বছর তিনেকের মধ্যেই চাঁদে অভিযান, পা রাখার জায়গা ঠিক করল নাসা
ভবিষ্যতের কাজ এখনই গুছিয়ে রাখতে শুরু করেছে নাসা। যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণাকারী এই সংস্থা জানিয়েছে, বছর তিনেকের মধ্যে চাঁদের মাটিতে পা রাখবেন মহাকাশচারীরা। তাদের জন্য এখনই সম্ভাব্য জায়গা খুঁজে রেখেছে সংস্থাটি। তবে পরবর্তী চন্দ্র অভিযানে কারা যাবেন বা ঠিক কবে এই অভিযান হবে, তা কিছুই এখনও নির্ধারিত হয়নি।
মহাকাশচারীদের জন্য চাঁদের কোথায় ল্যান্ডিং অঞ্চল গড়বে নাসা, এ বিষয়ে বিস্তারিত জানা যাবে শীঘ্রই। এক সংবাদিক সম্মেলনে এসব তথ্য দিয়েছে মার্কিন এই সংস্থাটি। এছাড়া, শুক্রবারের সংবাদ সম্মেলনে আরও জানা যায়, এখন পর্যন্ত চাঁদের দক্ষিণমেরুর ১৩টি সম্ভাব্য জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে।
আর্টেমিস-৩ নামের এক মিশনের অঙ্গ হিসেবে এই কাজ শুরু করেছে নাসা। ওই মিশনের অংশ হিসাবেই ২০২৫ সালে মহাকাশচারীদের চাঁদে পাঠানোর বন্দোবস্ত করা হবে। মিশনটি সফল হলে ১৯৭২ সালের নিল আর্মস্ট্রং'র অ্যাপোলো-১৭ মিশনের পর এই প্রথম চাঁদে পা রাখবেন নাসার মহাকাশচারীরা।
নাসা সূত্রের খবর অনুযায়ী, প্রতিটি অঞ্চলেই অনেকগুলো সম্ভাব্য ল্যান্ডিং সাইট রয়েছে। কিসের ভিত্তিতে অঞ্চলগুলো বেছে নেওয়া হয়েছে, তাও জানিয়েছে সংস্থাটি। এক্ষেত্রে ওই এলাকাগুলোর ভূখণ্ড, সেখান থেকে যোগাযোগ ব্যবস্থার সুবিধা ছাড়াও সেখানকার আলোর অবস্থাও নাসার বিজ্ঞানীদের মাথায় রাখতে হয়েছে। সব মিলিয়ে বৈজ্ঞানিক ক্রিয়াকলাপে বিষয়গুলো কার্যকর হবে কিনা, সেদিকে খেয়াল রেখেই জায়গাগুলো নির্ধারণ করেছেন বিজ্ঞানীরা।
চাঁদের প্রতিটি অঞ্চলের মূল্যায়ন করতে আরও বিজ্ঞানীদের মতামত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে নাসা।
প্রসঙ্গত, মহাকাশের আরও গভীরে গিয়ে অনুসন্ধানের উদ্দেশ্যে আর্টেমিস-১ নামে একটি মিশনের উদ্যোগ নিয়েছে নাসা। ওই মিশনে গিয়ে চাঁদে ফেরার পরিকল্পনাও রয়েছে সংস্থাটির। নাসা জানিয়েছে, আর্টেমিস-১ নামের ওই মিশনে শামিল করা হয়েছে ওরিয়ন মহাকাশযান, মহাকাশে উৎক্ষেপণের জন্য এসএলএস রকেট এবং ফ্লরিডায় নাসার কেনেডি স্পেস সেন্টারের গ্রাউন্ড সিস্টেম।
আর্টেমিস-১ মিশনের আওতায় একাধিক মিশন রয়েছে। এর প্রথমটিতে অবশ্য কোনো মহাকাশচারী ছাড়াই যাত্রা শুরু করবে মহাকাশযান।
নাসা আরও জানিয়েছে, ২৯ অগস্ট কেনেডি স্পেস সেন্টারের লঞ্চ প্যাড ৩৯বি থেকে মনুষ্যহীন ওই মহাকাশযানটি উৎক্ষেপণ করা হবে। এর ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যে তা মহাশূন্যে যাত্রা করবে।
প্রথম মিশনের সময়সীমা ৪২ দিন ৩ ঘণ্টা ও ২০ মিনিটের। এর মূল লক্ষ্য হবে চাঁদের চারপাশের বিপরীতমুখী কক্ষপথ। চাঁদে এবং এর বাইরে অনুসন্ধানের চেষ্টাও করবে যানটি। পুরো মিশনে মহাকাশযানটি অন্তত ২০ লাখ ১০ হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দেবে। মিশনটি সফল ভাবে শেষ হওয়ার পর ১০ অক্টোবর সান দিয়েগোর অদূরে প্রশান্ত মহাসাগরের ওপরে একটি স্প্ল্যাশডাউন সাইটে ফিরে আসবে মহাকাশযানটি।
মহাকাশ গবেষকদের আশা, এই মিশনটি সফল হলে ভবিষ্যতে প্রথমবার কোনো নারী মহাকাশচারীকে চাঁদে বা তার কাছাকাছি পাঠানোর পথ সুগম হতে পারে।
আর্টেমিস-১ মিশনের মাধ্যমে চাঁদ ছাড়াও মহাকাশের গভীরে এবং মঙ্গল গ্রহে টেস্টিং সিস্টেম গড়তে চায় নাসা। এ কাজে আন্তর্জাতিক অংশীদারের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদী পার্টনারশিপ গড়তে চায় সংস্থাটি।
- সূত্র: দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট