নতুন বাংলাদেশের পুরনো পরিণতি
পরিবর্তনের হাওয়া লাগলো বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি দলে, বদলে গেল চেহারা। সিনিয়রদের বসিয়ে গড়া হলো তারুণ্যে ঠাসা দল। তাতে আলোর ঝলকানির দেখা মিললো, জাগলো নতুন আশা। সে আশা অবশ্য প্রথম মিশনেই মিলিয়ে যেতে সময় লাগলো না ধারহীন বোলিংয়ে। এরপরও বিশাল লক্ষ্যে বুক চিতিয়ে লড়লো নতুন বাংলাদেশ, বেশ কিছুক্ষণ চললো আশা-নিরাশার দোলাচল। কিন্তু শেষটা হলো পুরনো টি-টোয়েন্টির বাংলাদেশের মতোই। দারুণ লড়াই করেও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে হেরে গেল বাংলাদেশ।
শনিবার হারারে স্পোর্টস ক্লাবে সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ১৭ রানে হেরে গেছে বাংলাদেশ। উত্তেজনা ছড়ানো এই ম্যাচে লিটন কুমার দাস, এনামুল হক বিজয়, নাজমুল হোসেন শান্তর পর শেষ দিকে নেমে নেতার মতোই খেলেন টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহান। কিন্তু নেতা হিসেবে প্রথম মিশনে দলকে শেষ পর্যন্ত জয় এনে দিতে পারেননি তিনি। ব্যাট হাতে তাণ্ডব চালিয়েও ব্যবধান ঘোচাতে পারেননি উইকেটরক্ষক এই ব্যাটসম্যান।
টস জিতে আগে ব্যাটিং করতে নামে জিম্বাবুয়ে। শুরুটা ভালো না হলেও দলকে চাপ বুঝতে দেননি দুই হাফ সেঞ্চুরিয়ান ওয়েসলে মাধেভেরে ও সিকান্দার রাজা। মাধেভেরের মারকুটে ব্যাটিং ছাপিয়ে তাণ্ডব চালান ম্যাচসেরা রাজা। শন উইলিয়ামসও রাখেন অবদান। তাদের ব্যাটে ৩ উইকেটে ২০৫ রানের বিশাল সংগ্রহ গড়ে জিম্বাবুয়ে। জবাবে লিটন, বিজয় ও শান্তর ব্যাটে এগোতে থাকা বাংলাদেশ শেষ দিকে লড়ে সোহানের ব্যাটে। কিন্তু ১৭ রানের ব্যবধান থেকেই যায়, ৬ উইকেটে বাংলাদেশের ইনিংস শেষ হয় ১৮৮ রানে।
বিশাল লক্ষ্যে ব্যাটিং করতে নেমে শুরুটা ভালো করতে পারেনি বাংলাদেশ। দলীয় ৫ রানেই ওপেনার মুনিম শাহরিয়ারকে হারায় সফরকারীরা। দ্বিতীয় উইকেটে এই চাপ কাটিয়ে তোলেন লিটন কুমার দাস ও এনামুল হক বিজয়। এ সময় জিম্বাবুয়ের বোলারদের ওপর দিয়ে ঝড় বইয়ে দেন লিটন, রানের চাকাও ঘুরতে থাকে চাওয়া মতোই।
সপ্তম ওভারে গিয়ে বাধে বিপত্তি। নিজের দোষে আউট হয়ে সাজঘরে ফেরেন দারুণ ব্যাটিং করতে থাকা লিটন। শন উইলিয়ামসের বলে স্কুপ শট খেলেন তিনি। লিটনের ভাসিয়ে দেওয়া বল গিয়ে জমা হয় শর্ট ফাইন লেগে থাকা রিচার্ড এনগারাভার হাতে। কিন্তু ক্যাচটি নিলেও হাতে রাখতে পারেননি তিনি।
পড়ে যাওয়া বল কুড়িয়ে সঙ্গে সঙ্গে বোলার উইলিয়ামসের কাছে পাঠান এনগারাভা। একটু সময় নিয়ে স্টাম্প ভেঙে দেন জিম্বাবুয়ে অধিনায়ক। ক্যাচ মিস ও রান আউটের সম্ভাবনা দেখেও নন স্ট্রাইকে ফেরার তাড়া দেখা যায়নি লিটনের মাঝে। তিনি দাঁড়িয়ে থাকেন মাঝ উইকেটে, থেমে যায় তার ১৯ বলে ৬টি চারে ৩২ রানের ইনিংস।
এরপর নাজমুল হোসেন শান্তকে সঙ্গে নিয়ে লড়াই করে যেতে থাকেন এনামুল হক বিজয়। ধীরগতির ব্যাটিং করলেও বেশ সাবলীল মনে হচ্ছিল তাকে। ডানহাতি এই ব্যাটসম্যানের মারা ২টি ছক্কা ছিল দৃষ্টিনন্দন। কিন্তু শেষ ছক্কা মারার পর আবারও তুলে মারতে গিয়ে মিড উইকেটে ধরা পড়েন ২৭ বলে ২ ছক্কায় ২৬ রান করা বিজয়। এরপর দ্রুতই থামেন আফিফ হোসেন ধ্রুব, ৮ বলে ১০ রান করে ফিরে যান তিনি।
আফিফের বিদায়ে শান্তর সঙ্গে উইকেটে যোগ দেন সোহান। প্রথম কয়েকটি বল দেখে খেলার পর তাণ্ডব শুরু করেন তিনি। এ সময় প্রয়োজনীয় রানের কথা মাথায় রেখে শান্তও মারকুটে ব্যাটিং করতে থাকেন। পঞ্চম উইকেটে ২১ বলে ৪০ রানের জুটি গড়েন তারা। শান্তর বিদায়ে ভাঙে এই জুটি। ফেরার আগে ২৫ বলে ৩টি চার ও একটি ছক্কায় ৩৭ রান করেন তিনি।
উইকেট পতনে রান-বলের ব্যবধান বাড়তে থাকে। এমন সময়ে মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত যান উইকেটে। শেষ ১২ বলে বাংলাদেশের প্রয়োজন দাঁড়ায় ৩২ রান। সোহানের মতো করে শেষ পর্যন্ত লড়তে পারেননি মোসাদ্দেক। ১০ বলে ১৩ রান করে ফেরেন মোসাদ্দেক। শেষ ওভারে ২৮ রান দরকার পড়ে বাংলাদেশের। কিন্তু একটি লেগ বাই চার ও সোহানের একটি ছক্কা থেকে আসে ১০ রান, মেনে নিতে হয় ১৭ রানের হার।
তবে দুঃসময়ে কীভাবে দলকে নেতৃত্ব দিতে হয়, সেটা করে দেখিয়েছেন সোহান। ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান ২৬ বলে একটি চার ও ৪টি ছক্কায় ৪২ রানে অপরাজিত থাকেন। জিম্বাবুয়ের লুক জংওয়ে সর্বোচ্চ ২টি উইকেট নেন। একটি করে উইকেট পান রিচার্ড এনগারাভা, ওয়েলিংটন মাসাকাদজা ও সিকান্দার রাজা।
এর আগে ব্যাটিং করা জিম্বাবুয়ের ইনিংসে বাংলাদেশের কোনো বোলারই ছন্দময় বোলিং করতে পারেননি, ফিল্ডিং ছিল অগোছালো। সর্বনিম্ন ইকোনমি আফিফ হোসেন ধ্রুবর, এক ওভারে ৬ রান খরচা করেন তিনি। বাকি বোলারদের সবাই ৭-এর উপের রান খরচা করেন। সবচেয়ে বেশি রান দেন মুস্তাফিজুর রহমান ১২.৫০ ইকোনমিতে। তাসকিন আহমেদ, শরিফুল ইসলামরাও ছিলেন খরুচে।
শুরুটা ভালো না হলেও চাপ বুঝতে হয়নি জিম্বাবুয়েকে। দলীয় ১৫ রানে ওপেনার রেজিস চাকাভাকে হারায় তারা। ৮ রান করে ফেরেন চাকাভা। অধিনায়ক ক্রেইক আরভিনও বড় ইনিংস খেলতে পারেননি, ২১ রান করেন তিনি।
৪৩ রানে ২ উইকেট হারানো দলের স্কোরকার্ডের চেহারা মুহূর্তেই পাল্টে দেন ওয়েসলে মাধেবেরে ও শন উইলিয়ামস। তৃতীয় উইকেটে ৫৬ রান যোগ করেন তারা। উইলিয়ামস ১৯ বলে ৪টি চার ও একটি ছক্কায় ৩৩ রান করে আউট হলেও ব্যাটিং ঝড় চালিয়ে যেতে থাকেন মাধেবেরে।
পরে তার সঙ্গে যোগ দেন তাণ্ডব চালানো সিকান্দার রাজা। চতুর্থ উইকেটে বাংলাদেশের বোলারদের ওপর দিয়ে ছড় বইয়ে দেন এ দুজন। মাত্র ৪৩ বলে ৯১ রানের জুটি গড়েন মাধেবেরে-রাজা। এ পথে দুজনই তুলে নেন হাফ সেঞ্চুরি। টি-টোয়েন্টিতে সপ্তম হাফ সেঞ্চুরি করা মাধেবেরে ৪৬ বলে ৯টি চারে ৬৭ রান করে চোটের কারণে স্বেচ্ছায় মাঠ ছাড়েন। পঞ্চম হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেওয়া রাজা মাত্র ২৬ বলে ৭টি চার ও ৪টি ছক্কায় ৬৫ রানের হান না মানা অপরাজিত ইনিংস খেলেন।
বাংলাদেশের হয়ে মুস্তাফিজ ২টি ও মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত একটি উইকেট নেন। ২ উইকেট পেলেও রান আটকে রাখতে পারেননি মুস্তাফিজ। ৪ ওভারে ইনিংসের সবচেয়ে বেশি ইকোনমিতে (১২.৫০) ৫০ রান দেন মুস্তাফিজ। শরিফুল ও তাসকিন ৪ ওভারে খরচা করেন যথাক্রমে ৪৫ ও ৪২ রান। নাসুমের ৪ ওভারে খরচা ৩৮ রান। মোসাদ্দেক ৩ ওভারে দেন ২১ রান।