নিরাপদ আবাস ও খাদ্য সংকটে বিলুপ্তির পথে শকুন: গবেষণা
নিরাপদ আশ্রয় ও নিরাপদ খাদ্যের অভাবে বাংলাদেশে শকুন প্রায় বিলুপ্তির পথে। এক গবেষণায় উঠে এসেছে এ তথ্য।
শনিবার (৩ আগস্ট) রাজধানীতে বন বিভাগ কর্তৃক আয়োজিত আন্তর্জাতিক 'শকুন সচেতনতা দিবস ২০২২' উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অফ নেচার (আইইউসিএন) বাংলাদেশ-এর সিনিয়ির প্রোগ্রাম অফিসার এবিএম সারওয়ার আলম বলেন, "মানুষের মধ্যে রোগের বিস্তার নিয়ন্ত্রণ করে বাস্তুতন্ত্র বজায় রাখতে শকুন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, গত কয়েক দশকে দক্ষিণ এশিয়া থেকে ৯৯.৯ শতাংশ শকুনই অদৃশ্য হয়ে গেছে।"
"বাংলাদেশে মাত্র ২৬০টি শকুন এবং দুটি শকুন প্রজনন কলোনি অবশিষ্ট রয়েছে," যোগ করেন তিনি।
মূল বক্তৃতায় সারওয়ার আলম বলেন, বাংলাদেশে শকুন যে ধরনের হুমকির সম্মুখীন হয়েছে, তার মধ্যে ভেটেরিনারি ব্যথানাশক ওষুধ দক্ষিণ এশিয়ায় শকুন কমে যাওয়ার জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী। ভারতীয় উপমহাদেশে ৯টি সহ পৃথিবীতে মোট ২৩ প্রজাতির শকুন পাওয়া যায়। এরমধ্যে বাংলাদেশে ৭ প্রজাতির শকুনের দেখা মিললেও বর্তমানে এদের মধ্যে একটি প্রজাতিকে বিলুপ্ত বলে বিবেচনা করা হয়।
সারওয়ার আলম বলেন, ডাইক্লোফেনাক ও কেটোপ্রোফেন জাতীয় ওষুধের ব্যবহারও শকুন বিলুপ্তির অন্যতম প্রধান কারণ। এসব ওষুধ ব্যবহারের ফলে যে পশু মারা যায়, সেই মৃত গবাদি পশু খাওয়ার মাধ্যমে আক্রান্ত হয় শকুন। কিডনি ফেইলিউরের কারণে তারা উড়ার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে এবং মারা যায়। শকুন কমে যাওয়ায় জলাতঙ্ক, অ্যানথ্রাক্স ইত্যাদি রোগ বেড়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
সারওয়ার আলম আরও বলেন, ২০১০ সালে ডাইক্লোফেনাক এবং ২০২১ সালে কেটোপ্রোফেন উৎপাদন, ব্যবহার ও বিপণন নিষিদ্ধ করা হলেও বাংলাদেশে এখনও কেটোপ্রোফেন ব্যবহার করা হয়।
শকুন পরিবেশকে পরিষ্কার রাখে এবং বাস্তুতন্ত্র বজায় রাখতে অবদান রাখে, তাই এই উপকারী পাখিটিকে বাঁচাতে সবাইকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী শাহাব উদ্দিন জানান, সরকার দেশে শকুনকে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করতে অনেক পদক্ষেপ নিয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, "বাংলাদেশ জাতীয় শকুন সংরক্ষণ কমিটি গঠন, দুটি শকুন নিরাপদ অঞ্চলের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা এবং দশ বছরের (২০১৬-২০২৫) জন্য বাংলাদেশ শকুন সংরক্ষণ কর্মপরিকল্পনা- বাংলাদেশে শকুন সুরক্ষার জন্য দীর্ঘমেয়াদী কাঠামো হিসেবে কাজ করছে।"
প্রধান বন সংরক্ষক মোঃ আমির হোসেন চৌধুরী বলেন, বর্তমানে হবিগঞ্জ, সুন্দরবন ও ময়মনসিংহের রেমা কালেঙ্গায় শকুন দেখা যাচ্ছে। শকুন লম্বা গাছে বাসা বানায়। এরজন্য কয়েক লাখ তালগাছ লাগানো হয়েছে।
"ভারতে বাঘ সংরক্ষণের জন্য ১৯৭২ সালে প্রজেক্ট টাইগার চালু করা হয়েছিল, যা এখন অবদি বিভিন্ন পর্যায়ে চালু রয়েছে। প্রকল্পটি একদিনের জন্যও বন্ধ হয়নি। শকুন সুরক্ষা প্রকল্পেও আমাদের এই ধরনের দীর্ঘমেয়াদী অর্থায়নের প্রয়োজন," বলেন আমির হোসেন।