রুশ ভূখন্ডের ৩০ কিমি অভ্যন্তরে প্রবেশ করেছে ইউক্রেনীয় সৈন্যরা, দাবি মস্কোর
রাশিয়ার অভ্যন্তরে ৩০ কিলোমিটার ভেতরে প্রবেশ করেছে ইউক্রেনীয় সেনারা, যেটি ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে রুশ ভূখণ্ডে ইউক্রেনীয় সেনাদের সবচেয়ে বড় অনুপ্রবেশ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, কুরস্ক অঞ্চলে আক্রমণ চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি তোলপিনো এবং ওবশচি কোলোদেজ গ্রামের কাছে ইউক্রেনীয় বাহিনীর সাথে ষষ্ঠ দিনের মতো সংঘর্ষ চলছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা কিয়েভকে "রাশিয়ার শান্তিপূর্ণ জনগণকে ভয় দেখানোর" দায়ে অভিযুক্ত করেছেন।
গত রাতে (১১ আগস্ট) তার ভাষণে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি হামলার কথা স্বীকার করে বলেন, রাশিয়া এই গ্রীষ্মে কুরস্ক থেকে ২ হাজার আন্তঃসীমান্ত আক্রমণ চালিয়েছে। তিনি আর্টিলারি, মর্টার, ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র হামলার কথা উল্লেখ করে বলেন, প্রতিটি হামলার যথাযথ প্রতিক্রিয়া দেখানো প্রয়োজন।
ইউক্রেনের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা এএফপিকে বলেছেন, হাজার হাজার সৈন্য এই অভিযানে জড়িত। তিনি বলেন, রুশ সীমান্ত রক্ষীরা প্রাথমিক প্রতিবেদন অল্প সংখ্যক ইউক্রেনীয় সৈন্যের রুশ ভূখন্ডে অনুপ্রবেশের কথা জানালেও অনুপ্রবেশকারী সৈন্যের সংখ্যা আরো বেশি।
যদিও ইউক্রেন সমর্থিত নাশকতাকারী গোষ্ঠীগুলো মাঝে মধ্যেই রুশ সীমান্ত অতিক্রম করেছে, কুরস্ক অঞ্চলে চলমান আক্রমণ কিয়েভের নিয়মিত সৈন্যদের রুশ ভূখণ্ডে চালানো বৃহত্তম সমন্বিত আক্রমণ।
জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, "আমরা আক্রমণাত্মক। আমাদের উদ্দেশ্য শত্রুদের অবস্থান প্রসারিত করা, সর্বাধিক ক্ষয়ক্ষতি করা এবং রাশিয়ার পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করা যেহেতু রুশরা নিজস্ব সীমান্ত রক্ষা করতে অক্ষম।"
রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় রোববার (১১ আগস্ট) জানিয়েছে, তাদের বাহিনী "সাঁজোয়া যান সহ শত্রুর ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে রুশ ভূখণ্ডের গভীরে প্রবেশের প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়েছে।"
ইউক্রেনীয় সৈন্যরা কুরস্ক সীমান্ত অঞ্চলের গভীরে অগ্রসর হয়েছে। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সীমান্ত থেকে প্রায় ২৫ থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে তোলপিনো এবং ওবশচি কোলোদেজের কাছে ইউক্রেনের সেনাদের সাথে সংঘর্ষের কথা জানিয়েছে। যাচাইকৃত একটি ভিডিও ফুটেজে সীমান্ত থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে লেভশিঙ্কার কাছে একটি রুশ হামলা দেখা গেছে।
ইউক্রেনীয় সৈন্যরা গুয়েভো সহ বেশ কয়েকটি বসতি দখল করার দাবি করেছে, যেখানে তারা একটি রুশ পতাকা নামিয়ে ফেলেছে। বিভিন্ন ফুটেজে দেখা গেছে, সভারডলিকোভো ও পোরোজে ভবন দখল করেছে ইউক্রেনীয় সৈন্যরা। সুদজাতে তীব্র লড়াইয়ের খবর পাওয়া গেছে এবং ইউক্রেনীয় সেনারা শহরের কাছে একটি বড় গ্যাস ফ্যাসিলিটিতে নিজেদের ছবি তুলেছে। কুরস্কের সীমান্তবর্তী সুমি অঞ্চলে বিবিসির সাংবাদিকরা ইউক্রেনীয় সাঁজোয়া যান রাশিয়ার দিকে অগ্রসর হতে দেখেছেন।
রাশিয়া কুরস্ক অঞ্চল থেকে ৭৬ হাজার মানুষকে সরিয়ে নিয়েছে এবং জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে। ভারপ্রাপ্ত গভর্নর আলেক্সেই স্মারনভ জানিয়েছেন, ইউক্রেনের একটি বিধ্বস্ত ক্ষেপণাস্ত্র কুরস্কের একটি ভবনে আঘাত করার পর ১৫ জন আহত হয়েছেন।
ইউক্রেনের এমপি ওলেক্সি গনচারেঙ্কো এই অভিযানের প্রশংসা করে বলেছেন, এটি ইউক্রেনকে শান্তির কাছাকাছি নিয়ে এসেছে।
কুরস্ক অঞ্চলের আক্রমণটি ইউক্রেনের জন্য পূর্বের রুশ অগ্রগতির মতোই ফলপ্রসূ হচ্ছে এবং কেউ কেউ বিশ্বাস করেন, এর লক্ষ্য রাশিয়াকে পূর্ব ইউক্রেন থেকে সৈন্য সরিয়ে নিতে বাধ্য করা। তবে জ্যেষ্ঠ ইউক্রেনীয় কর্মকর্তা এএফপি কে জানিয়েছেন, পূর্বাঞ্চলে রুশ হামলা এখনো অব্যাহত রয়েছে।
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এই আক্রমণকে "বড় উসকানি" বলে অভিহিত করেছেন।
জাপোরিঝিয়া ওব্লাস্টে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ইউক্রেনের গোলাগুলির কারণে আগুন লেগেছে বলে রাশিয়ান কর্মকর্তারা দাবি করেছেন।
তবে জাতিসংঘের পরমাণু পর্যবেক্ষণ সংস্থা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক-এর একটি পোস্টে জানিয়েছে, পারমাণবিক নিরাপত্তার ওপর কোনো প্রভাব পড়েনি।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্টে বলেছেন, রুশ বাহিনী প্ল্যান্টের আশেপাশের অঞ্চলে আগুন ধরিয়েছে।
২০২২ সাল থেকে প্ল্যান্টটি রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে বিদ্যুৎ উৎপাদন করেনি।