বিষণ্ণতা না কি বার্ন আউট? কিসে ভুগছেন কীভাবে বুঝবেন?
সারাক্ষণ ক্লান্ত লাগে, কাজে মন বসে না। কীভাবে বুঝবেন যে আপনি হতাশ নাকি অতিরিক্ত কাজের চাপে কাহিল (বার্নআউট)?
ক্লান্তি যখন গ্রাস করে তখন কিছুই ভালো লাগে না। ফোনে ম্যাসেজের শব্দ আসলে মনে হয় ফোন ছুড়ে ফেলে দিই। নিজের বাড়িটাও অসহ্য লাগে, কিন্তু ঘর ছাড়ার তো উপায় নেই। বন্ধুদের সেই অনুভূতি ব্যক্ত করার মতো সঠিক শব্দটাও মাথায় আসে না। শুধু বলেন আমি ক্লান্ত, খুবই ক্লান্ত, জীবনটা যেন শেষ।
এই লক্ষ্মণগুলো দেখা দিলে হতে পারে আপনি বার্ন আউটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। সোজা বাংলায় বললে অতিরিক্ত কাজের চাপে ভীষণভাবে ক্লান্ত। কিন্তু কীভবে বুঝবেন আপনি বিষণ্ণ না কি বার্নড আউট? আর কীভাবেই বা লক্ষ্মণগুলো কাটিয়ে উঠবেন?
হতাশা আর বার্নআউটের মধ্যে পার্থ্যক্য কী?
বার্নআউট বা প্রচণ্ড ক্লান্ত হওয়ার ধারণাটি কাজের সঙ্গে সম্পর্কিত। মহামারির সময় শব্দটি বহুলভাবে ব্যবহৃত হতে দেখা গেছে। টিকটক ভিডিওতে বাচ্চাদের সামলাতে গিয়ে কীভাবে হাঁপিয়ে উঠেছেন তা বোঝাতেই শব্দটি ব্যবহৃত হতো।
কর্মীরা তখনই বার্ন আউট অনুভব করতে পারেন যখন মনে হয় দৈনন্দিন জীবনের নিয়ন্ত্রণ আর তাদের হাতে নেই। সামান্য কাজেই তারা কাহিল হয়ে পারেন। নিজেদের কাজ নিয়ে বিরক্তি আর অবসাদ বোধ করেন। এমনকি কাজ কিংবা সহকর্মীদের ওপর বিরক্তিও জন্মে।
বার্ন আউট হলে মানুষের মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায় কিংবা তারা অকর্মণ্য বোধ করতে পারেন যেন তাদের দ্বারা কোনো কিছুই সম্ভব না। যেসব মানুষকে কাজের খাতিরে অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হয় যেমন স্বাস্থ্যকর্মী বা বিভিন্ন পরিষেবা প্রদানকারী- তারা গ্রাহকদের প্রতি অসহনশীল হয়ে উঠতে পারেন। বার্ন আউটের স্ট্রেসের সঙ্গে আরও কিছু উপসর্গ যোগ হতে পারে যেমন ইনসমনিয়া, মাথাব্যথা ও গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল জটিলতা।
তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বার্নডআউটকে কোনো মেডিক্যাল ইস্যু মনে করে না বরং একে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে একটি অবস্থা হিসেবে চিহ্নিত করে।
অন্যদিকে বিষণ্ণতা ক্লিনিকালি নির্ণয় করা যায়। হতাশাগ্রস্ত মানুষ প্রায়ই অ্যানহেডোনিয়া অনুভব করেন যার কারণে একসময় যেসব কাজ তারা উপভোগ করত, সেসবও আর তাদের ভালো লাগে না।
বার্নআউটের ক্ষেত্রে মনে হবে শখের কাজ করার মতো শক্তি দেহে অবশিষ্ট নেই। কিন্তু হতাশা হলে আর সেই কাজ একেবারেই ভালো লাগবে না।
বিষণ্ণতায় মানুষ হয় খুব বেশি ঘুমায়, নয়তো খুব কম ঘুমায়। মনোযোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে তাদের সমস্যা হতে পারে। বিষণ্ণ ব্যক্তিরা নিজেকে অন্যদের থেকে আলাদাও করে ফেলতে পারেন। খাওয়া কিংবা গোসল করার জন্যও প্রচুর পরিশ্রমের দরকার এমন মনে হতে পারে। বিষণ্ণতায় বিষাদ বা হতাশাও আর চূড়ান্তভাবে গ্রাস করে না। অনেকক্ষেত্রে বিষণ্ণ মানুষ ভাবতে শুরু করে তারা মূল্যহীন, বেঁচে থাকার যোগ্য নয়। এই উপসর্গগুলো অন্তত দুই সপ্তাহ ধরে দেখা দেয়।
অন্যদিকে বার্নআউট হলে কর্মক্ষেত্র থেকে দূরে গেলেই আপনি ধীরে ধীরে তা কাটিয়ে উঠতে পারেন। ছুটি কাটালে বা কাজ থেকে একদিনের বিরতি নিলেই আপনার মন উৎফুল্ল হয়ে ওঠে। কিন্তু অবস্থা পরিবর্তন করলেও বিষণ্ণতা সহজে কাটে না।
জেনেটিক ও পরিবেশগত কারণগুলোর সংমিশ্রণে বিষণ্ণতা সৃষ্টি হতে পারে। যারা কোনো ট্রমাটিক বড় ঘটনার মধ্য দিয়ে যায় বা বড় ধরনের আঘাত পায় তাদের বিষণ্ণতায় ভোগার ঝুঁকি বেশি থাকে।
তবে এমনও হতে পারে যে আপনি একই সঙ্গে বার্নআউট ও বিষণ্ণতা দুটোতেই ভুগছেন।
বার্নড আউট হলে কী করবেন?
সম্ভব হলে কাজ থেকে একদিনের জন্য বিরতি নিন। নিজের মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি মনোযোগী হোন। কিন্তু এরপরেও যদি খারাপ লাগাটা না কাটে সেক্ষেত্রে চাকরি ছেড়ে দিন বা ক্যারিয়ার পরিবর্তন করুন। বিষয়টি বলা সহজ হলেও করা আসলে খুবই কঠিন। কিন্তু তারপরও কাজের পরিবেশ ভালো না হলে সেই কাজ ছেড়ে দেওয়াই ভালো।
অন্যকিছু সহজ পদ্ধতিও অবলম্বন করে দেখতে পারেন। যেমন নোটিফিকেশন বা অফিসের মেইল কিছুক্ষণের জন্য বন্ধ করুন। কোনো বিরক্তিকর মিটিং থাকলে পাঁচ থেকে দশ মিনিট সম্পূর্ণ অন্যকিছু ভাবুন বা অন্যকিছুতে মনো্যোগ দিন। নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ আনাই বার্নআউট থেকে মুক্তির সবচেয়ে সহজ উপায়।
এর বাইরে ব্যায়াম বা অন্য কোনো শরীরচর্চাও করতে পারেন। এতে কাজ সংক্রান্ত দুশ্চিন্তাগুলো কমবে। কিন্তু তারপরও মানিয়ে নিতে না পারলে কোনো মনোবিদের সঙ্গে কথা বলুন ও তাদের পরামর্শ নিন।
সূত্র: দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস