বরিস জনসনের পদত্যাগ: এর পর কী ঘটবে?
কনজারভেটিভ দলের প্রধান হিসেবে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন বরিস জনসন। বৃহস্পতিবার (৭ জুলাই) ডাউনিং স্ট্রিটের কার্যালয়ে এ ঘোষণা দেন তিনি। পার্লামেন্ট সংখ্যাগরিষ্ঠ দলটির পরবর্তী নেতা নির্বাচিত হলেই, প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে নিজের সরে দাঁড়ানোর কথাও জানিয়েছেন জনসন।
২০১৯ সালের নির্বাচনে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতায় জয় পায় কনজারভেটিভ দল। তবুও ক্ষমতাগ্রহণের তিন বছরেরও কম সময়ে প্রধানমন্ত্রীত্ব ছাড়তেই হচ্ছে জনসনকে।
নিয়ম অনুসারে, যুক্তরাজ্যের বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী তার পরবর্তী উত্তরসূরি নির্ধারিত না হওয়া পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকেন, জনসনও থাকবেন। তবে কীভাবে তার উত্তরসূরি নির্বাচিত হবে- তার ওপর নির্ভর করছে তিনি আর কতদিন দায়িত্ব পালন করবেন।
বিবিসি সূত্রে টিবিএসের পাঠকদের জন্য সেই প্রক্রিয়া তুলে ধরা হলো-
কনজারভেটিভ (টোরি) দল যেভাবে নতুন নেতা নির্বাচন করে?
দলের প্রধান পদত্যাগ করা মাত্রই, দলীয় সংবিধান অনুসারে নতুন নেতা নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু হয়। এ নির্বাচনে কাউকে প্রার্থী হতে হলে অন্তত আটজন দলীয় আইনপ্রণেতার সমর্থন দরকার হয়।
এরপর প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হয়। দুইয়ের অধিক প্রার্থী থাকলে- যতক্ষণ পর্যন্ত শুধু দুইজন প্রার্থীই অবশিষ্ট না থাকে- ততক্ষণ ভোটাভুটির মাধ্যমে অন্যদের বাতিল করতে থাকেন টোরি এমপিরা।
ভোটাভুটির প্রথম রাউন্ডে প্রার্থীতা ধরে রাখতে হলে প্রার্থীদের কমপক্ষে ৫ শতাংশ দলীয় এমপির ভোট পেতে হয়। দ্বিতীয় রাউন্ডে পেতে হয় অন্তত ১০ শতাংশ। এরপরের রাউন্ডগুলোয় যে প্রার্থী সবচেয়ে কম ভোট পান- তিনি বাদ পড়েন।
এভাবে যখন মাত্র দুইজন প্রার্থী অবশিষ্ট থাকেন- তখন এমপি-সহ টোরি দলের সকল সদস্য চূড়ান্ত বিজয়ীকে নির্বাচনে ভোটদান করে।
প্রতি দফা ভোটের সময় নির্ধারণ করে কনজারভেটিভ দলের কমিটি অব ব্যাকবেঞ্চ এর সদস্য আইনপ্রণেতারা। ভোটাভুটির আগে তার বিধিমালাও পরিবর্তনের ক্ষমতা রয়েছে এ কমিটির।
পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী কীভাবে নিয়োগ পাবেন?
পার্লামেন্টে কনজারভেটিভ দলের সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় দলটির নতুন নির্বাচিত নেতাই হবেন পরবর্তী ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী।
এরপর রানি তাকে সরকার গঠনের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে বলবেন।
যুক্তরাজ্যে কী সাধারণ নির্বাচন হবে?
দেশটিতে প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করলেই সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের চল নেই। সাধারণ নির্বাচনের তারিখ নির্ধারিত আছে ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে। তবে নতুন প্রধানমন্ত্রী চাইলে আগাম নির্বাচনের ডাক দিতে পারেন।
বরিস জনসন আর কতদিন ক্ষমতায় থাকবেন?
দলের নতুন নেতা নির্বাচনের আগপর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী থাকবেন তিনি। অর্থাৎ, কনজারভেটিভ দল তার উত্তরসূরি নির্বাচনের সময় তিনি ক্ষমতায় থাকবেন। তার পূর্বসূরী থেরেসা মে ও ডেভিড ক্যামেরুনও এ প্রক্রিয়ার সময় প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন।
জনসন কী দ্রুত বিদায় হবেন?
উত্তরসূরি নির্বাচনের আগেই জনসনকে পদত্যাগের আহ্বান জানিয়েছেন তার সমালোচনাকারীরা।
লেবার দলের নেতা স্যার কেইর স্ট্র্যামার বলেছেন, এই মুহূর্তে তাকে ক্ষমতা থেকে না সরানো হলে তিনি পার্লামেন্টে অনাস্থা ভোটের প্রস্তাব তুলবেন।
অনাস্থা ভোটে সব দলের আইনপ্রণেতা ভোটাভুটিতে অংশ নেন। মাত্র এক ভোটের ব্যবধানেও এতে জয়-পরাজয় নির্ধারিত হয়। তবে অনাস্থা ভোটের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীকে অপসারণ করতে হলে অধিকাংশ কনজারভেটিভ আইনপ্রণেতাকে তাদের নিজের সরকারের বিরুদ্ধে ভোট দিতে হবে, যা ঘটার সম্ভাবনা খুবই কম।
পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী যারা হতে পারেন?
এই মুহূর্তে জনসনের স্থলাভিষিক্ত কে হচ্ছেন তা নিশ্চিতভাবে জানা যাচ্ছে না। তবে কয়েকজন প্রার্থীর সম্ভাবনা খুবই বেশি বলে উল্লেখ করেছে বিবিসি। এরা হলেন-
#সাবেক মন্ত্রী জেরেমি হান্ট ও সাজিদ জাভিদ এর আগে দলীয় নেতৃত্বের জন্যে প্রার্থীতা করেছেন। এবারও তারা এগিয়ে আসতে পারেন।
#সাবেক আন্তঃসরকার বিষয়ক মন্ত্রী মাইকেল গোভ
#আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিষয়ক মন্ত্রী পেনি মরডন্ট
# সাবেক অর্থমন্ত্রী ঋষি সুনাক
# বৈদেশিক সম্পর্ক বিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান টম টুগেনডাট
# প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেন ওয়ালেস
# অর্থমন্ত্রী নাদিম জাহাভি
- সূত্র: বিবিসি