বৃহস্পতিবার ব্যাংকগুলো আমদানি এলসি সেটেলমেন্ট করেছে ১০৩ টাকায়
ব্যাংকগুলোতে প্রায় প্রতিদিনই ডলারের দাম বাড়ছে। আমদানি এলসি সেটেলমেন্টের চাপ থাকায় ব্যাংকগুলো মরিয়া হয়ে ডলার কিনছে। তাই বিদেশি এক্সচেঞ্জ হাউজগুলোও রেমিট্যান্স বিক্রি করার ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোর সঙ্গে দর করার বেশি সুযোগ পাচ্ছে। ব্যাংক তাদের কাছে থেকে ডলার কিনতে রীতিমতো প্রতিযোগিতা শুরু করেছে।
এসব কারণে বৃহস্পতিবার এক্সচেঞ্জ হাউজগুলো থেকে ডলার সংগ্রহ করতে সর্বোচ্চ ১০৩ টাকা খরচ করতে হয়েছে ব্যাংকগুলোকে। তবে এইদামে সবাই কেনেনি। কিছু ব্যাংক ১০২ টাকায় হাউজগুলো থেকে ডলার কিনেছে। মূলত এক্সচেঞ্জ হাউজ ও এমাউন্টভেদে দাম ওঠানামা করেছে। আগের দিন বুধবারও ২ টাকা কমে (১০১ টাকায়) ডলার কিনতে পেরেছিল তারা।
গতকাল রপ্তানিমূল্য নগদায়নের ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোকে সর্বোচ্চ ১০১ টাকা দাম দিতে হয়েছে। আগের দিন ৯৯ টাকায় নগদায়ন করেছিল ব্যাংকগুলো। সে হিসাবে, একদিনে নগদায়নেও ২ টাকার পার্থক্য তৈরি হয়েছে।
রপ্তানিমূল্য নগদায়ন ও রেমিট্যান্স সংগ্রহে দাম বাড়লে ব্যাংকগুলো বুধবারের মতোই ১০২ টাকায় এলসি সেটেলমেন্ট করেছে বলে দাবি করেছে।
বেশ কয়েকটি ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের প্রধানদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংক বাজারে ডলারের প্রবাহ বাড়াতে বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ নিয়েছে। এতে ডলারের প্রবাহ কিছুটা বাড়লেও ডলারের চাহিদা অনেক বেশি। এসব কারণে ডলারের দাম বাড়ছে।
রপ্তানিকারকেরা এই একাউন্টে তাদের রপ্তানি আয়ের একটা অংশ পরবর্তীতে খরচ করার জন্য এক্সপোর্টারস রিটেনশন কোটা (ইআরকিউ) একাউন্টে জমা করে রাখতে পারেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এক আদেশে রপ্তানিকারকদের জমা করার লিমিট কমিয়ে অর্ধেক করেছে। এছাড়া এই একাউন্টে জমা থাকা বৈদেশিক মুদ্রার ৫০% নগদায়ন করার নির্দেশও দিয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা টিবিএসকে জানিয়েছেন, বর্তমানে ইআরকিউ একাউন্টে ৫০০ মিলিয়ন ডলারের মতো জমা আছে। যেটুকু নগদায়ন করার কথা ছিল, তার পুরোটা এখনো করা হয়নি। ধাপে ধাপে সেটি করা হচ্ছে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই বাকি অংশ নগদায়ন হয়ে গেলে ডলারের প্রবাহ কিছুটা বাড়বে।
বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার-সংকট নিরসনে গত বৃহস্পতিবার এই দুটি সিদ্ধান্তের সঙ্গে ব্যাংকের ডলার ধারণের সীমা (এনওপি) হ্রাস এবং অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটের বৈদেশিক মুদ্রার তহবিল অভ্যন্তরীণ ব্যাংকিং ইউনিটে স্থানান্তরের সিদ্ধান্তও নিয়েছে।
এসবের মাঝে সুখবর হলো, নতুন আমদানি এলসি খোলার চাপ থাকলেও খোলা হচ্ছে কম। শীর্ষস্থানীয় একটি ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের প্রধান টিবিএসকে বলেন, 'আমাদের কাছে এলসি খুলতে আসলে বিলাসদ্রব্যের ক্ষেত্রে আমরা আমদানিকারকদের নিরুৎসাহিত করার চেষ্টা করছি। এছাড়া সামগ্রিকভাবে এলসি খোলার হার কমে এসেছে। এর প্রভাব পড়তে কিছুটা সময় লাগবে। এখন যেসব এলসি পেমেন্টের চাপ আসছে, এগুলো কয়েকমাস আগে খোলা হয়েছিল।'
ডলারের দাম ৫০ পয়সা বাড়িয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক
ডলারের ইন্টারব্যাংক এক্সচেঞ্জ রেট ৫০ পয়সা বাড়িয়ে ৯৪.৪৫ টাকা করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বৃহস্পতিবার নতুন দামে ব্যাংকগুলোর কাছে ৭০ মিলিয়ন ডলার বিক্রি করা হয়েছে।
১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া নতুন অর্থবছরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ পর্যন্ত ৭০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি বিক্রি করেছে ব্যাংকগুলোর কাছে। মূলত জ্বালানী, বিদ্যুত, খাদ্যপণ্য, সরকারি ক্রয়সহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের আমদানি এলসি খোলার জন্য এই সহায়তা দিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
তবে চাহিদার পুরোটা যোগান দিচ্ছে না বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে এসব পণ্যের আমদানি ব্যয়ের বাকি ডলার যোগাড় করতে হচ্ছে বাজার থেকে।
এটিও ডলারের দাম বাড়ার অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।
গতবছরের ২১ জুলাই ইন্টারব্যাংক এক্সচেঞ্জ রেট ছিল ৮৪.৮০ টাকা। এক বছরের ব্যবধানে ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন হয়েছে ৯.৬৫ টাকা বা ১১.৩৮%।
স্থগিত করা চার এলসি ছাড় করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক
৫ মিলিয়ন ডলারের বেশি মূল্যের বেসরকারি যেকোনো আমদানি এলসি খোলার ২৪ ঘণ্টা আগে তা কেন্দ্রীয় ব্যাংককে জানানোর নির্দেশ দেওয়া হয়।
গত মঙ্গলবার তথ্য পেয়ে পাঁচ প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৪৫ মিলিয়ন ডলারের আমদানি এলসি খোলা স্থগিত করা হয়েছিল। তবে এসব এলসির ৪টিকেই অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, অনিয়মের তথ্য পাওয়ায় ঋণপত্রগুলো স্থগিত করা হয়েছিল। তবে পরে যথাযথ নথিপত্র দেওয়ায় চারটিকে অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তবে একটি বেসরকারি ব্যাংক এলসি খুলতে যথাযথ অনুমোদন না নেওয়ায় তাদের এলসির অনুমতি এখনো দেওয়া হয়নি।
কার্ব মার্কেটে ডলার ১০২.৫০ টাকা
বৃহস্পতিবার খোলাবাজার থেকে ডলার কিনতে গ্রাহকদের খরচ করতে হয়েছে ১০২.৫০ টাকা। এছাড়া মানি চেঞ্জারগুলো ১০২ টাকা রেটে ডলার সংগ্রহ করেছে। গত বুধবার ও মঙ্গলবারও এই দামে ডলার কেনাবেচা হয়েছে কার্ব মার্কেটে। রাজধানীর মতিঝিল, পল্টন ও বায়তুল মোকাররম এলাকার মানি চেঞ্জার প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।