বিশ্বকে শোকে স্তব্ধ করা ভয়ংকর ১০ বিমান দুর্ঘটনা
বিমানে যাতায়াত বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অনেকটা নিরাপদ। তবে দুর্ভাগ্যবশত তা বিধ্বস্ত হলে বেশ ভয়ংকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। দুর্ঘটনাতে তখন সকল যাত্রী মারা যাওয়ার খবরই বেশি পাওয়া যায়। ইতিহাসে এমনই কয়েকটি বিমান দুর্ঘটনা পুরো বিশ্বকে শোকে স্তব্ধ করেছিল।
আজ (রবিবার) দক্ষিণ কোরিয়ায় ১৮১ জন আরোহী নিয়ে ভয়াবহ এক বিমান দুর্ঘটনায় অন্তত ১৫১ জন নিহত হয়েছেন। স্থানীয় ইয়োনহ্যাপ সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে, বিমানটি দেশটির দক্ষিণ-পশ্চিমে মুয়ান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিধ্বস্ত হয়। এমন দুর্ঘটনায় পর বিমানে যাতায়াতে নিরাপত্তার বিষয়টি ফের আলোচিত হচ্ছে।
১। নেপালের বিমান দুর্ঘটনা
প্রাইভেট কোম্পানি ইয়েতি এয়ারলাইন্সের এটিআর ৭২ বিমানটি পর্যটন শহর পোখারায় অবতরণের পূর্বে গত বছরের ১৫ জানুয়ারি বিধ্বস্ত হয়। বিমানে থাকা সকল যাত্রী, ক্রুসহ ৭২ জনই নিহত হন। সরকারি তদন্ত অনুযায়ী, পাইলটের করা টেকনিকাল ভুলে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
২। মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট ১৭ বিধ্বস্ত
২০১৪ সালের ১৭ জুলাই ইউক্রেনে গুলির আঘাতে বিধ্বস্ত হয় মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট ১৭ বিমান। এতে বিমানে থাকা ২৯৮ জন যাত্রীই নিহত হন। দুই বছর আগে ডাচ কোর্ট এই দুর্ঘটনার পেছনে দুই রুশ নাগরিক ও একজন ইউক্রেনীয় নাগরিককে দোষী সাব্যস্ত করে এবং তাদেরকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করে।
৩। এয়ার ইন্ডিয়া ফ্লাইট ১৮২ বিধ্বস্ত
১৯৮৫ সালের ২৩ জুন ৩২৯ জন লোক নিয়ে এয়ার ইন্ডিয়ার একটি ফ্লাইট কানাডা থেকে লন্ডন যাচ্ছিলেন। বিমানে থাকা একটি বোমা বিস্ফোরণে সকলেরই মৃত্যু হয়। এদের মধ্যে ২৪ জন ভারতীয় আর বাকি ২৬৮ জনের বেশিরভাগই ভারতীয় বংশোদ্ভূত কানাডার নাগরিক। এই ঘটনায় সাগর থেকে মাত্র ১৩১ জনের মরদেহ উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছিল।
৪। এয়ার ফ্রান্স ফ্লাইট ৪৪৭ দুর্ঘটনা
২০০৯ সালের ১ জুন এয়ার ফ্রান্স ফ্লাইট ৪৪৭ বিমানটি ২২৮ জন আরোহী নিয়ে নিখোঁজ হয়। এটি ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরো থেকে প্যারিস যাওয়ার পথে আটলান্টিক মহাসাগরে নিরুদ্দেশ হয়ে যায়। ফরাসী বিমান দুর্ঘটনা তদন্ত সংস্থার পরিচালক পল-লুই আরস্লঁনিয়ঁ বলেছিলেন, "এএফ ৪৪৭ উধাও হওয়ার আগে ২৪টি স্বয়ংক্রিয় বেতার সংকেত পাঠিয়েছিল কোন কোন যান্ত্রিক অথবা বৈদ্যুতিক প্রণালি কাজ করছে না, সে ব্যাপারে৷ যেমন অটোপাইলট ব্যবস্থাও নাকি কাজ করছিল না৷ এখন বিমানের ক্রু নিজেরাই অটোপাইলট বন্ধ করে দিয়েছিল কি-না, তাও নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।"
৫। তুর্কিশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট ৯৮১ দুর্ঘটনা
১৯৭৪ সালের ৩ মার্চ তুর্কিশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট ৯৮১ ফ্রান্সে বিধ্বস্ত হয়। বিমানটির কার্গো দরজায় নকশার ত্রুটি থাকার কারণে দুর্ঘটনাটি ঘটে। তৎকালীন সময়ে এটি ছিল ইউরোপের এভিয়েশন ইতিহাসের সবচেয়ে মারাত্মক দুর্ঘটনা। এতে ৩৪৬ জন মৃত্যুবরণ করেন।
৬। জাপান এয়ারলাইন্স ফ্লাইট ১২৩ দুর্ঘটনা
১৯৮৫ সালের ১২ আগস্ট টোকিও থেকে ওসাকা যাওয়ার পথে জাপান এয়ানলাইন্স ফ্লাইট ১২৩ বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। এতে বিমানে থাকা ৫২৪ জন আরোহীর মধ্যে ৫২০ জনই নিহত হন। বোয়িং টেকনিশিয়ানদের ত্রুটিপূর্ণ রিপেয়ারের ফলে এই দুর্ঘটনাটি ঘটে বলে জানা যায়। যা কি-না নিহতের সংখ্যা বিবেচনায় আজ পর্যন্ত সবচেয়ে ভয়াবহ দুর্ঘটনা।
৭। ভারতের ছারখি দাদরিতে মুখোমুখি সংঘর্ষ
১৯৯৬ সালের ১২ ডিসেম্বর আকাশপথে বিমানের সবচেয়ে ভয়াবহ মুখোমুখি দুর্ঘটনা ঘটে ভারতের ছারখি দাদরি গ্রামে। দুই বিমানের সংঘর্ষে এতে প্রায় ৩৪৯ জন নিহত হয়। এরমধ্যে একটি ছিল সৌদিয়া ফ্লাইট ৭৬৩; যা দিল্লি থেকে সৌদি আরব যাচ্ছিল। অপরটি ছিল কাজাকিস্তান এয়ারলাইন্স ফ্লাইট ১৯০৭; যা চিমকেন্ট থেকে দিল্লীতে যাচ্ছিল।
৮। আমেরিকান এয়ানলাইন্স ফ্লাইট ১৯১ দুর্ঘটনা
১৯৭৯ সালে ২৫ মে আমেরিকান এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট ১৯১ শিকাগোতে বিধ্বস্ত হয়। উড্ডয়নের সময় বিমানের ইঞ্জিনে টেকনিকাল ত্রুটির কারণে দুর্ঘটনাটি এটি। তৎকালীন সময়ে এটিই ছিল মার্কিন ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনা; যাতে ২৭২ জন নিহত হয়।
৯। মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্স ৩৭০ দুর্ঘটনা
২০১৪ সালে মার্চের ৮ তারিখের ২৩৯ জন যাত্রী নিয়ে নিখোঁজ হয় মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট ৩৭০ বিমানটি। কুয়ালালামপুর থেকে চীনের বেইজিং যাওয়ার পথে মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্স-এর ফ্লাইট এমএইচ ৩৭০ নিখোঁজ হওয়ার প্রায় এক দশক হয়ে গেছে। রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হওয়া এই বিমানটিতে ২৩৯ জন আরোহী ছিলেন। তাদের মাঝে মাত্র ১২ জন ছিলেন ক্রু। বাকিরা সবাই যাত্রী এবং এই যাত্রীদের বেশিরভাগই ছিলেন চীনের।
হারিয়ে যাওয়ার পর বিমানটিকে খুঁজে পাওয়ার জন্য টানা কয়েক বছর নানা উদ্ধার অভিযান চালানো সত্ত্বেও শেষ পর্যন্ত বিমানটির ন্যূনতম হদিস পাওয়া যায়নি। ভারত মহাসাগরের এক লাখ বিশ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে তল্লাশি চালিয়েও নিখোঁজ বিমানের কোনও ধ্বংসাবশেষ পাওয়া যায়নি বলে ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে এটিকে খুঁজে পাওয়ার সম্ভাবনা ছেড়ে দিয়ে তল্লাশি বন্ধ করে দিয়েছিল তদন্তকারীরা।
১০। আলাস্কা এয়ারলাইন্সের দুর্ঘটনা
চলতি বছরের শুরুতে মাঝ আকাশে খসে পড়ে আলাস্কা এয়ালাইনসের বোয়িং কোম্পানির ৭৩৭ ম্যাক্স ৯ বিমানের একটি জানালা ও বাইরের কিছু অংশ। এমতাবস্থায় নিরাপত্তা ঝুঁকি বিবেচনায় বিমানটিকে জরুরি অবতরণ করানো হয়।
বিমানটিতে মোট ১৭৭ জন যাত্রী ও ক্রু ছিল। সৌভাগ্যবশত সকলেই বিমানটি থেকে নামতে পারলেও নিরাপত্তাজনিত শঙ্কার বিষয়টি আরও স্পষ্ট হচ্ছে।
অনুবাদ: মোঃ রাফিজ খান