আবেনোমিক্সের জন্য স্মরণীয় হয়ে থাকবেন শিনজো!
গত শুক্রবার জাপানের পশ্চিমা কানসাই অঞ্চলের নারা শহরে বক্তব্য দেওয়ার সময় পেছন থেকে দু'বার গুলি করা হয় ৬৭ বছর বয়সী শিনজো আবেকে। জাপানের ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘসময়ের জন্য প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।
গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর হেলিকপ্টারে করে হাসপাতালে নেওয়া হয় তাকে। তার অবস্থা সংকটাপন্ন ছিল। সকালে সাড়ে ১১টায় গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর সন্ধ্যা ছয়টায় সরকারিভাবে তার মৃত্যুর ঘোষণা আসে। এখনো অপরাধীর প্রকৃত উদ্দেশ্য জানা যায়নি।
১০ জুলাই অনুষ্ঠেয় জাপানের উচ্চকক্ষের ভোটের প্রচারণায় অংশ নিতে এসেছিলেন জাপানের সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। মন্দিরের এই শহরে স্থানীয় এক রেলস্টেশনের পাশেই নির্বাচনী ভাষণের সময় আততায়ীর গুলিতে নিহত হন তিনি। বন্দুকের মাধ্যমে হত্যা জাপানের ইতিহাসে অত্যন্ত বিরল একটি ঘটনা; কারণ বন্দুক সংরক্ষণের ক্ষেত্রে তাদের অনেক বিধিনিষেধ এবং কঠোর আইন বিদ্যমান। আততায়ীর গুলিতে আবের মৃত্যুর মাধ্যমে জাপানে একটি কলঙ্কময় অধ্যায়ের সূচনা হল।
'বর্তমানকে নিয়ে ভীত-সন্ত্রস্ত থাকার চেয়ে আমাদের উচিত ভবিষ্যতের দিকে তাকানো।' ২০১৬ সালে দেওয়া একটি বক্তৃতায় এ কথার মাধ্যমেই শিনজো আবের অর্থনৈতিক ভিশনটি বোঝা যায়।
আবের নেতৃত্বে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি জাপানে যে সব অর্থনৈতিক সংস্কার ঘটিয়েছিল, সেগুলোকেই 'আবেনোমিক্স' বা 'আবেতত্ত্ব' বলে অভিহিত করা হয়। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সংস্কারের এজেন্ডাকে হাতে নিয়ে জাপানকে ভূ-রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ একটি দেশে পরিণত করার ক্ষেত্রে আবে ছিলেন উচ্চাকাঙ্খী। স্বাভাবিকভাবেই মৃত্যুর পরও বোধহয় তাঁকে সবচেয়ে বেশি স্মরণ করা হবে তার গৃহীত 'আবেনোমিক্স'-র জন্য। অনেক অর্থনীতিবিদের মতে, ২০১২ সালের ডিসেম্বরে গৃহীত আবেনোমিক্স জাপানের অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করে তুলেছিল।
কোইচি হামাদা বর্তমানে ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতির একজন অধ্যাপক। তিনি আবের সাবেক অর্থনৈতিক উপদেষ্টা। তার মতে, জাপানি অর্থনীতিতে নতুন আশার সঞ্চারণ ঘটাতে চেয়েছিলেন আবে। আবেনোমিক্সের অন্যতম এই স্বপ্নদ্রষ্টার মতে, পন্থাটির কারণে দরিদ্র গ্রামগুলোর উন্নয়ন ঘটেছে, একইসাথে শিক্ষিত বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়াদের বেকারত্বও ঘুচেছিল।
২০০৬-০৭ পর্যন্ত এবং পরবর্তীতে ২০১২-২০ পর্যন্ত দু' দফায় প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছিলেন শিনজো আবে। স্বাস্থ্যগত সমস্যার কারণ দেখিয়ে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ান তিনি। বিশ্বের ৩য় বৃহত্তম অর্থনীতিকে উত্তাল এবং কঠিন একটি সময়ে দিকনির্দেশনা দেওয়ায় অর্থনৈতিক মহলেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ এক নাম। বলা যায় যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তরকাল জাপানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রভাবশালী প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তিনি।
আবে যা করতে চেয়েছিলেন, তার সবকিছু তিনি অর্জন করতে পারেননি। ২০২০ এর শুরুর দিকে জাপান যখন মন্দার দিকে ঝুঁকে পড়ে, তখনই আবের অর্থনৈতিক পন্থা নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তোলেন। কোভিড-১৯ এর সাথে কীভাবে মোকাবেলা করেছেন, তা নিয়েও সমালোচনা হয়েছে সেসময়। দেশের অভ্যন্তরেই পর্যটন খাতকে সেসময় জোরদার করতে চেয়েছিলেন তিনি। বিরোধীদলীয় নেতারা তার সমালোচনা করেন কারণ তাতে সংক্রমণের ঝুঁকি আরো বৃদ্ধি পাচ্ছিল।
এ ছাড়া কোভিড-১৯ এর প্রতিক্রিয়াস্বরূপ দ্রুততম সময়ে লকডাউন এবং ভ্যাক্সিনেশনের ব্যবস্থা করতে না পারায়, তার নেতৃত্বাধীন সরকারের উপর জাপানিরা ক্ষিপ্ত ছিল। সেই সাথে বিশ্ববাজারে ধুকছিল জাপানের অর্থনীতি।
উল্লেখ্য, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে জাপান শান্তিবাদী নীতি গ্রহণ করেছিল যা তাদের সংবিধানেও লক্ষ্যণীয়। অন্যদিকে দেশকে সামরিক এবং অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী করার চেষ্টা করেন আবে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আমলে করা শান্তিবাদী সংবিধান পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সংবিধানকে পরিবর্তন করার চেষ্টায় দীর্ঘসময় ধরে ব্যর্থ ছিলেন তিনি।
তবে ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ানোর পরও জাপানের অন্যতম প্রভাবশালী এই রাজনীতিবিদ নিজের উত্তরাধিকারকে পুনর্জীবন দিতে চেয়েছিলেন।
২০১২ এর ডিসেম্বরে যখন আবে প্রধানমন্ত্রী হলেন, জাপানে তখন নানাবিধ সমস্যা। দেশটির রপ্তানি আয় তখন প্রায় তলানিতে, চীনের সাথে বাণিজ্যভিত্তিক একটি কোন্দল চলমান। একইসাথে ২০১১ এর ফুকুশিমা পারমাণবিক কেন্দ্রের বিপর্যয়ের ধকলে জাপান তখনো ধুকছে। এসব কিছুর সংমিশ্রণ জাপানকে ঠেলে দিয়েছিল অর্থনৈতিক মন্দার দোরগোড়ায়।
আবে'র সম্মুখে থাকা এসব চ্যালেঞ্জ তাকে বাধ্য করেছিল এমন কোনো পন্থা অবলম্বন করতে যা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির দুই দশকের এই স্থিতাবস্থা কাটিয়ে ওঠবে আর বেকারত্ব ঘুচাবে। একইসাথে তাকে চরম মুদ্রাস্ফীতির ব্যাপারটিও মাথায় রাখতে হবে।
তখন তিনি তিন তীরের পরিকল্পনা করলেন। এগুলো হল:
– সরকারি ব্যয় বৃদ্ধি
– ব্যাংক অব জাপানের মাধ্যমে মুদ্রার যোগান বাড়ানো এবং
– অবকাঠামোগত অর্থনৈতিক সংস্কার
উপর্যুক্ত প্রথম দু'টি পন্থার কারণে ইতিবাচক প্রভাব দেখা দিলেও, সেটি টেকসই ছিল না। কিন্তু অর্থনৈতিক সংস্কারের মাধ্যমে জাপানের কর্মক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি, অস্থায়ী শ্রমিকদের জন্য বাড়তি সুরক্ষার ব্যবস্থা, অভিবাসী শ্রমিকদের জন্য সহজতর নিয়ম তৈরি করা হল। উল্লেখ্য, ইতোপূর্বে জাপানে অভিবাসী শ্রমিকদের জন্য বহুবিধ বিধি-নিষেধ ছিল।
অর্থাৎ, এই তিন তীর কর্মসূচিতে জাপানের জন্য বেশ কিছু নতুন পন্থার অভ্যুদয় ঘটেছিল। জাপানের অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করার প্রয়াসে অনেকটাই সফল হয়েছিলেন শিনজো আবে।
আবেনোমিক্সের উদ্দেশ্য ছিল লাল ফিতার দৌরাত্ম্য কমানো। অর্থাৎ আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কমিয়ে, করপোরেট ট্যাক্স হ্রাস করার মাধ্যমে, কর্মতৎপরতা এবং উৎপাদন সক্ষমতা বৃদ্ধি করা। পাশাপাশি জাপানের কর্মক্ষেত্রে বয়স্ক, নারী এবং অভিবাসীদের অংশগ্রহণকে উৎসাহিত করা হয়েছিল এই পন্থায়। ফলস্বরূপ শ্রমবাজারে সত্যিকার অর্থেই নারী এবং বয়স্ক জনগোষ্ঠীর অনুপ্রবেশ লক্ষ করা গেছে। জাপানের কয়েক দশক ধরে কর্মক্ষেত্রে বিরাজমান পুরুষ-প্রধান ডেমোগ্রাফিকে এটি ইতিবাচকভাবে পাল্টে দিয়েছে।
এখানে উল্লেখ্য যে বিশ্বের যে কোনো দেশের তুলনায় জাপানে বয়স্ক নাগরিকের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। তদুপরি তাদের উর্বরতার হার নিম্নগামী হওয়ার কারণে জাপানে বয়স্ক জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বাড়ন্ত। আর এটি জাপানের অর্থনীতিকে প্রভাবিত করে।
কিন্তু, আবেনোমিক্সের সমস্যা কোথায়? আবের আমলে জাপানের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার বেশি ছিল, কয়েক দশকে প্রথমবারের মতো জাতীয় আয়ের বিপরীতে সরকারি ঋণ স্থিতিশীল একটি অবস্থায় পৌঁছেছিল। তবে গঠনগত সংস্কারকে পর্যবেক্ষকেরা যেরকম ফলপ্রসূ ভেবেছিলেন, বাস্তবে পরবর্তী সময়ে তা দেখা যায়নি। তাই কয়েক বছরের হিসাব সম্মিলিতভাবে বললে আবেনোমিক্সের সফলতা তর্কসাপেক্ষ। সমালোচকদের মতে, এই পন্থা টেকসই এবং শক্তিশালী অর্থনীতি প্রতিষ্ঠা করতে ব্যর্থ হয়েছিল। এ ছাড়া বেতন বৈষম্য বৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছিল এটি যেখানে চাকরির নিরাপত্তা ছিল যৎসামান্যই, নিম্ন-মজুরির বিভিন্ন পেশারও উত্থান ঘটেছিল।
সমালোচকদের মতে, কর্মক্ষেত্রে নারীদের একটি স্বকীয় অবস্থান তৈরিতে, স্বজনপ্রীতিকে ঠেকাতে এবং কর্মক্ষেত্রের অসুস্থ সংস্কৃতিকে নিবারণ করতে ব্যর্থ হয়েছে আবেনোমিক্স।
আবেনোমিক্সের ফলে ১৯৯০ এবং ২০০০ এর দশকের অর্থনৈতিক অস্থিরতা কাটিয়ে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এসেছিল, রপ্তানি আয় বৃদ্ধি পেয়েছিল এবং কয়েক দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন স্থানে এসে পৌঁছেছিল বেকারত্ব। ২০১৫ এবং '১৭ এর মাঝামাঝি সময়ে জাপান ক্রমান্বয়ে আটটি ইতিবাচক প্রবৃদ্ধির কোয়ার্টার পেয়েছিল যেটি প্রায় ৩০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ – একটি রেকর্ড।
তবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর জাপানের অর্থনীতি যেভাবে চাঙ্গা হয়েছিল, তার সাথে এবং প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে তাল মেলাতে পারেনি আবে'র অর্থনৈতিক কর্মসূচি। উচ্চাকাঙ্ক্ষী আবে জাপানের জিডিপিকে ৬০০ ট্রিলিয়ন ইয়েনে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন যা ২০২০ সালে তার পদত্যাগের সময়ও অধরাই ছিল, এমনকি এখন পর্যন্ত অর্জন করা সম্ভব হয়নি।
তবে আবের সাবেক অর্থনৈতিক উপদেষ্টা হামাদা দ্বিমত পোষণ করেন। কর্মসংস্থান তৈরি এবং সাধারণ শ্রমিক ও অস্থায়ী শ্রমিকদের মাঝে সমতা স্থাপনে আবেনোমিক্স 'অত্যন্ত সফল' ছিল বলে দাবি তাঁর।
এর আগ পর্যন্ত সাধারণ শ্রমিক এবং অস্থায়ী শ্রমিকদের মাঝে বিশাল ফারাক ছিল। সাধারণ শ্রমিকদের উচ্চ-মজুরিতে স্থায়ী কর্মসংস্থানের সুযোগ থাকলেও অস্থায়ী শ্রমিকদের তা ছিল না। এ পন্থার ফলস্বরূপ অনেক প্রতিষ্ঠান তাদের কর্মক্ষেত্রে অস্থায়ী শ্রমিকদের চাকরির ব্যবস্থা শুরু করে। আবেনোমিক্সের মূল নীতি ছিল: আপনি সাধারণ বা অস্থায়ী যে-ধরনের কর্মীই হোন না কেন, সমান কাজের জন্য সমান বেতনের ব্যবস্থা।
পলিসিটির প্রভাব এখনো শেষ হয়ে যায়নি। ২০২১ সালে জাপানের একটি সরকারি জরিপে দেখা গেছে, পূর্ণকালীন পেশাগুলোতে কাজ করা ৪৭% বিদেশি শ্রমিক 'অস্থায়ী' হিসেবে চিহ্নিত। মানবসম্পদ সঙ্কটের কারণে অধিক মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। উপরন্তু, বাইরের দেশগুলোতে বিনিয়োগের পরিবর্তে প্রতিষ্ঠানগুলো দেশের ভেতরই বিনিয়োগে বেশি আগ্রহী হয়েছে।
শিনজো আবের পদত্যাগের পর গত জানুয়ারিতে জাপানের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা আবেনোমিক্সের সমালোচনা করেন। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামে দেওয়া কিশিদার বক্তব্য অনুযায়ী, বিশাল পরিমাণের রাজস্ব নীতি (ফিস্কাল পলিসি) ও মুদ্রানীতি (মনেটারি পলিসি) টেকসই এবং অংশগ্রহণমূলক অর্থনীতি নির্মাণে যথেষ্ট ছিল না। কিশিদা নিজে তার 'নতুন পুঁজিবাদ' ব্যবস্থার সূচনা করেছেন। এর মূল লক্ষ্য হল, আবেনোমিক্সের ফলে যেসব আয় বৈষম্য তৈরি হয়েছে, তার মোচন করা। তবে ইতোমধ্যেই জাপানের ব্যবসায়িক গোষ্ঠীর কাছ থেকে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া পেয়েছে কিশিদার এই নতুন অর্থনৈতিক পন্থা।
কাঠামোগত সংস্কারে আবে যথাযথ গুরুত্ব দেননি বলে দাবি করেছেন কেউ কেউ। শ্রমবাজারের সংস্কার, জেন্ডার সমতা স্থাপন এবং একইসাথে কিছু প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার আনা যেকোনো দেশের জন্যই রাজনৈতিকভাবে দুঃসাধ্য একটি কাজ। আবে মূলত তার কার্যক্রমে নিরাপত্তা সংস্কার এবং বহির্বিশ্বে কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদারের ক্ষেত্রে বেশি তৎপর ছিলেন।
জাপানে আবেনোমিক্স নিয়ে এখনো মানুষের মধ্যে বিরাজ করছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। জাপানি সংবাদ সংস্থা জিজি প্রেসের ২০২১ এর একটি পোল থেকে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, জাপানের ৬২.৫% মানুষ মনে করেন, কিশিদার উচিত আবারও আবেনোমিক্সকে পরখ করে দেখা। কিন্তু দেশটিতে আবে'র অর্থনৈতিক কর্মসূচিকে চালিয়ে নেওয়া যৌক্তিক ভাবেন কেবল ১৪.৭% মানুষ।
বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনের আগে জাপানের অর্থনৈতিক অবস্থা যেরকম ছিল, আবে'র আসার পর তার উন্নতি হয়েছে। বিনিয়োগকারীদের মধ্যেও ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কিন্তু ২০২০ এ যখন কোভিড-১৯ পুরো বিশ্ববাজারে ত্রাসের সঞ্চার করেছিল, সেসময় আবেনোমিক্স বিশেষ কোনো ভূমিকা রাখতে পারেনি। ফলে আবারও অর্থনৈতিক মন্দার দোরগোড়ায় পৌঁছানোর উপক্রম হয়েছিল জাপানের।
আবেনোমিক্স যদিও তার সকল লক্ষ্য অর্জনে সফল হয়নি, তবু এটি তৎকালে জাপানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি পদক্ষেপ ছিল এবং সেখানে অগ্রসরতাও লক্ষ্যণীয়। ১৯৮৭ থেকে ২০১২ পর্যন্ত, ২৫ বছরের ব্যবধানে, জাপানে প্রধানমন্ত্রীর রদবদল হয়েছে ১৮ বার। আবে ক্ষমতায় আসার আগ পর্যন্ত জাপানে নিত্যনতুন রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে দীর্ঘমেয়াদি সংস্কার কাজে সফলতা আসছিল না। তিনি এ অবস্থার পরিবর্তন ঘটান এবং অন্য যে কোনো জাপানি নেতার চেয়ে বেশি সময় ক্ষমতায় বহাল ছিলেন।
শিনজো আবের গৃহীত সবক'টি কর্মসূচি অভিনব ছিল না। তবে তিনি যে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অর্জন করতে পেরেছিলেন, তার ফলে একমাত্র তিনিই সেসব পদক্ষেপকে সুচারুরূপে পর্যবেক্ষণ করতে পেরেছিলেন। তাই আবেনোমিক্সকে সাম্প্রতিক সময়ের সামষ্টিক অর্থনীতিতে অন্যতম দৃঢ় এবং সফলতম একটি কৌশল হিসেবে মনে করাটা বোধ হয় ভুল কিছু নয়।