লেবাননে যুদ্ধবিরতি চুক্তির কাছাকাছি ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহ
ইসরায়েল ও লেবাননের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। মঙ্গলবার এ বিষয়ে আলোচনা করতে ইসরায়েলি মন্ত্রিসভার বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে বলে জানিয়েছেন ইসরায়েলি ও মার্কিন কর্মকর্তারা।
ইরান সমর্থিত হিজবুল্লাহর সঙ্গে লড়াই বন্ধে ৬০ দিনের একটি যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব বিবেচনাধীন রয়েছে।
বলা হচ্ছে, দক্ষিণ লেবানন থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর প্রত্যাহার এবং ওই এলাকায় হিজবুল্লাহর উপস্থিতি বন্ধের শর্ত অন্তর্ভুক্ত রয়েছে এ প্রস্তাবে।
মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র জন কিরবি বলেছেন, 'আমরা মনে করি, আমরা [যুদ্ধবিরতি চুক্তির] খুব কাছাকাছি পৌঁছে গেছি।' তবে তিনি সতর্ক করে এ-ও বলেন, 'আমরা এখনও সেখানে পৌঁছাইনি।'
যুক্তরাষ্ট্র ও লেবাননের দীর্ঘদিনের মিত্র ফ্রান্স এই যুদ্ধবিরতি চুক্তি বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
যদিও হিজবুল্লাহ ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি নিয়ে আলোচনার প্রক্রিয়ার মধ্যেই সংঘাত আরও তীব্র হয়েছে।
রোববার লেবানন থেকে ইসরায়েলের দিকে ২৫০টি রকেট ছোড়া হয়—যার বেশিরভাগই প্রতিহত করা হয়। অন্যদিকে ইসরায়েলি বিমান বাহিনী বৈরুতসহ লেবাননের বিভিন্ন স্থানে হামলা চালাচ্ছে।
একজন পশ্চিমা কূটনীতিক নাম না প্রকাশের শর্তে বিবিসিকে জানান, যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহর খালি করা এলাকায় লেবাননের সেনাবাহিনীর উপস্থিতি বাড়ানোর বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু 'নীতিগতভাবে' এই চুক্তিতে সম্মতি দিয়েছেন বলে জানা গেছে। এদিকে লেবাননের পার্লামেন্টের ডেপুটি স্পিকার ইলিয়াস বো সা'আব রয়টার্সকে বলেছেন, যুদ্ধবিরতি চুক্তি সম্পাদনে এখন আর 'বড় কোনো বাধা নেই'।
যুদ্ধবিরতির তদারকি নিয়ে যে জটিলতা ছিল, তা মিটে গেছে বলে জানান তিনি। এর জন্য ফ্রান্সসহ পাঁচ দেশের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে, যার নেতৃত্বে থাকবে যুক্তরাষ্ট্র।
ইসরায়েল দাবি করেছিল, যুদ্ধবিরতির সময় যদি হিজবুল্লাহ লেবাননের লিতানি নদীর দক্ষিণে ফিরে আসে বা আক্রমণের প্রস্তুতি নেয়, তবে তারা সামরিক পদক্ষেপ নিতে পারবে।
এই শর্ত হিজবুল্লাহ ও লেবানন সরকারের জন্য অস্বস্তিকর ছিল। তবে মার্কিন দূত আমোস হকস্টেইন দুই দেশে একাধিকবার সফর করে স্পষ্ট করেছেন যে এই চুক্তি হবে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য।
জাতিসংঘের অন্তর্বর্তীকালীন বাহিনী—ইউনিফিল ও লেবাননের সেনাবাহিনীর দুর্বলতার কারণে চুক্তি কার্যকর হওয়া নিয়ে উদ্বেগ থাকলেও এখন তা অনেকটাই কেটে গেছে।
তবে ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে চুক্তি নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে। কট্টর ডানপন্থী জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন গভির সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ চুক্তির বিরোধিতা করে একে 'গুরুতর ভুল' বলে আখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেন, হিজবুল্লাহ এখন দুর্বল অবস্থায় রয়েছে; তাই এখনই তাদেরকে ধ্বংস করার 'ঐতিহাসিক সুযোগ'।
গত বছরের ৮ অক্টোবর হামাসকে সমর্থন জানিয়ে হিজবুল্লাহ ইসরায়েলের দিকে রকেট নিক্ষেপ করলে এই সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি থেকে লেবাননে হামলা জোরদার করে ইসরায়েল।
হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে বড় ধরনের আক্রমণ চালিয়ে তাদের অনেক অবকাঠামো ধ্বংস করেছে ইসরায়েল, গুঁড়িয়ে দিয়েছে অস্ত্রের মজুত। হিজবুল্লাহপ্রধান হাসান নাসরুল্লাহসহ বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতাকেও হত্যা করেছে।
লেবানন কর্তৃপক্ষ বলেছে, যেকোনো যুদ্ধবিরতি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের রেজোল্যুশন ১৭০১-এর শর্তানুযায়ী হতে হবে। এ রেজোল্যুশনের মাধ্যমেই ২০০৬ সালে হিজবুল্লাহ ও ইসরায়েলের যুদ্ধ সমাপ্ত হয়েছিল।
এই রেজোল্যুশনে হিজবুল্লাহকে ইসরায়েলের সীমান্তের ৩০ কিলোমিটার দূরের লিতানি নদীর দক্ষিণ থেকে সরিয়ে নিতে বলা হয়েছিল।
তবে ইসরায়েলের দাবি, এই শর্ত কখনো পুরোপুরি মানা হয়নি। অন্যদিকে লেবাননের অভিযোগ, ইসরায়েল প্রায়ই তাদের আকাশসীমা লঙ্ঘন করে।
লেবানন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইসরায়েলের হামলায় গত অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত ৩ হাজার ৭৫০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত ও ১৫ হাজার ৬০০ জন আহত হয়েছে। বাড়ি ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছে এক মিলিয়নের বেশি মানুষ।
ইসরায়েলের পুলিশ জানিয়েছে, হিজবুল্লাহর রোববারের হামলায় বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে এবং উত্তর ও মধ্য ইসরায়েলের বিভিন্ন ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শনিবার বৈরুতে ইসরায়েলের হামলায় ২৯ জন নিহত হয়েছে, সোমবার প্রাণ হারিয়েছে আরও ৩১ জন। এর পরই এই হামলা চালিয়েছে হিজবুল্লাহ।