স্লিপ টুরিজমের উত্থান: 'নিদ্রা বিলাস' যখন নতুন ধারার পর্যটন
ঈদ বা পুজোর লম্বা ছুটি পেলেই ইচ্ছে করে দূরে কোথাও ঘুরে আসতে। ব্যাগ-ট্যাগ গুছিয়ে ওমনি পাহাড় কিংবা সাগরের সান্নিধ্যে চলে গেলেন। কিন্তু স্রেফ শান্তিতে ঘুমানোর জন্য কখনো কি ছুটি কাটাতে যাওয়ার কথা ভেবেছেন? কিছুটা নতুন শোনালেও দেশের বাইরে কিন্তু ইতোমধ্যেই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে স্লিপ টুরিজম। মানে স্রেফ ভালো করে ঘুমানোর জন্য মানুষ এখন ব্যাগ গুছিয়ে ঘুমোতে যাচ্ছেন বিশেষ সব জায়গায়।
বিশ্বজুড়ে বহু হোটেল ও রিসোর্টে ঘুমানোর জন্য আপনাকে বিশেষ ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে। অদ্ভূত ধারার এই টুরিজমের শুরুটা অবশ্য বেশ সাম্প্রতিক। মহামারির সময় জনপ্রিয়তা লাভ করে স্লিপ টুরিজম। বিশেষ করে অনিদ্রায় ভুগছেন এমন সব মানুষদের কথা মাথায় রেখেই বড় বড় হোটেলগুলো স্লিপ টুরিজমের প্রচার করতে শুরু করে।
নিউ ইয়র্কে পার্ক হায়াট প্রায় এক বছর ধরে ব্রাইট রিস্টোরেটিভ স্লিপ সুট চালু করেছে। ৯০০ স্কোয়ার ফুটের এই সুটে এমন সব সুবিধাদি রয়েছে যা আপনাকে সহজেই ঘুমিয়ে পড়তে সাহায্য করবে। অন্যদিকে রোজউড হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টসও সম্প্রতি আলকেমি অব স্লিপ নামে বিশেষ পরিষেবা চালু করেছে। এর উদ্দেশ্য আপনাকে বিশ্রাম নিতে সাহায্য করা।
ঘুমের জন্য বিশেষায়িত লন্ডনের প্রথম হোটেল জেডওয়েল সাউন্ডপ্রুফিং রুমের সুবিধা দিয়ে থাকে। ২০২০ সালের শুরুর দিকে তা চালু হয়। এর পরের বছর পর্তুগালে সুইডেনের বেডিং প্রতিষ্ঠান হাসটেনস ১৫ রুম বিশিষ্ট বিশ্বের প্রথম হাসটেনস স্লিপ স্পা হোটেল চালু করে।
কিন্তু পর্যটন খাতে হঠাৎ করেই ঘুম এত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠল কীভাবে?
'স্লিপ ফর সাকসেস!' বইয়ের সহ-লেখক ও ঘুম বিশেষজ্ঞ ড. রেবেকা রবিনস বলেন, স্লিপ টুরিজমে পর্যটক এমন হোটেল বুক করেন যেখানে গিয়ে তিনি শান্তিতে ঘুমাতে পারবেন।
সিএনএন ট্রাভেলে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, আগে সাধারণত হোটেলগুলো এমন সব সেবা বা সুবিধা রাখত যেগুলো ঘুমের প্রতি মনোযোগ কমাবে।
মানুষ আগে মনে করত ঘুরতে গেলে ঘুম-খাওয়া পরে, আগে ঘোরাঘুরি। কিন্তু এখন বিষয়টা বদলাচ্ছে। অনেকেই আগে স্বাস্থ্য ও সুস্থ থাকার প্রতি বেশি মনোযোগ দিচ্ছে বলে তিনি মনে করেন।
তবে নতুন এই পর্যটন ধারণায় ভূমিকা রয়েছে মহামারিরও। জার্নাল অব ক্লিনিকাল স্লিপ মেডিসিনে প্রকাশিত এক গবেষণায় অংশ নেওয়া ২,৫০০ প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে ৪০ শতাংশ মহামারির শুরু থেকে তাদের ঘুমের মান কমে যাওয়ার বিষয়টি তুলে ধরেন।
ড. রবিনস বলেন, কোভিডের সময় মানুষ ঘুম নিয়ে প্রচুর সংগ্রাম করেছে। তাই বিষয়টির প্রতি মানুষের মনোযোগ বেড়েছে।
ঘুম কম হলে তা মানসিক স্বাস্থ্যেও বড় প্রভাব রাখে বলে মন্তব্য করেন হিপনোথেরাপিস্ট ও মেডিটেশন কোচ মালমিন্ডার গিল।
তিনি বলেন, ক্লান্ত থাকলে উদ্বেগ, হতাশা, মন খারাপ, মুড সুইং সবই এসে ভর করবে। ফুরফুরে মেজাজের জন্য তাই ভালো ঘুমও প্রয়োজন।
স্লিপ ট্রাভেলের সঙ্গে অনেক প্রতিষ্ঠান মেডিটেশন পরিষেবাও দিচ্ছেন। এছাড়া বিছানায় কেমন বালিশ, কম্বল চান সেগুলোও পিলো মেন্যু থেকে বাছাই করে নেওয়া যাবে। বেডটাইম টি-এর জন্যও সময় ঠিক করে দিতে পারবেন।
লাক্সারি হোটেল ব্র্যান্ড সিক্স সেন্সেস তিন থেকে সাতদিনের স্লিপ প্রোগ্রামও অফার করছে। রোকো ফোর্ট হোটেলও সম্প্রতি দুরাতের ফোর্ট উইংস প্রোগ্রাম চালু করেছে যা অতিথিদের শান্তির ঘুম ঘুমাতে সাহায্য করবে।
'ঘুম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। স্লিপ ট্যুরিজমের ট্রেন্ড আমাদের নজরে আসার পর আমরা অতিথিদের জন্য এই সুযোগ সৃষ্টির কথা ভাবি। লকডাউনের পর সার্বিকভাবেই মানুষ সুস্থ ও ভালো থাকা নিয়ে বেশি ভাবছে,' বলেন রোকো ফোর্ট হোটেলের সিনিয়র পিআর ম্যানেজার ড্যানিয়েলা মোর।
তবে এখন পর্যন্ত অধিকাংশ স্লিপ ট্রাভেল পরিষেবা লাক্সারিয়াস ও নামিদামি হোটেলগুলো ঘিরে গড়ে উঠেছে। ড. রবিনস মনে করেন সব হোটেল ও রিসোর্টেই এ ধরনের পরিষেবা চালু করা উচিত।
'এ ধরনের ভ্রমণ আসলে আপনাকে সতেজ ও পুনরুজ্জীবিত করে তুলবে। আর আপনি ফুরফুরে মেজাজে, উদ্যোমী হয়ে বাড়ি ফিরবেন,' বলেন তিনি।
- সূত্র: সিএনএন