হজের সময় কমপক্ষে ১,৩০১ জন মারা গেছেন: সৌদি আরব
হজের সময় কমপক্ষে ১ হাজার ৩০১ জন মারা গেছেন বলে সৌদি আরব জানিয়েছে। মৃতদের অধিকাংশই অনিবন্ধিত হাজি যারা প্রচণ্ড গরমের মধ্যেই দীর্ঘ দূরত্ব পায়ে হেঁটে পাড়ি দিয়েছিলেন।
এই বছরের হজের সময় তাপপ্রবাহের কারণে সৌদি আরবের তাপমাত্রা কখনও কখনও ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে গিয়েছিল৷
সরকারি সৌদি বার্তা সংস্থা এসপিএ জানিয়েছে, যারা মারা গেছেন তাদের তিন-চতুর্থাংশেরও সেখানে থাকার আনুষ্ঠানিক অনুমতি ছিল না এবং তারা পর্যাপ্ত আশ্রয় ছাড়াই সরাসরি সূর্যের আলোর নিচে হেঁটেছেন। যারা মারা গেছেন তাদের মধ্যে কয়েকজন বয়স্ক এবং দীর্ঘদিন অসুখে ভোগা ব্যক্তিও ছিলেন।
সৌদি স্বাস্থ্যমন্ত্রী ফাহাদ আল-জালাজেল জানিয়েছেন, তাপপ্রবাহের ফলে আসন্ন বিপদ এবং কীভাবে হাজিরা সেটা মোকাবিলা করতে পারবেন— সে সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানোর চেষ্টা করা হয়েছে।
তিনি আরও জানিয়েছেন, প্রায় ৫ মিলিয়ন হাজিকে চিকিৎসাসেবা দেয়া হয়েছে, যার মধ্যে ১ লাখ ৪০ হাজার অনিবন্ধিত হাজিও ছিলেন। তাপজনিত রোগে এখনো বেশ কয়েকজন চিকিৎসাধীন অবস্থায় আছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
সৌদি আরব হজকে নিরাপদ করার জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না নেওয়ার জন্য সমালোচিত হয়েছে, বিশেষ করে অনিবন্ধিত হাজিদের জন্য শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত তাঁবু এবং আনুষ্ঠানিক পরিবহণ ব্যবস্থা না থাকায়।
সৌদি আরবের জাতীয় আবহাওয়া কেন্দ্রের তথ্য অনুসারে, হজের সময় মক্কায় তাপমাত্রা ৫১.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছেছে।
বিশ্বজুড়ে দেশগুলো হজের সময় তাদের কতজন নাগরিক মারা গেছে তা নিয়ে তথ্য প্রকাশ করলেও সৌদি আরব রোববার (২৩ জুন) এর আগ পর্যন্ত মৃত্যুর বিষয়ে প্রকাশ্যে কোন মন্তব্য করেনি বা সরকারি তথ্য প্রদান করেনি।
বার্তা সংস্থা এএফপি একজন আরব কূটনীতিকের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে, হজের সময় মিশরের ৬৫৮ জন নাগরিক মারা গেছেন। ইন্দোনেশিয়া জানিয়েছে, দেশটির ২০০ জনেরও বেশি নাগরিক মারা গেছে। ভারতের প্রায় ৯৮ জন নাগরিক মারা গেছে বলে জানা গেছে।
পাকিস্তান, মালয়েশিয়া, জর্ডান, ইরান, সেনেগাল, তিউনিসিয়া, সুদান এবং ইরাকের স্বায়ত্তশাসিত কুর্দিস্তান অঞ্চলও হাজিদের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
সৌদি কর্তৃপক্ষের হিসেব মতে, চলতি বছর হজে প্রায় ১৮ লাখ মানুষ অংশ নিয়েছে। হজে মৃত্যুর ঘটনা আগে ঘটলেও এ বছরের তীব্র গরমে হাজিদের আরও ভয়াবহ অভিজ্ঞতা হয়। বিশেষ করতে অনিবন্ধিত হাজির জন্য নিহতের সংখ্যা আরও বেড়েছে।
শনিবার (২২ জুন) মিশরের প্রধানমন্ত্রী মোস্তফা মাদবৌলি ১৬টি পর্যটন কোম্পানির লাইসেন্স কেড়ে নিয়েছেন। মক্কায় হাজিদের অনিবন্ধিত ভ্রমণে সহায়তা করায় এসব পর্যটন কোম্পানির পরিচালকদের বিচার করার জন্য প্রসিকিউটরদের কাছে তিনি বিষয়টি হস্তান্তর করেছেন।
শুক্রবার (২১ জুন) জর্ডানে বেশ কয়েকজন ট্রাভেল এজেন্টকে আটক করা হয়েছে যারা মক্কায় মুসলিম হাজিদের অনিবন্ধিত ভ্রমণে সহায়তা করেছিল। এদিকে তিউনিসিয়ার প্রেসিডেন্ট কাইস সাইদ দেশটির ধর্মমন্ত্রীকে বরখাস্ত করেছেন।
হজ পারমিট কোটা পদ্ধতিতে দেশগুলোতে বরাদ্দ করা হয় এবং লটারির মাধ্যমে ব্যক্তিদের মধ্যে বিতরণ করা হয়। তবে অনেকেই গ্রেপ্তার এবং নির্বাসনের ঝুঁকি নিয়েই অনুমতি ছাড়াই হজে অংশ নেওয়ার চেষ্টা করে।
হজের আগে সৌদি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল, তারা মক্কা থেকে কয়েক হাজার অনিবন্ধিত হাজিকে সরিয়ে দিয়েছে।
অনুবাদ: তাসবিবুল গনি নিলয়