টেসলার গিগাফ্যাক্টরি থেকে ৬৫,০০০ কফি মগ উধাও!
জার্মানিতে অবস্থিত টেসলার গিগাফ্যাক্টরিতে অগণিত সমস্যা এবং কর্মীদের অসন্তুষ্টির থেকেও কর্তৃপক্ষের জন্য বড় চিন্তার বিষয় হয় দাঁড়িয়েছে মগ উধাও হওয়ার ঘটনা।
মগ উধাও হওয়ার ঘটনায় গিগাফ্যাক্টরির কর্তৃপক্ষ এতটাই বিচলিত যে কর্মীদের নিরাপত্তা এবং বেতন সংক্রান্ত সমস্যাকে কেন্দ্র করে একটি উত্তপ্ত বৈঠক চলাকালীন টেসলার প্ল্যান্ট ম্যানেজার আন্দ্রে থিয়েরিগ ফ্যাক্টরি থেকে কেন হাজার হাজার কফি মগ হারিয়ে যাচ্ছে— তা নিয়েই সবথেকে বেশি উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। জার্মান দৈনিক হ্যান্দেজব্ল্যাট-এর একটি অডিও রেকর্ডিংয়ের বরাত দিয়ে ডয়েচে ভেলে এ তথ্য জানিয়েছে।
বৈঠকে আন্দ্রে থিয়েরিগ কর্মীদের উদ্দেশ্য করে বলেন, "আমরা এখানে উৎপাদন শুরু করার পর থেকে আমরা ৬৫ হাজার কফি মগ কিনেছি। পরিসংখ্যানগতভাবে বলতে গেলে, আপনার প্রত্যেকের বাড়িতে ইতোমধ্যেই পাঁচটি করে আইকিয়া (আইকেইএ) কফি কাপ রয়েছে।"
মগ উধাও হওয়ার ঘটনায় থিয়েরিগ শুধু হতাশই হননি, এমনটি বন্ধ না হলে ব্রেক রুম [কর্মীরা কর্মক্ষেত্রে বিরতির ফাঁকে বিশ্রাম বা খাওয়ার জন্য যে রুম ব্যবহার করে] থেকে তৈজসপত্র সরিয়ে ফেলা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
তবে এরকম রুদ্ধদ্বার বৈঠকের মধ্যেই তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে প্ল্যান্ট ম্যানেজারের এরকম উদ্বেগ দেখে টেসলার কোনো কোনো কর্মী হাত তালি দিয়েছেন, আবার কারো কারো জন্য এটি হাসির উদ্রেকও করে।
বৈঠকে থিয়েরিগ বলেন, "আমি বারবার মগ কেনার অনুমতি দিতে দিতে ক্লান্ত হয়ে গেছি।"
থিয়েরিগ কফি মগ হারানোর জন্য এমন সময় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যখন বার্লিনের দক্ষিণ-পূর্বের গ্রুনহাইডে অবস্থিত টেসলার গিগাফ্যাক্টরিতে সম্প্রতি কর্মক্ষেত্রজনিত সংকট এবং নিরাপত্তা সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন কর্মীরা। পরিস্থিতি এতটাই গুরুতর হয়ে উঠেছে যে অনেক টেসলা কর্মীদের প্রতিনিধিত্বকারী আইজি মেটাল ইউনিয়নের সেক্রেটারি জ্যানেস বোজার্ট উল্লেখ বলেন, "ধর্মঘটের সম্ভাবনা কোনোভাবেই উড়িয়ে দেয়া যায় না; যদিও এটি শেষ অবলম্বন।"
টেসলার সিইও ইলন মাস্ক বিশ্বব্যাপী ১০ শতাংশ কর্মী ছাঁটাই করার পরিকল্পনা ঘোষণা করার পরেই জার্মান গিগাফ্যাক্টরির ১২ হাজার কর্মী তাদের কাজের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
এছাড়া গিগাফ্যাক্টরির বিরুদ্ধে গাছ কাটা এবং স্থানীয় জলের উৎসগুলোকে প্রভাবিত করার অভিযোগ রয়েছে। পরিবেশবাদীরা অনেকদিন থেকেই এর সমালোচনা করে আসছেন।
বেশ কিছুদিনের বিলম্বের পর গিগাফ্যাক্টরিতে ২০২২ সাল থেকে উৎপাদন শুরু হওয়ার পর থেকেই বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিচ্ছে। ফ্যাক্টিরিতে অবস্থিত প্ল্যান্টটি নিরাপত্তা সমস্যায় জর্জরিত হয়েছে বলে গত বছর জার্মান ম্যাগাজিন স্টার্ন প্রতিবেদন বের করেছিল।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, টেসলার কারখানায় স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি নিরাপত্তা সমস্যা দেখা গিয়েছে যা একই জাতীয় জার্মান অডি প্ল্যান্টের সমস্যার চেয়েও তিনগুণ বেশি। তবে টেসলা এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছে বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্স-এর একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল।
এ বছরের মার্চ মাসে অগ্নিসংযোগকারীরা গিগাফ্যাক্টরির প্ল্যান্টের কাছে একটি উচ্চ-ভোল্টেজ পাওয়ার মাস্টে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে ফ্যাক্টরি এবং আশেপাশের ৬০ হাজার বাসিন্দাকে বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় থাকতে হয়েছিল।
আগুন লাগার ঘটনায় মাস্ক নিজেই ফ্যাক্টরি পরিদর্শনে আসলেও নিখোঁজ মগের ঘটনাকে তিনি এত গুরুত্ব দিবেন কি না, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।