মধ্যরাতে হলের তালা ভেঙে খুবি ছাত্রীদের বিক্ষোভ, ১১ দফা দাবি মঞ্জুর
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) মেয়েদের হলে রান্নার সরঞ্জাম জব্দ ও প্রশাসনের দুর্ব্যবহারের প্রতিবাদে রাত ১১টার দিকে হল থেকে বেরিয়ে আন্দোলন শুরু করে শিক্ষার্থীরা। এরপর গতকাল দিবাগত রাত দেড়টার দিকে শিক্ষার্থীদের ১১ দফা দাবি মেনে নিলে শিক্ষার্থীরা হলে ফিরে যান।
মঙ্গলবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের হাদি চত্তরে শিক্ষর্থীদের সকল দাবি মেনে নিয়ে লিখিত দেন অপরাজিতা হলের প্রভোস্ট রহিমা নুসরাত রিম্মি।
এর আগে অপরাজিতা হলে রাইস কুকার ও অন্যান্য রান্নার সরঞ্জাম নিষিদ্ধের প্রতিবাদে রাত ১১ টার দিকে আন্দোলনে নামের অপরাজিতা হলের ছাত্রীরা। ছাত্রীরা আন্দোলন শুরু করার আগে দাবি মেনে নেওয়ার অনুরোধ করে, এরপর হল কর্তৃপক্ষ হলের গেটের তালা লাগিয়ে দিলে তালা ভেঙে বের হন শিক্ষার্থীরা।
পরে তাদের আন্দোলনের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেন অন্যান্য হলের ছাত্র-ছাত্রীরা। অপরাজিতা হলের গেট থেকে তারা আন্দোলন শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের হাদি চত্তরে এসে অবস্থান নেন।
মঙ্গলবার দুপুরে অপরাজিতা হলের এক ছাত্রী আত্মহত্যার উদ্দেশ্যে বটি দিয়ে নিজেকে আহত করার পর সন্ধ্যায় অপরাজিতা হলে দা, বটি, চাকু এমনকি রাইসকুকারও নিষিদ্ধ করে কর্তৃপক্ষ। ছাত্রীদের রুমে গিয়ে সরঞ্জামগুলো জব্দ করা হয়। সবাইকে ডাইনিংয়ের খাবার খেতে নির্দেশ দেয়া হয়।
অপরাজিতা হলের শিক্ষার্থী জাকিয়া বলেন, 'কথায় কথায় হলে কর্তৃপক্ষ আমাদের সাথে খারাপ ব্যবহার করে। সর্বশেষ আমাদের নিজেদের রান্না করতে নিষিদ্ধ করেছে। রুমে রুমে গিয়ে সকলের রাইসকুকার জব্দ করে নেওয়া হয়েছে। হলের গেট দিয়ে কেউকে কাঁচা তরকারি নিয়ে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। আমাদের হলের ডাইনিং এ খাবার অত্যন্ত নিম্নমানের। এছাড়া উচ্চমূল্যের ডাইনিং থেকে খাবার কেনার সামর্থ্য সকলের থাকে না।'
তিনি বলেন, 'হল কর্তৃপক্ষ এক ধরনের স্বৈরাচারী শাসন চালু করেছে। রাত আটটার মধ্যে হলে না ফিরলে দুর্ব্যবহার করে। অনেকের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পোস্ট নিয়ে ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকে দুর্ব্যবহার করে। একাডেমিক ফলাফল নিয়ে নিয়ে বাজে কথা শোনায়।'
শারমীন নামের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, 'আজকের নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পর আমরা প্রাথমিকভাবে হল কর্তৃপক্ষের কাছে গিয়েছিলাম। তারা আমাদের দাবি না মেনে দুর্ব্যবহার শুরু করে এবং তাড়িয়ে দেই। পরবর্তীতে আমরা আন্দোলন করতে চাইলে তারা হলের দুটি গেটি তালা লাগিয়ে দেয়। তখন আমরা দুটি গেটের তালা ভেঙ্গে হলে সামনে এসে আন্দোলন শুরু করি।'
শিক্ষার্থীরা আরও জানান, হলের প্রোভোস্ট, সহকারী প্রোভোস্ট ছাত্রীদের সাথে বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে ধমক দেওয়া থেকে শুরু করে সিট বাতিলের হুমকি দেন। কিছুদিন আগে ফেসবুকে কমেন্ট করাকে কেন্দ্র করে এক ছাত্রীকে ৪৫ মিনিট হুমকি-ধামকি দেয় হল কর্তৃপক্ষ।
আন্দোলনের সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বিষয়ক পরিচালক মো. শরীফ হাসান লিমন এসেছিলেন। তবে তিনি শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নিবৃত্ত করতে ব্যর্থ হয়ে এক পর্যায়ে চলে যান।
পরে শিক্ষার্থীদের দাবীর প্রেক্ষিতে রাত দেড়টায় হলের প্রভোস্ট বডি তাদের সাথে দেখা করে সব দাবি মেনে নেওয়ার লিখিত দেন।
শিক্ষার্থীদের ১১ দফা দাবি-
১. রাইস কুকার ও হলের রান্নার সরঞ্জামাদি ব্যবহারের নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে হবে।
২. যৌন হয়রানির প্রতিবাদে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কথা বলার কারণে ব্যক্তিগত আক্রমণ ও পারিবারিক শিক্ষা তুলে কথা বলায় ক্ষমা চাইতে হবে।
৩. হলে প্রয়োজনে অভিভাবক ও নারী আত্মীয়দের থাকার অনুমতি দিতে হবে।
৪. পানির পোকা ও খাবারের সমস্যার স্থায়ী সমাধান করতে হবে।
৫. প্রভোস্ট তার নিজ ডিসিপ্লিনের স্টুডেন্টদেরকে ডেকে নিয়ে ব্যক্তিগত এবং একাডেমিক বিষয়ে হয়রানি বন্ধ করতে হবে ও ক্ষমা চাইতে হবে।
৬. হলের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের দুর্ব্যবহার বন্ধ করতে হবে।
৭. যে কোনো পরিস্থিতিতে সিট বাতিলের হুমকি দেওয়া বন্ধ করতে হবে।
৮. যে কোনো পরিস্থিতিতে হলের ছাত্রীদের মতামতকে প্রাধান্য দিতে হবে।
৯. হলের মিল খাওয়া বাধ্যতামূলক করা যাবে না।
১০. আজকের (আন্দোলনের) ঘটনাকে কেন্দ্র করে কোন শিক্ষার্থীকে ব্যক্তিগতভাবে হুমকি দেওয়া যাবে না।
১১. এ দাবিসমূহ না মানলে প্রভোস্ট কমিটির পদত্যাগ করতে হবে।
ছাত্রীরা রাইস কুকার ও হলের রান্নার সরঞ্জামদি ব্যবহার বন্ধের প্রতিবাদে আন্দোলনে নেমে এ ১১ দফা দাবি ঘোষণা করেছিলেন।