সাইপ্রাসের স্বপ্ন নিয়ে ঘর ছেড়ে যশোরের জাফর এখন ইউক্রেনের রণাঙ্গনে! দেশে ফেরার আকুতি
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2025/02/07/476098625_1422368218737302_1152058655143217742_n.png)
সাইপ্রাসে যাওয়ার স্বপ্ন নিয়ে ঘর ছেড়ে রাশিয়ায় গিয়ে যুদ্ধ করতে হচ্ছে যশোরের যুবক জাফর হোসেনকে। পাচারের শিকার হয়ে তাকে এ কঠিন পরিণতি ভোগ করতে হচ্ছে।
ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে বাধ্য হওয়া জাফর হোসেন যশোর সদর উপজেলার চাঁচড়া ইউনিয়নের সরদারপাড়ার খায়রুল সরদারের ছেলে। সম্প্রতি মুঠোফোনে পরিবারকে পাচারের ঘটনা ও তার বর্তমান অবস্থার কথা জানিয়েছেন জাফর।
যুদ্ধের ময়দানে মৃত্যুর আতঙ্কে তিনি এখন বাড়ি ফেরার আকুতি জানাচ্ছেন। বাড়িতে তার দুই শিশু ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে।
এদিকে, জাফরের এ পরিণতিতে আতঙ্ক ও দুশ্চিন্তায় ভেঙে পড়েছেন তার পিতা খায়রুল সরদার, মা হাসিনা খাতুন এবং স্ত্রী খাদিজা খাতুন।
খায়রুল সরদার জানিয়েছেন, পাঁচ মাস আগে ঢাকার একটি এজেন্সির মাধ্যমে সাইপ্রাসে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাড়ি ছাড়েন জাফর হোসেন। এ জন্য তাকে দিতে হয়েছিল নয় লাখ টাকা।
কিন্তু প্রতারণা করে দালালচক্র প্রথমে তাকে সৌদি আরবে নিয়ে যায়। সেখানে থাকতে হয় দুই মাস। এরপর দুবাই নিয়ে গিয়ে সেখানে তাকে বিক্রি করে দেয়।
শেষ পর্যন্ত জাফরের ঠাঁই হয় রাশিয়া। ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া এটির প্রতিবেশী ইউক্রেনে আক্রমণ করে। এরপর থেকে দুই দেশের মধ্যে এখনো যুদ্ধ চলছে।
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/very_big_1/public/images/2025/02/07/jashore_rusia_trafficking_jafor_photo.jpeg)
'রাশিয়ায় পৌঁছানোর পর প্রথমে তাকে আর্মিদের কাপড় পরিস্কার করতে হবে বলা হয়। পরে আসল সত্য জানা যায় — তাকে যুদ্ধের প্রশিক্ষণ দিয়ে যুদ্ধে পাঠানো হবে,' বলেন খায়রুল।
তিনি আরও জানান, এখন তার ছেলে কান্নাকাটি করছেন। জাফর জানিয়েছে, যুদ্ধ করতে গিয়ে বাংলাদেশিদের একজন মারা গেছেন ও একজন আহত হয়েছেন।
'আমার ছেলে এখন বাংলাদেশে ফিরে আসতে চাইছে; না হলে তার মৃত্যু হবে বলে জানিয়েছে,' খায়রুল সরদার সরকারের কাছে জাফরকে ফিরিয়ে আনার আকুতি জানান এভাবে।
এদিকে স্বামীর চিন্তায় কাঁদছেন জাফরের স্ত্রী খাদিজা খাতুন।
তিনি বলেন, "আমার স্বামী অনেক কষ্টে আছে। আমার স্বামীকে ফিরে পেতে চাই আমি। কয়েকদিন আগে আমার সঙ্গে কথা হয়েছে, তিনি বলেছিলেন, 'আমার সন্তান দুটোর তুমি দেখে রেখো।'"
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/very_big_1/public/images/2025/02/07/jashore_rusia_trafficking_jafor_photo-1.jpeg)
পাচারের শিকার জাফরের পিতা-মাতার অভিযোগ, মামাতো ভাই মাহাবুবুর রহমানের মাধ্যমে ঢাকার একটি এজেন্সির সঙ্গে যোগাযোগ হয় তাদের।
তবে মাহাবুবুর রহমান অস্বীকার করে বলেন, জাফরের বিদেশ যাওয়ায় তার মাধ্যমে এজেন্সির সঙ্গে কোনো যোগাযোগ ছিল।
'ঢাকার হাজি ক্যাম্প এলাকার তামান্না নামক এক মহিলার সঙ্গে যোগাযোগ করে বনানির ৪ নম্বর রোডের হাসান এজেন্সির মাধ্যমে জাফর বিদেশে যায়,' দাবি করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, 'এজেন্সিতে প্রথমে জাফরের পাসপোর্ট জমা দেওয়া হয় সাইপ্রাসে যাওয়ার জন্য। সাইপ্রাসের ভিসা না হওয়ার কারণে, দুই বছর পর বলে রাশিয়ায় পাঠাবে।
আমরা বলি, রাশিয়া যুদ্ধের দেশ – ওই জায়গায় তো নিরাপত্তা নেই। তবে তারা [এজেন্সি] নিরাপদ দাবি করে বলে, সেখানে ক্লিনারের কাজ করবে, যুদ্ধের কাহিনী তারা দেখতে পারবে না, জানবেও না।'
মাহাবুবুর রহমান জানান, জাফরের দেশে ফিরিয়ে আনতে তার পরিবারের পক্ষ থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দফতরে আবেদন করা হয়েছে।