বিশ্ব অর্থনীতি ১৯২০-এর দশকের মতো সংকটে পড়েছে: ইউরোপীয়ান সেন্ট্রাল ব্যাংকের সভাপতি
ইউরোপীয়ান সেন্ট্রাল ব্যাংকের (ইসিবি) সভাপতি ক্রিস্টিন ল্যাগার্ড সতর্ক করে বলেছেন, বর্তমান বিশ্ব অর্থনীতি ১৯২০-এর দশকের মতো সংকটে পড়েছে; যা সেই সময় "অর্থনৈতিক জাতীয়তাবাদ" ও বিশ্ববাণিজ্যের পতনের দিকে নিয়ে গিয়েছিল।
তিনি শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) বলেন, "আমরা ১৯২০-এর দশকের পর থেকে সবচেয়ে খারাপ মহামারীর মুখোমুখি হয়েছি, ১৯৪০-এর দশকের পর থেকে ইউরোপে সবচেয়ে বাজে সংঘাত চলছে এবং ১৯৭০-এর দশকের পর থেকে সবচেয়ে ভয়াবহ শক্তির সংকটের মুখোমুখি হয়েছি।"
তিনি আরও বলেন, সরবরাহ শৃঙ্খল সমস্যাসহ অন্যান্য কারণগুলোও এই পরিবর্তনকে ত্বরান্বিত করেছে, যা ১৯২০-এর দশকের মহামন্দার (গ্রেট ডিপ্রেশন) মতো পরিস্থিতির সঙ্গে তুলনীয়।
ওয়াশিংটনে আইএমএফ-এ দেওয়া এক ভাষণে ক্রিস্টিন ল্যাগার্ড ১৯২০ ও ২০২০-এর দশকের মধ্যে কয়েকটি সাদৃশ্য তুলে ধরেন, বিশেষ করে বিশ্ব বাণিজ্যের বাধা ও প্রযুক্তিগত অগ্রগতির প্রসঙ্গ তিনি তুলে ধরেন।
১৯২০-এর দশকে সোনার মান অনুসরণের ফলে মুদ্রাস্ফীতি ও ব্যাংকিং সংকট দেখা দেয়, যা পরিস্থিতি আরও খারাপ করেছিল। তবে বর্তমান সময়ের নীতিনির্ধারকরা এসব কাঠামোগত পরিবর্তনের মোকাবিলায় অনেক ভালো অবস্থানে আছেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।
ক্রিস্টিন বলেন, এক শতাব্দী আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংকাররা কঠিনভাবে শিখেছিলেন, সোনার মানে মুদ্রার মান নির্ধারণ এবং স্থির বিনিময় হার– বড় কাঠামোগত পরিবর্তনের সময় কার্যকর ছিল না। এটি বিশ্বকে মুদ্রাস্ফীতির দিকে ঠেলে দেয় এবং অর্থনৈতিক জাতীয়তাবাদকে উৎসাহিত করে।
তিনি বলেন, "তবে আজকের কেন্দ্রীয় ব্যাংকারদের মূল্য স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য সরঞ্জামগুলো কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে।"
২০২২ সালে সুদের হার বাড়ানোর পর দ্রুত মুদ্রাস্ফীতি কমেছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। ইউরোজোনে বার্ষিক মুদ্রাস্ফীতি ২০২২ সালের ১০.৬ শতাংশ থেকে ২০২৩ সালের আগস্ট মাসে ২.২ শতাংশে নেমে আসে।
ক্রিস্টিন ল্যাগার্ড বলেন, এটি "অলৌকিক" যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো দুই বছরেরও কম সময়ের মধ্যে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পেরেছে এবং এর সাথে সাথে বেকারত্বের হার বাড়েনি।
তিনি বলেন, "উচ্চ জ্বালানি দামের প্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো সুদের হার বাড়ালে সাধারণত কর্মসংস্থানে বড় ধরনের অবনতি ঘটে। কিন্তু ২০২২ সালের শেষ থেকে ইউরোজোনে ২.৮ মিলিয়ন মানুষের কর্মসংস্থান বেড়েছে।"
তবে ইউরোপীয়ান সেন্ট্রাল ব্যাংকের সভাপতি সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, আত্মতুষ্টির কোনো সুযোগ নেই। তিনি বলেন, বৈশ্বিকীকরণের সম্ভবনাময় পতন, বৈশ্বিক সরবরাহ চেইনের আংশিক বিচ্ছিন্নতা, গুগলের মতো বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর বাজার ক্ষমতা এবং "কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দ্রুত উন্নয়ন"– সবকিছুই কেন্দ্রীয় ব্যাংকারদের জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে।
ক্রিস্টিন উল্লেখ করেন, অর্থনৈতিক নীতিনির্ধারকদের জন্য অনিশ্চয়তা "উচ্চ" থাকবে এবং বলেন, "আমাদের এটি ভালোভাবে পরিচালনা করতে হবে।"
তিনি জানান, ইউরোপীয়ান সেন্ট্রাল ব্যাংক আসন্ন কৌশল পর্যালোচনায় এই বিষয়গুলো নিয়ে বিস্তারিত তদন্ত করবে।
ইসিবির ২ শতাংশ মধ্যম-মেয়াদী মুদ্রাস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা পর্যালোচনা করা হবে না উল্লেখ করে ক্রিস্টিন ল্যাগার্ড বলেন, "আমরা অতীতে খুব কম ও খুব বেশি মুদ্রাস্ফীতির অভিজ্ঞতা থেকে কী শিখতে পারি, তা বিবেচনা করব।"
ইসিবি ঝুঁকির মূল্যায়ন এবং প্রকাশনার পদ্ধতি নিয়েও বিশ্লেষণ করবে। উদাহরণস্বরূপ, ইসিবির মৌলিক মুদ্রাস্ফীতি কৌশলকে "সঠিক তথ্যের সাথে ভারসাম্যযুক্ত" করা যেতে পারে এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিকল্প পরিস্থিতির তথ্যও প্রকাশ করতে পারে।