সাজানো প্রার্থী! ব্যক্তিগত গাড়িচালকের স্ত্রীর কাছেই পুনর্নির্বাচনে হারলেন রাশিয়ান মেয়র
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2025/02/04/berezovsky-mayor.jpg)
রাশিয়া ব্রেজোভস্কি শহরের মেয়র মশাইয়ের কপালটাই মন্দ। নাহলে কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থার দেশে সরকারি দলের টিকেট থাকা সত্ত্বেও নির্বাচনে পরাজয়, ভাবাও কি যায়? অথচ তাই জুটেছে তাঁর কপালে।
মেয়র ইয়েভগেনি পিসটভ টানা চারবার জিতেছেন মেয়র নির্বাচন। এবারেও মনোনয়ন পান রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ইউনাইটেড রাশিয়া পার্টির। পঞ্চমবারের মতো তিনিি পুনর্নির্বাচিত হবেন– তা নিয়েও ছিলেন নিশ্চিত। যেন নির্বাচন স্রেফ আনুষ্ঠানিকতা। কিন্তু, কপালের ফেরে অপ্রত্যাশিত পরাজয় হয়েছে তাঁর। আর জিতেছেন কিনা তাঁরই ড্রাইভারের স্ত্রী ইউলিয়া মালাসকোভা।
স্থানীয় রাজনীতির পর্যবেক্ষকদের কাছেও বিষয়টা এক ধাক্কার মতো। কারণ ইউলিয়া জিতবেন কেউ ধারণাই করেননি। ইউলিয়া নিজেও সাংবাদিকদের বলেছিলেন, পিসটভের বিরুদ্ধে নির্বাচন করছেন স্রেফ ভোটের রাজনীতির অনুশীলনের জন্য। কিন্তু, যা অপ্রত্যাশিত ও অসম্ভব মনে হয়েছিল— তাই বাস্তবে রূপ নিয়েছে। এই অবস্থায়, পিসটভের জায়গায় যেন মেয়রের চেয়ারে তাঁকেই না বসতে হয়— সেজন্যই নানান দৌড়ঝাঁপে ব্যস্ত ইউলিয়া।
রাশিয়ার সেভেরদলোভিস্ক অঞ্চলের ইকাতেরিনবার্গ শহরের একটি উপশহর আসলে ব্রেজোভস্কি। রাশিয়ার অনেক ছোট শহরের মতো ব্রেজোভস্কিতেও সরাসরি জনতাঁর ভোটে মেয়র নির্বাচিত হন না। বরং বাছাই কমিটির দেওয়া প্রস্তাবিত প্রার্থীর তালিকা থেকে নির্বাচিত কাউন্সিলার বা ডেপুটিরা একজনকে মেয়র হিসেবে নির্বাচিত করে। এই ডেপুটিরা সাধারণত স্থানীয় ও আঞ্চলিক বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধি হয়ে থাকেন।
এই বছরের নির্বাচনের আগে ডেপুটিরা বাছাই কমিটিকে আরও বেশি প্রার্থীর নাম পাঠানোর নির্দেশ দেন। তবে শেষপর্যন্ত দুজনের নাম পাঠানো হয়। এদের একজন হলেন চারবারের মেয়র পিসটভ আর অন্যজন তাঁরই গাড়িচালকের স্ত্রী ইউলিয়া। অবশ্য ইউলিয়া বেশ করিৎকর্মা নারী, তিনি ব্রেজোভস্কি নগর প্রশাসনের বিনিয়োগ উন্নয়ন বিভাগেরও প্রধান।
ধারণা করা হচ্ছে, ডেপুটিদের কমিটি আরও প্রার্থীর নাম চাওয়ায়— ইউলিয়ার নাম পাঠানো হয়েছিল। যার পেছনে সায় ছিল পিসটভের। অর্থাৎ, ইউলিয়া আসলে ছিলেন সাজানো প্রার্থী। যার কাছে হারের কোনো ঝুঁকিও দেখেননি তিনি। কিন্তু, ভাগ্যের ফের ঠেকায় কার সাধ্য।
রাশিয়ান দৈনিক কমরসান্তের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সাম্প্রতিক স্থানীয় নির্বাচনের সময় ২৩ জন ডেপুটির মধ্যে ১৭ জনই ভোট দেন ইউলিয়া মালাকোভাকে। মাত্র ছয়জনের ভোট পান দুঁদে মেয়র পিসটভ। বর্তমান মেয়র অন্য কোনো প্রার্থীর নাম পাঠাতে বাগড়া দিচ্ছেন— এই উপলদ্ধি থেকেই ডেপুটিরা প্রতিশোধ নিতে ইউলিয়াকে ভোট দিয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। পিসটভ তাঁর বিরুদ্ধে অন্য প্রার্থীদের দাঁড়াতে দেন না বলেও অভিযোগ আছে।
এই যখন অবস্থা, তখন নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর বিজয়ী ইউলিয়ার চেয়ে বেশি বিস্মিত আর কেউই হননি। পিসটভের প্রতি আনুগত্যের কারণে শুরু করেন দায়িত্ব না নেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা। নিজের প্রার্থিতা প্রত্যাহারের উদ্যোগও নেন— কিন্তু কর্তৃপক্ষ তাঁকে জানায়, ফল ঘোষণা হয়ে গেছে, এবং তিনি জিতেওছেন। এখন আর তা করা যাবে না।
আর মাত্র দুই সপ্তাহ পরেই শপথ নিতে হবে বেচারি ইউলিয়াকে। কিন্তু, এমন কিছু করার কথাও ভাবছেন না তিনি। সেভেরদলোভিস্ক প্রাদেশিক সরকারের একটি সূত্রের বরাত দিয়ে কমরসান্ত পত্রিকা জানায়, ইউলিয়া মেয়রের দায়িত্ব নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। কারণ হিসেবে বলেছেন, তিনি বিবাদপূর্ণ পরিবেশে কাজ করতে চান না।
আগামী ১৫ দিনের মধ্যে ইউলিয়া মেয়র হিসেবে শপথ না নিলে– নতুন করে অনুষ্ঠিত হবে আঞ্চলিক নির্বাচন। তবে ইয়েভগেনি পিসটভের ভাগ্যে তাতেও পুনর্নির্বাচিত হওয়ার শিকে ছিড়বে কিনা— তা নিয়ে সন্দেহ পোষণ করে রাশিয়ার রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। কারণ, প্রথমদফায় তাঁর যে শোচনীয় পরাজয় জয়েছে— তাতেই তাঁর বিরুদ্ধে ডেপুটিদের বিরোধিতা স্পষ্ট হয়েছে।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানী আলেক্সান্ডার বেলুসভের মতে, 'মেয়রকে আঞ্চলিক কর্তৃপক্ষ সমর্থন করে বলেই তাঁর রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে ধস নামবে না– এই ধারণা অবাস্তব। কারণ দুর্বল মেয়র কেউই চায় না।'