২০২৭ সালে এই দেশে তৈরি হবে গোটা ‘কাঠের শহর’
গত কয়েক বছরে নরওয়ে, সুইজারল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশগুলোতে কাঠের তৈরি ভবনের সংখ্যা বেড়েছে। এশিয়ায় সিঙ্গাপুরে ৪ লাখ ৬৮ হাজার বর্গফুটের ক্যাম্পাসে কলেজ ভবন তৈরি হয়েছে কাঠ দিয়ে।
এসবের পর গোটা একটা 'কাঠের শহরই' গড়ে উঠবে সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে। বিশ্বের বৃহত্তম এই কাঠের শহর তৈরি করবে রিয়েল এস্টেট ডেভেলপার অ্যাট্রিয়াম লিয়্যুংবার্গ।
২০২৭ সালের মধ্যে স্টকহোম উড সিটি নামের এ শহর নির্মাণ সম্পন্ন হওয়ার কথা রয়েছে। এ শহরের প্রথম ভবনগুলোর নক্সা করছে স্থাপত্য প্রতিষ্ঠান হোয়াইট আর্কিটেকটার ও হেনিং লারসেন।
সুইডেনের রাজধানীর দক্ষিণ-পশ্চিমে গড়ে তোলা কাঠের শহরে থাকবে ৭ হাজার অফিস স্পেস এবং ২ হাজার বাড়ি। এছাড়া এ শহরে থাকবে কাঠের ওয়ার্কপ্লেস, আবাসন, রেস্টুরেন্ট ও দোকানপাট। সব মিলিয়ে খাঁটি নগরজীবনের পরিবেশ তৈরি করে দেওয়া হবে এখানে।
২ লাখ ৫০ হাজার বর্গফুট আয়তনের স্টকহোম উড সিটিকে ডেভেলপার কোম্পানিটি 'বিশ্বের বৃহত্তম' কাঠের নির্মাণ প্রকল্প হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে।
এ প্রকল্প নির্মাণ করা হচ্ছে সিকলা এলাকায়। এ অঞ্চলে ইতিমধ্যে ৪০০-র বেশি কোম্পানি রয়েছে বলে জানিয়েছে অ্যাট্রিয়াম লিয়্যুংবার্গ। কোম্পানিটি এ এলাকাকে 'ফাইভ মিনিট সিটি' বলে আখ্যা দিয়েছে। তাদের দাবি, এখানে কর্মস্থল, বাড়ি, অবসর-বিনোদন কেন্দ্র ও অন্যান্য সেবা সবই একটি অপরটি থেকে মাত্র পাঁচ মিনিটের হাঁটা দূরত্বে থাকবে।
কংক্রিট ও ইস্পাতের টেকসই বিকল্প হিসেবে কাঠকে সমর্থন দেন অনেকেই। বিশ্বের অনেক এলাকা বাড়ি ও অফিস ভবন নির্মাণ হচ্ছে কাঠ দিয়ে।
তবে বেশ কিছু বিশেষজ্ঞ কাঠের বাড়িতে অগ্নিঝুঁকি নিয়ে উদ্বেগ করেছেন। তবে কাঠের বাড়ির সমর্থকরা বলছেন, বিশেষভাবে প্রস্তুত করা কাঠ তুলনামূলক ধীরগতিতে পোড়ে। ফলে এসব কাঠ দিয়ে বানানো বাড়ি প্রথাগত ইস্পাতের অবকাঠামোর চেয়ে নিরাপদ।
কাঠ আবার 'কার্বন সিঙ্ক'ও। অর্থাৎ গাছ বাতাস থেকে যে কার্বন-ডাই-অক্সাইড ধারণ করে, তা আবার বায়ুমণ্ডলে ছেড়ে না দিয়ে কাঠের মধ্যেই আটকে রাখে।
দেখা গেছে, কাঠের ভবনের অন্দরে বাতাসের গুণমান ভালো থাকে। এছাড়া কাঠের বাড়ি প্রথাগত বাড়ির চেয়ে অনেক কম কার্বন নিঃসরণের মাধ্যমে তৈরি করা যায়।
২০২২ সালে নেচার জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় প্রাক্কলন করা হয়েছে, এখন থেকে ২১০০ সাল পর্যন্ত নতুন শহুরে বাসিন্দাদের ৯০ শতাংশের জন্য মাঝারি উচ্চতার কাঠের ভবন বানালে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের নিঃসরণ কমবে ১০৬ গিগাটন। পৃথিবী বর্তমানে বছরে ৯০ গিগাটন কার্বন-ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ করে।
তবে এত বিপুলসংখ্যক কাঠের বাড়ি তৈরির জন্য টেকসই বৃক্ষরোপণ প্রয়োজন হবে, যাতে বন উজাড় না হয়। তবে সুইডেন কাঠ দিয়ে বাড়ি বানানোর জন্য বাড়তি সুবিধা পাবে, কারণ দেশটির মোট ভূমির ৭০ শতাংশই বনাঞ্চল।
রিয়েল এস্টেটের কার্বন ফুটপ্রিন্ট বিশাল। কনসাল্টিং ফার্ম ম্যাককিনসে-র তথ্যানুসারে, বৈশ্বিক মোট নিঃসরণের ৪০ শতাংশের জন্যই দায়ী এ খাত।