কসমেটিকস পণ্যে বড় বিনিয়োগ ওয়ালটনের প্রতিষ্ঠাতা এমডির
বড় বিনিয়োগ নিয়ে কনজিউমার কেয়ার ইন্ডাস্ট্রিতে প্রবেশ করতে যাচ্ছেন ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজের প্রতিষ্ঠাতা ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এম আশরাফুল আলম।
৪০টি ব্যান্ডের কালার কসমেটিকস, স্কিন কেয়ার, হোম কেয়ার ও পারসোনাল কেয়ারের প্রায় ৪০০ থেকে ৫০০ পণ্য উৎপাদনের লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্রের রিমার্ক এলএলসি এর এশিয়ায় অধিভুক্ত অংশীদার হিসাবে রিমার্ক এইচ বি নামের কোম্পানিও গঠন করেছেন তিনি।
যদিও নতুন এ ভেঞ্চারে ওয়ালটনের কোনো বিনিয়োগ নেই বলে জানিয়েছেন ওয়ালটন গ্রুপের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা।
তিনি বলেন, এটি ওয়ালটনের সাবেক এমডি ও বর্তমান পরিচালক আশরাফুল আলমের সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত উদ্যোগ রিমার্ক।
"তাই আমরা আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করতে পারছি না," বলেন তিনি।
অন্যদিকে বারবার ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি আশরাফুল আলমকে।
বিনিয়োগের পরিমাণ নিয়ে উদ্যোক্তাদের কেউ কথা না বললেও প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগে কসমেটিকস ইন্ডাস্ট্রির পাশাপাশি স্কিন গবেষণা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হবে বলে জানিয়েছেন রিমার্কের কর্মকর্তারা। মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ায় ১০০ একর জমির ওপর নির্মিতব্য এ কারখানাটি দেশে স্কিন কেয়ার খাতে প্রথম বড় বিনিয়োগ বলেও দাবি করেন তারা।
রিমার্কের কর্মকর্তারা বলছেন, ওয়ালটন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন আশরাফুল আলম। ওয়ালটনের মতোই আরেকটি ব্র্যান্ড তৈরি করতে নতুন এ ভেঞ্চারে নেমেছেন তিনি। বিশ্বমানের মানসম্মত কসমেটিকস পণ্য বাংলাদেশে উৎপাদন করে দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারের চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানিও একটি বড় লক্ষ্য তাদের।
তারা বলছেন ধীরে ধীরে ২ হাজার কোটি টাকার মতো বিনিয়োগ হবে। এখানে সরাসরি কর্মসংস্থানের সুযোগ পাবে প্রায় ১৫ হাজার কর্মী।
রিমার্ক এইচ বি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আশরাফুল আম্বিয়া বলেন, "দেশে দ্রুত শিল্পায়ন ও নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়নের যে লক্ষ্য সরকার নিয়েছে তা বাস্তবায়ন করা আমাদেরও লক্ষ্য।"
তিনি বলেন, "আমরা পরিবেশবান্ধব গ্রিন ইন্ডাস্ট্রি স্থাপন করবো। পরিবেশ অধিদপ্তর, ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় প্রশাসনের কাছ থেকে ছাড়পত্র পেযেছি।"
রিমার্ক বলছে, তাদের ফেস প্রাইমার থেকে শুরু করে শ্যাম্পু পর্যন্ত নানা রকমের পণ্য মানুষের দৈনন্দিন জীবনকে সহজ করে তুলবে। রিমার্ক ভোক্তাদের চাহিদা মেটানোর জন্য যত্ন সহকারে তৈরি পণ্যগুলোর পাশাপাশি সৌন্দর্যের ধারণার বিষয়ে একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনার প্রতিশ্রুতি দেয়।
রিমার্ক টিমের একজন সদস্য বলেন, "আমরা বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন বাজারকে টার্গেট করার পরিকল্পনা করছি। ভৌগলিক দৃষ্টিকোণ থেকেই আমাদের পণ্য তৈরি করা নিয়ে কাজ করছি। আমাদের গ্লোবাল আর অ্যান্ড ডি টিমগুলি এমন পণ্য তৈরির দিকে মনোনিবেশ করছে যা বিশ্বের প্রায় সবধরনের জলবায়ুতেই ব্যবহার করা যাবে।"
রিমার্ক বাংলাদেশ সূত্র জানিয়েছে, রিমার্ক এলএলসি, ইউএসএ এর এফিলিয়েটেড সংস্থা হিসেবে আন্তর্জাতিক মানের পণ্য উৎপাদনের লক্ষ্যে, ইউরোপ আমেরিকার স্বনামধন্য প্রোডাক্ট রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট সংস্থায় আর এন ডি বা গবেষণায় বিপুল পরিমাণে অর্থ বিনিয়োগ করছে রিমার্ক এইচ বি লিমিটেড ।
স্টেকহোল্ডাররা বলেছেন, এই শিল্পের বাজারের আকার প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলার। এমনকি ১২.৫ শতাংশ চক্রবৃদ্ধি বার্ষিক হারে (সিএজিআর) এটি আরো বড় হচ্ছে।
লাইট ক্যাসেল পার্টনারস এবং অ্যালাইড মার্কেট রিসার্চের মতো গবেষণা সংস্থাগুলোর ভাষ্যমতে, বাংলাদেশের স্কিন কেয়ার বা পারসোনাল কেয়ার শিল্পের আনুমানিক বাজারের আকার ২০২০ সালে ছিল ১.২৩ বিলিয়ন ডলার। ২০২৭ সালের মধ্যে এর আকার ২.১২ বিলিয়নে পৌঁছাবে বলে আশা করছে তারা।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ২০২১ থেকে ২০২৭ সাল পর্যন্ত ৮.১ শতাংশ হারে এই শিল্প বৃদ্ধি পাবে।
তবে, ত্বকের জন্য ক্ষতিকর কতিপয় নকল পণ্য এ খাতের প্রবৃদ্ধির জন্য প্রধান হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ইন্ডাস্ট্রির অভ্যন্তরীণ সূত্র জানায়, বর্তমানে বাজারে ইউনিলিভার বাংলাদেশ, কোহিনূর, স্কয়ার, কেয়া, মৌসুমী ইন্ডাস্ট্রিজ, ম্যারিকো, রেকিট বেনকিজার বাংলাদেশ, ডাবর এবং ডেল্টা গ্রুপের মতো কিছু বড় প্রতিষ্ঠানের আধিপত্য রয়েছে। স্থানীয় পণ্যের বাজারের ৯৫ শতাংশেরও বেশি শেয়ার এই কোম্পানিগুলোর।
রিমার্ক এইচ বি লিমিটেডের হেড অব কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স শরীফ মোহাম্মদ আলী সুমন জানান, প্রতি বছর দেশে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার কসমেটিকস পণ্য আমদানি হয়। রিমার্কের এই উদ্যোগের ফলে আমদানি নির্ভর এই শিল্পটি একটি রপ্তানিযোগ্য শিল্প খাতে রূপান্তরিত হবে।
কোম্পানিটির একাধিক সূত্র বলছে, কসমেটিক পণ্যের পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব প্যাকেজিং কম্পোন্যান্ট নিয়েও প্রতিষ্ঠানটি গবেষণা করছে।