নিম্নমানের আইপিও নিয়ে প্রশ্নের মুখে বিএসইসি
সুশাসন নিশ্চিত না হলে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হবে না বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই)-র চেয়ারম্যান ইউনুসুর রহমান।
শনিবার 'বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের বর্তমান পরিস্থিতি ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা' শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে সাবেক এই অর্থসচিব বলেন, গত সাত-আট বছরে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছে ৯১টি কোম্পানি। কিন্তু তাদের বেশিরভাগই তাদের শেয়ারহোল্ডারদের প্রত্যাশা পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে এবং শেষ পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিনিয়োগকারীরা।
বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স এসোসিয়েশন (বিএমবিএ) ও ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্ট ফোরাম (সিএমজেএফ) যৌথভাবে এই বৈঠকের আয়োজন করে।
ব্যাংক থেকে দীর্ঘমেয়াদী ঋণের যোগান থাকলে ভালো কোম্পানি পুঁজিবাজারে আসবে না মন্তব্য করে বিএসইসির সাবেক চেয়্যারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, 'গত ১০ বছরে দু-চারটা ভালো কোম্পানি পুঁজিবাজারে এসেছে। কারণ ভালো কোম্পানির অর্থের প্রয়োজন হলে, ব্যাংক বাসায় গিয়ে ঋণ দিয়ে আসে।'
তিনি বলেন, দেশের পুঁজিবাজার সঠিকভাবে গড়ে উঠছে না। পুঁজিবাজার অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ অংশ হওয়া উচিত, কিন্তু সেটা হয়নি। প্রাইভেট সেক্টরে ৯৮ শতাংশ বিনিয়োগ আসছে ব্যাংক থেকে আর ২ শতাংশ পুঁজিবাজার থেকে। এটাই গুরুত্বপূর্ণ সমসা। ভালো কোম্পানি না আসলে পুঁজিবাজারের তেমন কোনো উন্নতি হবে না।
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)-র চেয়্যারম্যান ড. শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম বলেন, 'পুঁজিবাজার নিয়ে আমরা সমালোচনা করি, সমালোচনা করব। কার সাথে তুলনা করে সমালোচনা করছি, সেটাও ভাবতে হবে। বাস্তবতার নিরিখে সমালোচনা করতে হবে।'
তিনি বলেন, 'ভারতের সাথে অনেক কিছু নিয়েই তুলনা করি, কিন্তু সেখানে কি জাঙ্ক শেয়ার নেই? আমেরিকাতে জাঙ্ক শেয়ার নেই? প্রতিদিন কতটা কোম্পানি বন্ধ হচ্ছে বা বিদায় নিচ্ছে, সেটা দেখেন তো?'
'যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিলাম, তখন স্টক মার্কেটকে একভাবে দেখতাম, যখন মাঠে এসেছি, খেলতে গিয়ে দেখছি বইয়ে লেখা বিষয় আর বাস্তবতা আলাদা,' বলেন তিনি।
কারসাজির বিষয়ে তিনি বলেন, 'যখন স্টক এক্সচেঞ্জ তদন্ত রিপোর্ট দ্রুত দেয়, তখন কারসাজিকারীদের ধরতে পারি। তারপর নিয়ম অনুসারে তথ্য প্রমাণ যাচাই-বাছাই করে শাস্তি দিতে আরও ছয় মাস থেকে এক বছর সময় লেগে যায়।'
তিনি বলেন, সুশাসন প্রতিষ্ঠায় বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কারসাজিতে জড়িতদের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ভালো কোম্পানিকে বাজারে আনার উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে।
বিএসইসির সাবেক চেয়্যারম্যান এম খায়রুল হোসেন বলেন, ভারতে ৪০ শতাংশ আইপিওর শেয়ার অভিহিত মূল্যের নিচে। বাংলাদেশে এই মুহুর্তে ১০ শতাংশের বেশি শেয়ার অভিহিত মূল্যের নিচে পাবেন না। বিশ্বের সবদেশের তুলনায় বাংলাদেশে নন-কমপ্লায়েন্স কোম্পানির সংখ্যা কম আছে বলে মনে করেন তিনি।
শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম বলেন, 'আমি বিভিন্ন সময় বলি যারা মার্কেট বোঝেন না, তারা মিউচ্যুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করেন। বিদেশে রোড শো করি। কিন্তু কাউকে বিনিয়োগ করতে বলা আমার কাজ না। বিদেশে রোড শো করাও আমার কাজ না কিন্তু জাতীয় স্বার্থেই এসব করি।'
তিনি বলেন, 'রোড শো নিয়ে যত প্রশ্নই থাক, ভালো ফিডব্যাক পাচ্ছি। দেশের ভিতরে বিভাগীয় শহরে রোড শো হয়েছে, আগামীতে জেলা পর্যায়েও হবে।'
ভালো কোম্পানি আনতে তালিকাভুক্ত-অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানির কর ব্যবহার বাড়ানোর পরামর্শ দেন পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ।
আগে তালিকাভুক্ত ও অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানির কর ব্যবধান ১০ শতাংশ থাকলেও চলতি বাজেটে, সেটা কমিয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
এই প্রসঙ্গে বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি বলেন, কর ব্যবধান বাড়ানো হলে ভালো বা বহুজাতিক কোম্পানি পুঁজিবাজারে আসবে। তারা আসতে আগ্রহী হবে।
তবে এই পরামর্শের সঙ্গে দ্বি-মত পোষণ করে ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী। তিনি বলেন, 'লিস্টেড ও নন-লিস্টেড কোম্পানির করহার পার্থক্য বাড়ানো হলেও কোম্পানি পুঁজিবাজারে আসবে না। কারণ তারা খুব সহজে ব্যাংক থেকে দীর্ঘমেয়াদী ঋণ পায়।'
তিনি উদহারণ দিয়ে বলেন, '১০ শতাংশ কর দিয়ে আন-ট্যাক্স মানি ফেরানোর সুযাগ দেওয়া হয়েছিল, গত ৪০-৪৫ বছরে বহুবার এই সুযোগ দেওয়া হয়েছে কিন্তু কেউ সেভাবে গ্রহণ করেনি। আইন করার পর বাস্তবায়ন না হলে আইন কোনোদিন কাজ করবে না।'
বিএমবিএ ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
তিনি বলেন, পুঁজিবাজারে আগামীতে বিনিয়োগকারীর সংখ্যা বাড়ার অনেক সুযোগ রয়েছে। দেশে এফডিআর অ্যাকাউন্টস ৪৮ লাখ ৭০ হাজার কিন্তু ১৪ হাজার বিও হিসেবে শেয়ার রয়েছে।