জিরাফের গলা কেন লম্বা? নতুন যে তথ্য জানালেন গবেষকরা
জিরাফের পূর্বপুরুষদের গলা এখনকার জিরাগুলোর মতো লম্বা ছিল না। তাদের গলা ছিল তুলনামূলক খাটো। প্রাণীটির গলার এ বিবর্তনকে ঘিরে চার্লস ডারউইনের সময় থেকে বহু বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।
তবে নতুন এক তত্ত্ব অনুযায়ী- জিরাফের গলার এ বিবর্তনের পেছনে শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে পারার বিষয়টির ভূমিকা থাকতে পারে।
গবেষকদের আরেকটি ধারণা হলো- খাবার ও যৌনতা নিয়ে প্রতিযোগিতাও জিরাফের লম্বা গলার প্রধান কারণ হতে পারে।
এখনকার জিরাফগুলো উচ্চতায় সাধারণত ৫.৮ (১৯ ফুট) মিটার লম্বা হয়ে থাকে। আর তাদের এ অধিক উচ্চতার অন্যতম কারণ তাদের লম্বা গলা। অন্যান্য স্তন্যপায়ী প্রাণীর মতো ঘাড়ে সাতটি হাড় থাকার পরও এদের গলা ১.৮ মিটারেরও বেশি লম্বা হয়ে থাকে।
পুরুষ ও স্ত্রী জিরাফগুলোর মধ্যে আকারের উল্লেখযোগ্য পার্থক্য দেখা যায়। পুরুষ জিরাফের গলা স্ত্রী জিরাফের গলার চেয়ে প্রশস্ত হয়ে থাকে।
এ পার্থক্যের কারণে অনেক গবেষকই নেকস ফর সেক্স ধারণার কথা উল্লেখ করেন। এ ধারণা অনুযায়ী- যৌনসঙ্গী নির্বাচনের ক্ষেত্রে দুই পুরুষ জিরাফের মধ্যে লড়াই বা প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার প্রয়োজনে জিরাফের গলা বিবর্তিত হয়ে এত লম্বা হয়েছে।
তবে সর্বোপরী এ ধারণা সত্যি না-ও হতে পারে।
পেনসিলভানিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির জীববিজ্ঞানী ডগ ক্যাভেনার বলেছেন, ''নেকস ফর সেক্স' অনুমান বা ধারণা অনুযায়ী পুরুষ জিরাফের গলা স্ত্রী জিরাফের গলার চেয়ে লম্বা হওয়া উচিত। বাস্তবেও এমনটাই। তবে পুরুষ জিরাফের দেহের সবকিছুই লম্বা। তারা সামগ্রিকভাবে স্ত্রী জিরাফের চেয়ে আকারে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ বড়।'
গবেষণায় ক্যাভেনার ও তার সহকর্মীরা দেখেছেন, কিশোর বয়স পর্যন্ত পুরুষ ও স্ত্রী জিরাফের শরীরের অনুপাত একই থাকে। কিন্তু পুরুষ জিরাফগুলোর যখন যৌন পরিপক্কতা আসে, তখন এদের শরীরের অনুপাতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন দেখা যায়।
এক্ষেত্রে প্রাপ্তবয়স্ক স্ত্রী জিরাফের গলা এর শরীর অনুপাতে লম্বা হয়ে থাকে। আর প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ জিরাফের গলা প্রাপ্তবয়স্ক স্ত্রী জিরাফের চেয়ে আনুপাতিক হারে চওড়া হয়।
ফলস্বরূপ গবেষকরা মনে করেন, প্রাকৃতিক নির্বাচনের কারণেই স্ত্রী জিরাফের গলা লম্বা হয়ে থাকে, যেখানে পুরুষ জিরাফের প্রশস্ত গলার জন্য দায়ী যৌন নির্বাচন সংক্রান্ত চাপ।
ক্যাভেনারের যুক্তি হলো- সাধারণত স্ত্রী জিরাফগুলো চার-পাঁচ বছর বয়সে পৌঁছানোর পর গর্ভধারণ করে থাকে। সেইসাথে এ বয়সে তারা স্তন্যদানের উপযোগী হয়ে ওঠে। এ কারণে তাদের শরীরে বাড়তি পুষ্টির চাহিদা তৈরি হয়।
গবেষকরা মনে করেন পুষ্টির এ অতিরিক্ত চাহিদা জিরাফের 'লম্বা গলা'র বিবর্তনের দিকে পরিচালিত করেছে।
ক্যাভেনার বলেন, 'বিশেষ করে স্ত্রী জিরাফগুলোকে প্রায়ই বনের গভীরে দেখা যায়। এর কারণ হলো- এরা নির্দিষ্ট প্রজাতির কিছু গাছের পাতা খেয়ে থাকে। সেই পাতা খুঁজতেই এরা বনের গভীরে যায়। আর লম্বা গলা এদের বনের গভীরে পৌঁছাতে সহায়তা করে।'
গবেষকরা মনে করেন- স্ত্রী জিরাফদের গর্ভধারণের প্রস্তুতির জন্য এদের লম্বা গলা সহায়ক হতে পারে। তবে পুরুষ জিরাফের ক্ষেত্রে লম্বা গলা যতটা না গুরুত্বপূর্ণ, তার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ গলার প্রশস্ততা। যে পুরুষ জিরাফের গলা যত বেশি প্রশস্ত, সঙ্গীর জন্য অন্য পুরুষদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সে তত বেশি সুবিধা পেতে পারে।
তবে দুঃখজনক হলেও সত্য ১৯৮৫ সাল থেকে এ প্রাণীর সংখ্যা ৪০ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে।
গবেষকরা জানিয়েছেন, আংশিকভাবে বাসস্থানের ক্ষতি ও শিকারের কারণে গত ৩০ বছরে মাসাই জিরাফের (জিরাফের একটি প্রজাতি যেটি পূর্ব আফ্রিকায় বেশি দেখা যায়) সংখ্যা দ্রুত হারে কমেছে।
গবেষণাটি ম্যামালিয়ান বায়োলজি জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।
অনুবাদ: রেদওয়ানুল হক