একীভূত হওয়ার আলোচনা চলছে হোন্ডা ও নিসানের
একীভূত হওয়ার বিষয়ে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে জাপানের গাড়ি প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান হোন্ডা ও নিসানের মধ্যে। মূলত চীনের বৈদ্যুতিক গাড়ি (ইভি) নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে লড়তেই এ আলোচনা হয়েছে বলে ধারণা করা হয়েছে। খবর বিবিসির।
চলতি বছরের মার্চে জাপানের এই দুই গাড়ি প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ইভি খাতে কৌশলগত অংশীদারত্ব গড়ার বিষয়ে একমত হয়েছে।
বিবিসির কাছে প্রতিষ্ঠান দুটি একই ধরনের বিবৃতি দিয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে, এই বছরের মার্চে ঘোষণা অনুসারে একে অপরের শক্তিকে কাজে লাগিয়ে হোন্ডা ও নিসান ভবিষ্যৎ সহযোগিতার বিভিন্ন সম্ভাবনা যাচাই করছে।
বিদ্যুৎচালিত গাড়ির চাহিদা বাড়তে থাকায় জ্বালানিচালিত গাড়িগুলোকে নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে।
হোন্ডা ও নিসান কেউই এ বিষয়টি অস্বীকার করেনি। তবে প্রতিষ্ঠান দুটি বলছে, কোনো পক্ষ থেকেই আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
আলোচনাগুলো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে এবং চুক্তি সম্পন্ন হবে কিনা তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। তবে যদি আরও কোনো তথ্য থাকে, তাহলে যথা সময়ে স্টেকহোল্ডারদের জানানো হবে।
জাপানি টিভি চ্যানেল টিবিএস-এর মতে, আগামী সপ্তাহের মধ্যেই দুটি প্রতিষ্ঠান আনুষ্ঠানিকভাবে বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারে।
এদিকে, ব্লুমবার্গের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, নিসানের কাছে আইফোন নির্মাতা ফক্সকন তার প্রতিষ্ঠানটির নিয়ন্ত্রণমূলক শেয়ার নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে। এ বিষয়ে নিসান মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। ফক্সকনও এ বিষয়ে বিবিসির মন্তব্যের অনুরোধে তাৎক্ষণিক সাড়া দেয়নি।
জাপানের দ্বিতীয় এবং তৃতীয় বৃহত্তম গাড়ি প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান হোন্ডা ও নিসানের মধ্যে সম্ভাব্য একীভূত হওয়া বিভিন্ন কারণে জটিল হতে পারে।
যেকোনো চুক্তি জাপানে তীব্র রাজনৈতিক পর্যালোচনার মুখোমুখি হতে পারে, কারণ এটি বড় আকারের কর্মী ছাঁটাইয়ের দিকে নিয়ে যেতে পারে। এছাড়া, নিসানকে হয়ত ফরাসি গাড়ি নির্মাতা রেনল্টের সঙ্গে তাদের বিদ্যমান জোট ভেঙে ফেলতে হতে পারে।
হোন্ডা ও নিসান মার্চ মাসে বৈদ্যুতিক গাড়ি (ইভি) ব্যবসায় সহযোগিতার সিদ্ধান্ত নেয় এবং আগস্টে তাদের সম্পর্ক আরও গভীর করে, ব্যাটারি ও অন্যান্য প্রযুক্তি নিয়ে একসঙ্গে কাজ করার জন্য তারা একটি চুক্তি করেছে।
তারা আগস্টে মিতসুবিশি মোটরসের সঙ্গেও একটি সমঝোতা চুক্তির ঘোষণা করে, যা বুদ্ধিমত্তা ও বিদ্যুতায়ন প্রযুক্তি নিয়ে আলোচনা চালানোর লক্ষ্যে করা হয়।
জাপানি সংবাদমাধ্যম নিক্কেই আরও জানিয়েছে, নিসান ও হোন্ডা ভবিষ্যতে এই সম্ভাব্য অংশীদারিত্বে মিতসুবিশিকেও যুক্ত করতে পারে। উল্লেখ্য, নিসান মিতসুবিশির সবচেয়ে বড় শেয়ারহোল্ডার।
এ খবর প্রকাশিত হওয়ার পর টোকিওর শেয়ারবাজারে নিসানের শেয়ারমূল্য ২০ শতাংশেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্যদিকে, হোন্ডার শেয়ারমূল্য ২ শতাংশ কমেছে এবং মিতসুবিশির শেয়ারমূল্য ১৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
অটোমোবাইল বিষয়ক গবেষণা সংস্থা এডমন্ডসের এক অ্যানালিস্ট জেসিকা ক্যাল্ডওয়েল এ বিষয়ে বলেন, "ছোট আকারের কিছু নির্মাতা টিকে থাকতে এবং সাফল্য অর্জন করতে পারবে, এমন ধারণা দিন দিন কঠিন হয়ে উঠছে, বিশেষ করে চীনের অতিরিক্ত নির্মাতারা যখন শক্তিশালী প্রতিযোগিতায় যুক্ত হয়েছে।"
তিনি আরও বলেন, "এটা শুধু টিকে থাকার জন্য নয় বরং ভবিষ্যতের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ জোগাড়ের জন্যও জরুরি।"
চীনে হোন্ডা এবং নিসান তাদের বাজার হারাচ্ছে। ২০২৩ সালের নভেম্বরে বৈশ্বিক ইভি বিক্রির প্রায় ৭০ শতাংশই চীনের বাজারে ছিল।
২০২৩ সালে হোন্ডা ও নিসানের সম্মিলিত বৈশ্বিক বিক্রি ছিল ৭.৪ মিলিয়ন গাড়ি। তবে তারা তুলনামূলক সস্তা ইভি নির্মাতা যেমন চীনের বিওয়াইডি-এর মতো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় হিমশিম খাচ্ছে। বিওয়াইডির তিনমাসের রাজস্ব অক্টোবরে প্রথমবারের মতো টেসলাকে ছাড়িয়ে গেছে।
জাপানি অনলাইন ট্রেডিং প্ল্যাটফর্ম মনেক্স গ্রুপের জেসপার কোল মন্তব্য করেন, এভাবে একীভূত হয়ে যাওয়ার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানগুলো কি প্রতিযোগিতায় টিকতে থাকতে পারবে।
তিনি বলেন, "এটি কি সত্যিই কেবল টাইটানিকের ডেকের চেয়ার পুনর্বিন্যাস করার মতো ব্যাপার, যেখানে হোন্ডা ও নিসানের কাছে এমন কোনো পণ্য বা প্রযুক্তি নেই যা বৈশ্বিক ভোক্তারা চায়?"
তিনি আরও বলেন, "এই দৃষ্টিকোণ থেকে, এটি হয়ত একটি ভালো উদ্যোগ, তবে এটি নতুন কোনো জাতীয় চ্যাম্পিয়ন তৈরি করছে না।"