যে ১০টি পোশাক কখনোই ওয়াশিং মেশিনে দেবেন না
ওয়াশিং মেশিন মানুষের দৈনন্দিন জীবনকে কতটা সহজ করে তুলেছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। কঠিন দাগ-ছোপ দূর করা থেকে শুরু করে জিমে যাওয়ার পোশাক পর্যন্ত ধুয়ে ফেলতে পারবেন ওয়াশিং মেশিনে, যা হাতে ধুতে গেলে অনেকটা পরিশ্রম দরকার। কিন্তু ওয়াশিং মেশিন আছে বলেই সব পোশাক সেখানে ঢুকিয়ে দিলাম, তা কিন্তু নয়! নির্দিষ্ট কিছু পোশাক বা কাপড় আছে যা কখনোই ওয়াশিং মেশিনে দেওয়া উচিত নয়। এতে কাপড়ের ক্ষতি হতে পারে এবং টেকসই ক্ষমতা কমে যায়।
শুধু তাই নয়, ভুল উপায় অবলম্বনের কারণে কাপড়ের পাশাপাশি ওয়াশিং মেশিন নামক যন্ত্রটিরও ক্ষতি হতে পারে। চলুন আজ জেনে নিই কোন ১৫টি কাপড় ওয়াশিং মেশিনে ঢুকানো থেকে বিরত থাকবেন।
১. পোষা প্রাণীর পশম লেগে থাকা যেকোনো কাপড়
বাড়িতে যদি কুকুর-বিড়ালের মতো পোষা প্রাণী থাকে তাহলে ঘরের সবকিছুর মধ্যেই তাদের পশম খুঁজে পাওয়া অসম্ভব নয়, বিশেষ করে কাপড়ের মধ্যে তো থাকবেই। এসব কাপড় এক নিমিষে ওয়াশিং মেশিনের ভেতরে পুরে দেওয়ার লোভ হলেও, তা করা যাবে না।
কারণ কাপড় থেকে পশমগুলো উঠে গিয়ে কোথাও উধাও হয়ে যায় না। এগুলো ওয়াশিং মেশিনের মধ্যেই জড়িয়ে যায় কিংবা মেশিনের দেয়ালের গায়ে লেগে থাকে যা অন্যান্য কাপড়ে লেগে যেতে পারে, অথবা ড্রেন আটকে যেতে পারে। তাই কাপড় ধোয়ার আগে কাপড়ে লেগে থাকা সব পশম তুলে ফেলতে হবে। এই কাজে প্রাণীদের জন্য ব্যবহৃত 'লিন্ট রোলারস' ব্যবহার করতে পারেন।
২. ঢিলেঢালা অন্তর্বাস
ওয়াশিং মেশিনে অন্তর্বাস ধুতে দিলে সেগুলোর আকার-আকৃতি নষ্ট হয়ে যাওয়ার ভয় থাকে এবং আরও ঢিলে হয় যায়। এছাড়া মেশিন ঘোরার সময় অন্তর্বাসের মেটালের আংটাগুলো ঘষা লেগে ক্ষয় হতে পারে, যা একই সাথে মেশিনেরও ক্ষতি করে।
৩. জিপার খোলা কাপড়
কোনো পোশাকের জিপার খুলে তা ধুতে দিতে জিপারের সাথে অন্যান্য কাপড় আটকে যাবে এবং কাপড় নষ্ট হয়ে যাবে। সেই সাথে ওয়াশিং মেশিনের ড্রামের ভেতরেও স্ক্র্যাচ ফেলতে পারে। তাই জিপারযুক্ত কাপড় মেশিনে ধুতে দেওয়ার আগে জিপার লাগিয়ে দিন।
৪. সাঁতারের পোশাক
আপনার সাঁতারের পোশাকের লেবেলে যদি লেখাও থাকে যে এটি মেশিনে ধোওয়া যাবে, তবুও তা হাতে ধোওয়া ভালো। কারণ এতে পোশাকটি বেশিদিন টেকসই হবে। অন্যদিকে, ওয়াশিং মেশিনে দিলে সাঁতারের পোশাক আরও ছড়িয়ে যাবে এবং ঢিলে হয়ে যাবে। অন্যান্য পোশাকের হুক-জিপারের সাথে লেগেও এটি নষ্ট হবার সম্ভাবনা বেশি।
৫. দহনযোগ্য দাগসহ পোশাক
আমরা সবাই জানি, নিত্যকার জীবনে জামাকাপড়ে যে দাগ লাগে তা দূর করতে ওয়াশিং মেশিন ব্যবহৃত হয়। কিন্তু কাপড়ে যদি এমন কোনো রাসায়নিক পদার্থের দাগ লাগে যা দাহ্য পদার্থ, তাহলে সেই কাপড় কখনোই ওয়াশিং মেশিনে দেওয়া উচিত না। এসব পদার্থের মধ্যে রয়েছে গ্যাসোলিন, রান্নার তেলের দাগ, অ্যালকোহল, মোটর অয়েল বা এ ধরনের অন্যান্য দাহ্য পদার্থের দাগ।
এর বদলে কাপড়্গুলোকে আগে থেকে ভিজিয়ে রাখতে হবে এবং সলভেন্ট-ভিত্তিক রিমুভার দিয়ে দাগ উঠাতে হবে এবং শুকাতে দিতে হবে।
৬. জরি-পাথর বা লেসের কাজ করা পোশাক
সিক্যুইন্স, জরি-পাথর বসানো পোশাক ওয়াশিং মেশিনে দিলে তা নষ্ট হওয়া অনিবার্য। এমনকি আপনি পোশাকটি উল্টিয়ে মেশিনে দিলেও মেশিন ঘোরার সময় তা সোজা দিকে চলে আসতে পারে। এসব পাথর-জরি আঠা দিয়ে লাগানো থাকলে সেগুলো মেশিনের ঘষায় হালকা হয়ে উঠে যায়। লেসযুক্ত পোশাকের ক্ষেত্রেও একই কথা। এসব কাপড় ড্রাই ক্লিন করতে পারলেই সবচেয়ে ভালো।
৭. ভারি কাপড়
কোনো একটি ব্যবহার্য বস্তুই যদি পানিতে ভিজে অনেক ভারি হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তাহলে ভারসাম্য নষ্ট হয়। মেশিন ঠিকঠাক ঘুরতে পারে না এবং মেশিনেরই ক্ষতি হয়।
৮. নরম তন্তুর সোয়েটার
পশমি সোয়েটার বা এ ধরনের অন্য সব সোয়েটারই হাতে ধোওয়ার নিয়ম। মেশিনে দিলে এগুলো তন্তু দুর্বল হয়ে যায়। হাত দিয়ে টানলে সেসব কাপড় আরও লম্বা হয় এবং কাপড়ের স্বাভাবিক আকার নষ্ট হয়ে যায়। আবার মেশিনের তাপে সেই তন্তু সংকুচিতও হতে পারে।
৯. টাই
গলায় বাঁধার টাই আমরা প্রায়ই পরিষ্কার করি না, কিন্তু যেহেতু প্রতিদিন ব্যবহার করতে হয়, এগুলো আসলে পরিষ্কার করা উচিত। কিন্তু টাই বেশিরভাগ সময়ই সিল্ক বা উলের তৈরি হয়ে বলে খুব নাজুক থাকে। এগুলো মেশিনে ধুলে সংকুচিত হতে পারে এবং নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
১০. স্যুট
টাইয়ের মতো করে স্যুটও মেশিনে ধোওয়া উচিত না। দামি স্যুটে ব্যবহৃত কাপড় খুব নমনীয় হয়, তাই এগুলো মেশিনে ধুলে নষ্ট হতে পারে। এমনকি সুতি বা পলিস্টার কাপড়ের টাই ওয়াশিং মেশিনে দিলেও সেগুলো ধীরে ধীরে স্বাভাবিক সৌন্দর্য্য হারাতে পারে।
এছাড়াও, আমাদের জামাকাপড়ের পকেটে বা অন্য এক কোণায় কলম, চাবি-কয়েনের মতো ধাতব বস্তু থাকতে পারে। কাপড় ধুতে দেওয়ার আগে অবশ্যই এগুলো পরীক্ষা করে দেখতে হবে। ওয়াশিং মেশিনে মাত্রাতিরিক্ত ডিটারজেন্ট দেওয়া যাবে না এবং কোনো পোশাকে 'ড্রাই ক্লিন' লেখা থাকলে তা অবশ্যই ড্রাই ক্লিন করতে হবে।
সূত্র: টমস গাইড