পোকরোভস্কের অনিচ্ছুক বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়ার শেষ চেষ্টা করছে ইউক্রেন পুলিশ
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2025/02/04/cnemaiez7jjnloendxtwtej7eq-ezgif.com-avif-to-jpg-converter.jpg)
যুদ্ধবিধ্বস্ত পূর্ব ইউক্রেনের শহর পোকরোভস্কের অনিচ্ছুক বাসিন্দাদের শহরটি থেকে সরিয়ে নেওয়ার শেষ চেষ্টা করছে পুলিশ। তারা বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে চলে যেতে অনুরোধ করছে।
তবে পুলিশের শত সতর্কবার্তা ও অনুরোধের পরও কিছু বাসিন্দা তাদের বাড়ি ছেড়ে যেতে রাজি হচ্ছেন না।
যেমন ইউক্রেন পুলিশের 'হোয়াইট অ্যাঞ্জেল ইউনিটের কর্মকর্তা [এই ইউনিটের সদস্যরা ফ্রন্টলাইনের শহর ও গ্রামগুলো থেকে বাসিন্দাদের উদ্ধার করে] হেনাদিই ইউদিনের অনুরোধ উপেক্ষা করে শহরটির বাসিন্দা প্রবীণ দম্পতি লিওনিদ ও এলেনা যুদ্ধ-বিধ্বস্ত শহরটি ছেড়ে যেতে অস্বীকৃতি জানান।
বাধ্য হয়ে তখন এই পুলিশ কর্মকর্তা অন্য একটি কৌশল গ্রহণ করেন: তিনি ওই দম্পতির নাতি-নাতনিদের ফোন করে অনুরোধ জানান।
ভিডিওকলে তাদের শহরটির পরিস্থিতি দেখিয়ে তিনি বলেন, 'আপনারা তাদের বলুন, তারা যেন এখান থেকে চলে যান। আমরা এখানে দাঁড়িয়ে আছি, আমরা শুধু তাদের জন্য এখানে এসেছি।'
এর কিছুক্ষণ পর লিওনিদ ও এলেনা হাসিমুখে একটি সুরক্ষিত ভ্যানে হাসিমুখে পোকরোভস্ক থেকে চলে যান।
আরেক বাসিন্দা হালিনা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বেঁচে যাওয়া তার ৯০ বছর বয়সী খালাকে উদ্ধারের জন্য ইউদিনের দলকে ডেকেছিলেন। মোটা ওভারকোট আর উজ্জ্বল গোলাপি রঙের হেডস্কার্ফে মোড়া ওই নারী তার অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিংয়ের ফাটল ধরা সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে এলেন।
হালিনা বলেন, 'আমরা ভেবেছিলাম পরিস্থিতি ভালোর দিকে মোড় নেবে, কিন্তু তা হচ্ছে না।'
কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ শহরটিতে আক্রমণের জন্য প্রস্তুত রুশ বাহিনী।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ প্রায় তিন বছরের কাছাকাছি পৌঁছেছে। যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই শহরটি রাশিয়ার আর্টিলারি, বিমান ও ড্রোন হামলার ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। এরপরও অনেক বাসিন্দা শহরটি ছেড়ে নিরাপদ অঞ্চলে যেতে রাজি হচ্ছেন না।
ইউদিনের হোয়াইট অ্যাঞ্জেল এখনও বাসিন্দাদের নিরাপদ অঞ্চলে যেতে রাজি করতে হিমশিম খাচ্ছে।
গত সপ্তাহে আঞ্চলিক কর্মকর্তারা জানান, যুদ্ধ শুরুর আগে শহরটির জনসংখ্যা ছিল ৬০ হাজার। বর্তমানে শহরটির মাত্র সাত হাজার মানুষ জীবিত আছেন।
ইউদিন বলেন, 'যতবার আমরা এখানে আসি, আগের চেয়ে আরও বেশি খারাপ লাগে।'
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2025/02/04/rdb6rtev65ou7ferereqchqptu-ezgif.com-avif-to-jpg-converter.jpg)
তিনি তার দল নিয়ে বাসিন্দাদের প্রাণ বাঁচানোর জন্যই শহর ছেড়ে যেতে বলেন, তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাদের তাড়িয়ে দেওয়া হয়।
তিনি জানান, সেদিন এক নারী তার অ্যাপার্টমেন্টের ভিতর থেকে বলেছিলেন যে আমি আপনাদের অনুরোধ করছি, দয়া করে চলে যান। আমরা কোথাও যাব না।
কারণ হিসেবে ওই নারী জানান, তিনি তার বিড়ালকে ছেড়ে কোথাও যেতে চান না।
অনিচ্ছুক বাসিন্দারা শহর ছেড়ে না যাওয়ার কারণ হিসেবে সাধারণত তাদের বয়স, ভঙ্গুর স্বাস্থ্য বা অপরিচিত নতুন অঞ্চলে চলে যাওয়ার অনিশ্চয়তা প্রভৃতি উল্লেখ করেন।
রুশ বাহিনী শহরের কেন্দ্র থেকে মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরে রয়েছে এবং ইউক্রেনীয় কমান্ডাররা শহরটির চারপাশে মুহূর্মুহূ পদাতিক হামলার খবর জানাচ্ছেন।
রুশ বাহিনী যদি শহরটি দখল করে নিতে পারে, তবে তা পূর্ব ইউক্রেনে অবস্থানরত ইউক্রেনীয় বাহিনীর সরবরাহ লাইনের জন্য আরও বড় বিপদ হয়ে দাঁড়াবে। পোকরোভস্ক শহরের মধ্য দিয়ে রুশ বাহিনী পার্শ্ববর্তী দনিপ্রোপেট্রোভস্ক অঞ্চলের দিকে পশ্চিমে ধীরে ধীরে অগ্রসর হওয়ার সুযোগ পাবে।
দনেস্ক অঞ্চলের অবস্থিত পোকরোভস্ক একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও রেল সংযোগ কেন্দ্র। এটি ইউক্রেনের ফ্রন্টলাইনের বিশাল অংশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সরবরাহ কেন্দ্র। তবে গত কয়েক মাসে রাশিয়ার আর্টিলারি ও ড্রোন হামলার হুমকির কারণে এর ব্যবহার সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে।
ওয়াশিংটনে কার্নেগি এন্ডাউমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিসের সিনিয়র ফেলো মাইকেল কোফম্যান বলেন, পোকরোভস্কের ট্রানজিট রুটগুলো এমন এক অবস্থানে রয়েছে, যদি শহরটি পতিত হয় তাহলে রুশ বাহিনী এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে উত্তর বা পশ্চিমে আক্রমণ জোরদার করতে পারবে।
তিনি বলেন, 'এর ফলে রুশ বাহিনী দনিপ্রোপেট্রোভস্ক অঞ্চলের দিকে অগ্রসর হওয়ারওে সুযোগ পাবে..তাই ফ্রন্টলাইনের পেছনে তারা রেললাইন তৈরি করছে।'
তিনি আরও বলেন, 'এরপর তারা নিজেদের লজিস্টিক্স এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে। এর ফলে তাদের আরও পশ্চিমে অগ্রসর হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হবে।'
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প উভয় পক্ষকে শান্তি চুক্তিতে পৌঁছানোর জন্য চাপ দিচ্ছেন। এসময় মস্কো এই অঞ্চলের একটি অংশ দখল করে নিতে পারলে, ভবিষ্যতে আলোচনায় রাশিয়ার অবস্থান শক্তিশালী হতে পারে।