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে এই প্রস্তাব অনুমোদন করেননি।
ইসরায়েলের কিছু উগ্র ডানপন্থি মন্ত্রী এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করছেন, এমনকি চুক্তিটি বাস্তবায়িত হলে সরকার ভেঙে দেওয়ারও হুমকি দিয়েছেন তারা। রোববাড় ওয়ার কেবিনেট থেকে সাবেক জেনারেল বেনি গান্টজের পদত্যাগ এই অস্থিতিশীলতা আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট 'এক্স'-এ নিরাপত্তা পরিষদের সিদ্ধান্তের কথা উল্লেখ করে বলা হয়েছে, 'হামাস বলেছে তারা যুদ্ধবিরতি চায়। এই চুক্তি প্রমাণ করার এটি একটি সুযোগ।'
জাতিসংঘে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত লিন্ডা থমাস-গ্রিনফিল্ড বলেন, 'আজ আমরা শান্তির পক্ষে ভোট দিয়েছি।'
যুক্তরাজ্যের রাষ্ট্রদূত বারবারা উডওয়ার্ড গাজার পরিস্থিতিকে 'বিপর্যয়কর' হিসেবে বর্ণনা করে স্থায়ী শান্তির আহ্বান জানিয়েছেন। যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনও প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছেন।
২৫ মার্চ জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানায়। এর আগে যুক্তরাষ্ট্র একই ধরনের পদক্ষেপে ভেটো দিলেও মার্চের প্রস্তাবে ভেটো দেয়নি।
৭ অক্টোবর হামাস ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে হামলা চালিয়ে প্রায় ১,২০০ জনকে হত্যা করে এবং প্রায় ২৫১ জনকে জিম্মি করার পর ইসরায়েল-গাজার এই সংঘাত শুরু হয়। হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলের পালটা হামলার পর থেকে গাজায় নিহতের সংখ্যা ৩৭ হাজার ছাড়িয়ে গেছে।
অনুবাদ: সাকাব নাহিয়ান শ্রাবন