দুই বছর পর মুক্তি পেলেন খালেদা জিয়া
দুই বছরের বেশি সময় ধরে কারাবন্দি থাকা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া মুক্তি পেয়েছেন। বুধবার বিকেলে মানবিক কারণে দণ্ড স্থগিত করে শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি দিয়েছে সরকার। ছয় মাসের জন্য তাকে এ মুক্তি দেওয়া হয়।
বিকেলে সোয়া ৪টার দিকে হুইল চেয়ারে করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) থেকে বের হন খালেদা জিয়া। এসময় তার মুখে ছিল নীল মাস্ক ও মাথায় গোলাপি হিজাব। খালেদা জিয়ার ভাই শামীম ইস্কান্দর গাড়িটি চালিয়ে গুলশানের বাসা ফিরোজায় নিয়ে যান।
২৫ মাস পর বিএনপি চেয়ারপারসনের মুক্তির খবর পেয়ে সকাল থেকেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেলে ভিড় জমান দলের নেতাকর্মীরা। ভিড় করেন তার গুলশানের বাসা ফিরোজায়ও। করোনা ভাইরাসের কারণে বারবার নিষেধ করার পরও শত শত নেতাকর্মী বিএসএমএমইউতে ভিড় করেন। এসময় পুলিশকে বেগ পেতে হয়। মাইকিং করার পরও তারা স্থান ত্যাগ করেননি। অনেকেই খালেদা জিয়ার নামে শ্লোগান দেন।
এদিকে, খালেদা জিয়ার ফিরোজায় আগমন উপলক্ষে তার বাসা প্রস্তুত করা হয়েছে। বুধবার সকালে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাসা পরিদর্শন করেন। নিরাপত্তায় প্রস্তুত তার বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী।
প্রসঙ্গত, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে কারাগারে রয়েছেন খালেদা জিয়া। পরে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রিজন সেলে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
বুধবার সকালে সেতুমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, যে কোনো মুহূর্তে খালেদা জিয়া ছাড়া পেতে পারেন। কিছু আনুষ্ঠানিকতার বিষয় রয়েছে। আনুষ্ঠানিকতা পূরণ হলে তিনি মুক্তি পাবেন।
এরপর দুপুরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জাান খাঁন কামাল সাংবাদিকদের জানান, খালেদা জিয়ার মুক্তির আদেশ সই হয়েছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই মুক্তি পাবেন তিনি।
এর আগে মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশেই খালেদা জিয়ার ৬ মাসের মুক্তির জন্য সুপারিশ করা হয়েছে বলে জানান আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
আইনমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ ব্যাপারে নির্দেশ দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ হচ্ছে আইনি প্রক্রিয়ায় দুই শর্তে দণ্ডাদেশ স্থগিত রেখে তাকে মুক্তি দেওয়া হোক।
খালেদা জিয়াকে দুইটি শর্তে মুক্তি দেওয়া হচ্ছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান আইনমন্ত্রী। সেগুলো হলো, এই সময়ে খালেদা জিয়া ঢাকায় নিজের বাসায় অবস্থান করতে হবে এবং তিনি বিদেশে যেতে পারবেন না।
তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী এ ব্যাপারে নির্দেশ দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ হচ্ছে, আইনি প্রক্রিয়ায় এই দুই শর্তসাপেক্ষে তার দণ্ডাদেশ স্থগিত রেখে তাকে মুক্তি দেওয়ার জন্য।
এর আগে বিদেশে চিকিৎসার জন্য মুক্তি চেয়ে স্বরাষ্ট্র ও আইনমন্ত্রীর কাছে চিঠি দিয়েছিল খালেদার পরিবার। এমনকি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেছেন খালেদা জিয়ার ভাই-বোনসহ পরিবারের সদস্যরা।
এছাড়া স্বাস্থ্যগত অবস্থার অবনতির কথা উল্লেখ করে তার পরিবারের পক্ষ থেকে এ পর্যন্ত দুই দফায় জামিনের জন্য আবেদন করা হয়েছে।