ট্রাম্পের মতো অতীতে যেসব মার্কিন প্রেসিডেন্ট ও প্রার্থীরা হামলার শিকার হয়েছিলেন
নির্বাচনী প্রচারকালে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যের পেনসিলভানিয়ায় এক সমাবেশে মঞ্চে বক্তব্য দেয়ার সময় আততায়ীর গুলি তার কান ছুঁয়ে যায়। তবে গুরুতর আহত হননি তিনি, এখন সুস্থ আছেন।
সমাবেশে বন্দুকধারীর হামলায় দেশটিতে রাজনৈতিক সহিংসতা নিয়ে উদ্বেগ বেড়েছে এবং প্রেসিডেন্ট ও প্রার্থীদের বিরুদ্ধে অতীতের হামলা ও হত্যা প্রচেষ্টা নিয়েও আলোচনা শুরু হয়েছে।
হামলায় তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য দেশটির সিক্রেট সার্ভিস ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন ট্রাম্প। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হামলার বর্ণনা দিয়েছেন তিনি।
এ ঘটনায় অন্তত একজন বন্দুকধারী ও প্রচারসভায় উপস্থিত একজন ব্যক্তি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে সিক্রেট সার্ভিস। এছাড়া আরও দুজন গুরুতর আহত হয়েছেন। সিবিএস পিটসবার্গ স্টেশন কেডিকেএ-কে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাটলার কাউন্টির ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি।
আইন প্রয়োগকারী সংস্থার দুটি সূত্র সিবিএস নিউজকে জানিয়েছে, সিক্রেট সার্ভিসের এক স্নাইপার বন্দুকধারীকে হত্যা করেছে। উপস্থিত আরও দুজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
অতীতে যেসব মার্কিন প্রেসিডেন্ট ও প্রার্থীদের ওপর হামলা হয়েছে
কংগ্রেশনাল রিসার্চ সার্ভিসের ২০০৮ সালের একটি প্রতিবেদন অনুসারে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সাবেক ও বর্তমান প্রেসিডেন্ট ও প্রেসিডেন্ট প্রার্থীদের ওপর ১৫ বার সরাসরি হামলার ঘটনা ঘটেছে, যার মধ্যে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে।
৪৫ জন প্রেসিডেন্টের মধ্যে ১৩ জন (প্রায় ২৯ শতাংশ) গুপ্তহত্যার চেষ্টার মুখোমুখি হয়েছেন। [এই সংখ্যায় ট্রাম্পের সাথে জড়িত সর্বশেষ ঘটনাটি অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি]
বিগত নয়জন প্রেসিডেন্টের মধ্যে অন্তত সাতজনই হামলা বা গুপ্তহত্যা চেষ্টার লক্ষ্যবস্তু হয়েছেন। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হামলা থেকে বেঁচে যাওয়া প্রেসিডেন্টদের মধ্যে রয়েছেন:
- জেরাল্ড আর ফোর্ড (১৯৭৫ সালে দুইবার)
- রোনাল্ড ডাব্লু রেগান (১৯৮১ সালে হামলা চালানো হয়)
- বিল ক্লিনটন (যখন ১৯৯৪ সালে হোয়াইট হাউসে গুলি চালানো হয়)
- জর্জ ডব্লিউ বুশ (২০০৫ সালে একজন হামলাকারী তার দিকে গ্রেনেড নিক্ষেপ করলেও সেটি বিস্ফোরিত হয়নি)
সিক্রেট সার্ভিসের বরাত দিয়ে সর্বশেষ প্রতিবেদনে সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, ট্রাম্প ও প্রেসিডেন্ট বাইডেনের ওপর হামলার চেষ্টার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে।
দায়িত্ব গ্রহণের আগে আরও দু'জন প্রেসিডেন্টের ওপর আক্রমণ করা হয়েছিল: ফ্রাঙ্কলিন ডি রুজভেল্ট ১৯৩৩ সালে প্রেসিডেন্ট-নির্বাচিত হিসেবে এবং থিওডোর রুজভেল্ট ১৯১২ সালে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে।
কংগ্রেশনাল রিসার্চ সার্ভিসের মতে, দুই প্রেসিডেন্ট প্রার্থী, রবার্ট এফ কেনেডি (১৯৬৮ সালে নিহত) এবং জর্জ সি ওয়ালেস (১৯৭২ সালে গুরুতরভাবে আহত) সরাসরি আক্রমণের শিকার হয়েছিলেন।
যেসব প্রেসিডেন্ট নিহত হয়েছেন
চারজন প্রেসিডেন্ট—আব্রাহাম লিংকন, জেমস এ গারফিল্ড, উইলিয়াম ম্যাককিনলি এবং জন এফ কেনেডিকে হত্যা করা হয়েছিল।
প্রতিবেদনে তালিকাভুক্ত ১৫টি হামলার মধ্যে কেবল প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন হত্যাকাণ্ডই একটি বিস্তৃত ষড়যন্ত্র হিসেবে প্রমাণিত হয়েছিল। লিংকন হত্যাকাণ্ড ছিল প্রমাণিত রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের একমাত্র ঘটনা।
আরেকটি হামলায় একাধিক ব্যক্তি জড়িত ছিল—১৯৫০ সালে ব্লেয়ার হাউসে হামলা, যেখানে প্রেসিডেন্ট হ্যারি এস ট্রুম্যান অস্থায়ীভাবে অবস্থান করছিলেন। তবে ওই মামলার তদন্ত বা প্রসিকিউশনে অন্য কোনো ষড়যন্ত্রকারীদের আলামত পাওয়া যায়নি।
প্রেসিডেন্ট বা প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীদের ওপর ১৮টি হামলা বা হত্যার চেষ্টার মধ্যে দুটি বাদে সবগুলোতেই আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহৃত হয়েছিল। ফোর্ডের বিরুদ্ধে দুটি আক্রমণ বাদে বাকি সবগুলো আক্রমণ পুরুষদের দ্বারা সংঘটিত হয়েছিল। এছাড়া ১৫টি হামলার মধ্যে একটি বাদে সবগুলোই ঘটেছে যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরে।
প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে প্রথম নথিভুক্ত হামলা
কংগ্রেশনাল রিসার্চ সার্ভিসের মতে, ১৮৩৫ সালে প্রথম কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্টের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। একজন আক্রমণকারী পিস্তল দিয়ে প্রেসিডেন্ট অ্যান্ড্রু জ্যাকসনের ওপর গুলি চালায়, তবে গুলিটি নিশানায় আঘাত হানতে ব্যর্থ হয়।
হামলাকারী রিচার্ড লরেন্সকে তখন পাগল ঘোষণা করা হয়। প্রতিবেদেন অনুযায়ী রিচার্ডের ভাষ্যে, 'প্রেসিডেন্ট তাকে বড় অঙ্কের টাকা পেতে বাধা দিচ্ছিল এবং দেশকে ধ্বংস করছিল'।
সূত্র: কংগ্রেশনাল রিসার্চ সার্ভিস, ২০০৮ ও ২০২৪
অনুবাদ: সাকাব নাহিয়ান শ্রাবন