অলিম্পিক পেছালে বিশাল ক্ষতি জাপানের
সব আয়োজন-প্রস্তুতি শেষ। আগামী বৃহস্পতিবার দেশজুড়ে মশাল দৌড়ের অপেক্ষায় দিন গুনছিল জাপানবাসীরা। কিন্তু সব থমকে গেছে। করোনাভাইরাসের তাণ্ডবে টোকিও অলিম্পিক স্থগিত বা পিছিয়ে যাওয়াটা এখন সময়ের ব্যাপার। যেকোনো মুহূর্তে আসতে পারে ঘোষণা। শেষ পর্যন্ত টোকিও অলিম্পিক পিছিয়ে গেলে বড় অঙ্কের ক্ষতি হবে আয়োজক দেশ জাপানের।
অলিম্পিক আয়োজনে ইতোমধ্যে ১ হাজার ২০০ কোটি ডলার খরচ করেছে জাপান। বিশ্ব ক্রীড়ার সবচেয়ে বড় এই আসরটি পিছিয়ে গেলে এর বেশিরভাগ অর্থই গচ্ছা যাবে আয়োজকদের। এ ছাড়া স্পন্সর ও সম্প্রচার সত্ত্ব থেকেও বড় অঙ্কের ক্ষতি হবে জাপানের।
জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবেসহ টোকিও অলিম্পিক আয়োজক কমিটি বলে আসছিল, পরিস্থিতি যাই হোক, পূর্ব নির্ধারিত সময়েই শুরু হবে টোকিও অলিম্পিক। দরকার হলে দর্শকবিহীন গ্যালারিতে অনুষ্ঠিত হবে অলিম্পিকের ইভেন্ট। কিন্তু অন্যান্য দেশের অলিম্পিক কমিটির ক্রমাগত চাপ এবং সোমবার কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ার নাম প্রত্যাহারের পর বাস্তবতা বুঝতে শুরু করে জাপান।
ফলে আগের অবস্থান থেকে সরে এসেছে তারা। জাপানের প্রধানমন্ত্রী পার্লামেন্টে জানিয়েছেন, করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট অবস্থার কারণে নির্ধারিত সময়ে অলিম্পিক অনুষ্ঠিত হবে না। আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির প্রেসিডেন্ট টমাস বাখের সঙ্গে আলোচনা করে ইতোমধ্যে অলিম্পিক স্থগিতের ব্যাপারে সম্মত হয়েছেন তিনি।
প্রথম দল হিসেবে সোমবার টোকিও অলিম্পিক থেকে নাম প্রত্যাহার করে নেয় কানাডা। অলিম্পিকে ক্রীড়াবিদ না পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে অস্ট্রেলিয়াও। অন্যান্য দেশের অলিম্পিক কমিটির কাছ থেকেও বিশ্ব আসরটি স্থগিত করার আবেদন আসছে বলে জানান টোকিও অলিম্পিক আয়োজক কমিটির প্রধান ইয়াসুহিরো ইয়ামাশিতা।
ক্রমাগত এই চাপের প্রেক্ষিতে টোকিও অলিম্পিক স্থগিত করার কথা ভাবছেন বলে জানিয়েছিলেন ইয়ামাশিতা। তিনি বলেন, 'আসরে অংশ নিতে যাওয়া খেলোয়াড়দের স্বাস্থ্যঝুঁকি ও নিরাপত্তার কথা চিন্তা করলে আমরা এমন একটা জায়গায় পৌঁছাব, যেখান থেকে অলিম্পিক স্থগিত করা ছাড়া আর উপায় থাকবে না।'
এর একদিন পর আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির (আইওসি) সদস্য ডিক পাউন্ড জানিয়েছেন, টোকিও অলিম্পিক স্থগিতের সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে। করোনার কারণে এক বছরের জন্য পিছিয়ে যাবে অলিম্পিক। তিনি বলেন, 'আইওসির কাছে যে তথ্য আছে, তার ওপর ভিত্তি করে সংস্থাটি গেমস স্থগিতের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে। আমি যত দূর জানি, গেমস আপাতত ২৪ জুলাই শুরু হচ্ছে না।'
বিশ্বযুদ্ধের কথাই মনে করিয়ে দিচ্ছে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে ১৯৪০ সালে অলিম্পিক বাতিল হয়ে গিয়েছিল। সেবারও আয়োজক ভেন্যু ছিল টোকিও। ভেন্যু পরিবর্তন করলেও বিশ্ব ক্রীড়ার সবচেয়ে বড় এই আসরটি আর আয়োজন করা সম্ভব হয়নি।
একই কারণে ১৯৪৪ অলিম্পিকও বাতিল হয়ে যায়। তারও আগে ১৯১৬ সালে গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক বাতিল হয় প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কারণে। ৮০ বছর পর স্থগিত বা বাতিল হওয়ার শঙ্কায় অলিম্পিক, এবারের কারণ করোনাভাইরাস। কাকতালীয়ভাবে এবারও আয়োজক ভেন্যু সেই টোকিও।