১৬ প্রজাতির পোকামাকড়কে নিরাপদ বলে খাওয়ার অনুমোদন দিল সিঙ্গাপুর
সিঙ্গাপুরে ১৬ প্রজাতির পোকামাকড় মানুষের খাওয়ার জন্য নিরাপদ বলে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। সিঙ্গাপুর ফুড এজেন্সি (এসএফএ) খাওয়ার জন্য ঝিঁঝিঁ পোকা, মথ লার্ভা এবং এক প্রজাতির মৌমাছির মতো পোকামাকড় খাওয়ার অনুমোদন দিয়েছে।
এসএফএ থেকে জানানো হয়েছে, ইনসেক্ট ইন্ডাস্ট্রি (পোকামাকড় শিল্প) 'ধীরে ধীরে বাড়ছে এবং পোকামাকড় নতুন খাদ্য আইটেম হিসেবে' বিবেচিত হচ্ছে। এ ব্যাপারে একটি নিয়ন্ত্রক সংস্থা গঠন করা হয়েছে যেটি কোন কোন পোকামাকড়কে খাদ্য হিসেবে অনুমোদন দেওয়া হবে তা নির্ধারণ করবে।
এসএফএর অনুমোদন পাওয়া পোকামাকড়ের মধ্যে রয়েছে ঝিঁঝিপোকা, ঘাসফড়িং, পঙ্গপাল, রেশম পোকা, গ্রাউন্ড মেলওয়ার্ম, নানা ধরনের মথ ও লার্ভা, এক প্রজাতির মৌমাছিসহ ১৬ প্রজাতির পোকামাকড়।
দীর্ঘ গবেষণার পর এসব পোকামাকড় মানুষের খাদ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে এসএফএ। এসব পোকামাকড় মানবদেহের জন্য নিরাপদ হওয়ায়, প্রোটিনের চাহিদা পূরণে এ সিদ্ধান্ত বেশ কাজ আসতে পারে বলে মনে করছে সংস্থাটি।
সংস্থাটি থেকে জানানো হয়েছে, অনুমোদন পাওয়া পোকামাকড় খাওয়ার জন্য উৎপাদন এবং অন্যান্য দেশ থেকে আমদানি করা যাবে। তবে বন-জঙ্গল থেকে কোনোভাবেই ধরে আনা যাবে না।
উৎপাদন করা পোকামাকড়ের ক্ষেত্রে কঠোর মান নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। পোকা আমদানির ক্ষেত্রে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানকে অবশ্যই সিঙ্গাপুরের মানদণ্ড মানতে হবে।
অস্ট্রেলিয়ার কীট ও খাদ্য বিজ্ঞানী স্কাই ব্ল্যাকবার্ন পোকামাকড়কে খাদ্য হিসেবে ব্যবহার সমর্থন করেন। তিনি সিঙ্গাপুরের মানুষের ব্যবহারের জন্য অনুমোদিত পোকামাকড় প্রজাতির বিস্তৃত তালিকা দেখে অভিভূত হয়ে বলেন, 'এসব খাবারযোগ্য পোকামাকড়ের প্রতি সিঙ্গাপুর যে উদারতা প্রদর্শন করেছে তা সাধারণ প্রত্যাশার থেকেও বেশি ছিল।'
এদিকে এ ঘোষণায় সিঙ্গাপুরের রেস্তোরাঁ মালিক এবং খাদ্য আমদানিকারকরা বেশ খুশি হয়েছেন। হাউজ অব সিফুড নামে দেশটির একটি রেস্তোরাঁ চেইন ইতোমধ্যেই পোকামাকড় দিয়ে বানানো ৩০ ধরনের খাবার রেস্তোরাঁয় চালু করার পরিকল্পনা করে ফেলেছে বলে স্ট্রেইট টাইমস নামে সিঙ্গাপুরের একটি সংবাদপত্র প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
খাবারের তালিকায় রয়েছে: রেশম পোকা এবং ঝিঁঝিঁ পোকা দিয়ে সজ্জিত সুশি, সুপারওয়ার্ম ও লবণযুক্ত ডিমে দিয়ে প্রস্তুতকৃত কাঁকড়া এবং ওয়ার্ম দিয়ে তৈরি করা "মিন্টি মিটবল মেইহ্যাম"।
সিঙ্গাপুরের কর্তৃপক্ষ পোকামাকড় ব্যবহার করে তৈরি করা পণ্য আমদানির অনুমোদন দিয়েছে। এসব পণ্যের মধ্যে রয়েছে: পোকার তেল, পোকামাকড় দিয়ে রান্না না করা পাস্তা, চকলেট এবং অন্যান্য মিষ্টি যার মধ্যে ২০ শতাংশ পর্যন্ত পোকামাকড় রয়েছে। এছাড়া মৌমাছির লার্ভাসহ বিটল গ্রাব ও সিল্কওয়ার্ম-এর পিউপা আমদানির অনুমতি দেয়া হয়েছে।
যেহেতু জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) মানুষ এবং গবাদি পশুর জন্য প্রোটিন সরবরাহ করতে এবং পরিবেশগত সুবিধার জন্য পোকামাকড় ব্যবহারকে উৎসাহিত করে, সিঙ্গাপুর খাদ্য হিসেবে এসব পোকামাকড় ব্যবহার করার অনুমোদন দিয়েছে।
জাতিসংঘ থেকে উন্নয়নশীল দেশে মানুষ ও পশুর প্রোটিনের চাহিদা মেটাতে নিয়ন্ত্রিত উপায়ে এসব পোকামাকড় উৎপাদন ও সেগুলো খাদ্যসামগ্রীতে ব্যবহার করতে উৎসাহিত করা হচ্ছে।