বিশ্বকাপের আগে হেরেই চলেছে বাংলাদেশ
কদিন পরই অস্ট্রেলিয়ায় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। এর আগে একের পর এক ম্যাচ হেরে চলেছে বাংলাদেশ। বিশ্বকাপের আগে নিউজিল্যান্ডে যে ত্রিদেশীয় সিরিজ ধরা হয়েছিল প্রস্তুতি, সেই সিরিজই এখন হতাশার কারণ। প্রথম দুই ম্যাচে লড়াই করতে ব্যর্থ হওয়া বাংলাদেশ তৃতীয় ম্যাচেও কোণঠাসা থাকলো। কিউইদের দেওয়া বড় লক্ষ্য পাড়ি দিতে নেমে সাকিব আল হাসানের দারুণ ইনিংসের পরও হেরে গেল বাংলাদেশ।
বুধবার ক্রাইস্টচার্চের হ্যাগলে ওভালে ত্রিদেশীয় সিরিজে নিজেদের তৃতীয় ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৪৮ রানে গেছে বাংলাদেশ। টানা তিন ম্যাচে হারলো সাকিবের দল। প্রথম ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে হারা বাংলাদেশ পরের দুই ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে হারলো। টানা তিন হারে সিরিজ থেকে ছিটকে গেল সফরকারীরা। ১৩ অক্টোবর নিয়ম রক্ষার ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে মাঠে নামবে বাংলাদেশ।
টস হেরে আগে ব্যাটিং করতে নেমে তেড়েফুঁড়ে শুরু করেন নিউজিল্যান্ডের ওপেনার ফিন অ্যালেন। তার সঙ্গে ইনিংস শুরু করা ডেভন কনওয়ে দারুণ এক ইনিংস খেলেন। শেষ দিকে বাংলাদেশের বোলারদের দিক ভুলিয়ে দিয়ে তাণ্ডব চালান গ্লেন ফিলিপস, অবদান রাখেন মার্টিন গাপটিলও। তাতে ৫ উইকেটে ২০৮ রানের বড় সংগ্রহ পায় স্বাগতিকরা। যা বাংলাদেশের বিপক্ষে তাদের তৃতীয় ২০০ ছাড়ানো ইনিংস ও দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংগ্রহ। জবাবে লিটন দাস, সৌম্য সরকারদের কিছুটা লড়াইয়ের পর সাকিবের অসাধারণ ইনিংসের পরও ৭ উইকেটে ১৬০ রানে থামে বাংলাদেশের ইনিংস।
টি-টোয়েন্টিতে নিজেদের সামর্থ্য, কন্ডিশন ও প্রতিপক্ষ বিবেচনায় ত্রিদেশীয় সিরিজে বাংলাদেশের ভালো করার তেমন সম্ভাবনা ছিল না। সিরিজটি বিশ্বকাপের প্রস্তুতি হিসেবেই নেয় বাংলাদেশ। বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা জানিয়েছিলেন, ফল নিয়ে না ভেবে ভালো ক্রিকেট উপহার দিতে চান তারা। কিন্তু প্রথম দুই ম্যাচে প্রতিশ্রুতির ধারে কাছেও ছিল না বাংলাদেশ। আজ নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ইতিবাচক মনোভাবে ব্যাটিং করলেও শেষ পর্যন্ত তা পর্যাপ্ত হলো না।
বড় লক্ষ্য ব্যাটিং করতে নেমে শুরুটা ভালো করতে পারেনি বাংলাদেশ। দলীয় ২৪ রানে বল ক্যাচ তুলে বিদায় নেন নাজমুল হোসেন শান্ত। উইকেট পড়লেও রান তাড়ার কথা ভেবে দ্রুতই ব্যাট চালাতে থাকেন লিটন। তার সঙ্গে যোগ দেওয়া সৌম্য সরকারকে শুরুতে সংগ্রাম করতে হলেও কিছুক্ষণ পরই মানিয়ে নেন। দুজনই বেশ সাবলীল ব্যাটিং করতে থাকেন। যদিও এই জুটিও দীর্ঘ হয়নি।
দলীয় ৫০ রানের আগেই থামেন ১৬ বলে ৩টি চার ও একটি ছক্কায় ২৩ রান করা লিটন। দুটি উইকেট হারানোর পরও রান রেট ঠিক রেখেই এগোতে থাকে বাংলাদেশ। তৃতীয় উইকেটে ৪৩ রানের জুটি গড়েন প্রায় এক বছর পর টি-টোয়েন্টি খেলতে নামা সৌম্য ও সাকিব। এই জুটি গড়ার পথে শুরু থেকেই মারকুটে মেজাজে খেলতে থাকেন দারুণ ইনিংস খেলা সাকিব। সৌম্য ১৭ বলে ৩টি চারে ২৩ রান করে আউট হলে ভাঙে এই জুটি।
বড় রান তাড়ায় ১০ ওভারে স্কোরকার্ডে ৯০ রান পায় বাংলাদেশ। কিন্তু সৌম্যর বিদায়ের পরে পথ হারায় বাংলাদেশ। সাকিব এক পান্তে ব্যাট হাতে শাসন করতে থাকলেও অন্য প্রান্তে বিদায়ের সুর বেজে ওঠে। একে একে ফিরে যান আফিফ হোসেন ধ্রুব, নুরুল হাসান সোহান, ইয়াসির আলী রাব্বিরা। এ সময়ে সাকিবকে একাই লড়তে হয়। বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক ৪৪ বলে ৮টি চার ও একটি ছক্কায় ৭০ রানের ঝলমলে এক ইনিংসে খেলেন। মোসাদ্দেক ৯ রানে অপরাজিত থাকেন। নিউজিল্যান্ডের অ্যাডাম মিলনে ৩টি উইকেট নেন। ২টি করে উইকেট পান টিম সাউদি ও মাইকেল ব্রেসওয়েল।
এর আগে ব্যাটিং করতে নেমে দলকে উড়ন্ত সূচনা এনে দেন অ্যালেন ও কনওয়ে। উদ্বোধনী জুটিতে ৪.২ ওভারে ৪৫ রানের জুটি গড়েন এ দুজন। এ সময় কনওয়ে ধীর স্থির মেজাজে থাকলেও অ্যালেন ঝড়ো ব্যাটিং করেন। ১৯ বলে ৩টি চার ও ২টি ছক্কায় ৩২ রান করা অ্যালেনের বিদায়ে ভাঙে এই জুটি।
অ্যালেনকে ফিরিয়ে ব্রেক-থ্রু এনে দেন শরিফুল ইসলাম। যদিও উইকেট হারানোর কোনো চাপই বুঝতে হয়নি নিউজিল্যান্ডকে। দ্বিতীয় উইকেটে ৫৪ বলে ৮২ রানের জুটি গড়েন কনওয়ে ও মার্টিন গাপটিল। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে তৃতীয় সর্বোচ্চ রানের মালিক গাপটিল ২৭ বলে ৩টি চার ও একটি ছক্কায় ৩৪ রান করে এবাদত হোসেনের বলে আউট হন গাপটিল।
এরপর ফিলিপসের সঙ্গেও ৩৪ রানের জুটি গড়েন হ্যাগলে ওভারে অবিশ্বাস্য ব্যাটিং গড়ের মালিক কনওয়ে। ১৭তম ওভারে গিয়ে আউট হন তিনি। এর আগে ৪০ বলে ৫টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৬৪ দারুণ এক ইনিংস খেলেন বাঁহাঁতি এই ব্যাটসম্যান। কনওয়ের বিদায়ের পর ছক্কার বৃষ্টি ঝরান ফিলিপস। মাত্র ১৯ বলে হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করা কিউই এই ব্যাটসম্যান ২৪ বলে ২টি চার ও ৫টি ছক্কায় ৬০ রানের বিস্ফোরক এক ইনিংস খেলেন।
বল হাতে এদিন বাংলাদেশের কোনো বোলারই সুবিধা করতে পারেননি। ৪ ওভারে ৩৭ রানে ২ উইকেট নেওয়া মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন কেবল ওভার প্রতি ১০ রানের কম খরচা করেন। বাকি ৫ বোলারই ১০ রানের বেশি করে খরচা করেন। এবাদত হোসেন ৪ ওভারে ৪০ রানে ২ উইকেট নেন। ৪ ওভারে শরিফুল ইসলামের খরচ ৪১ রান, নেন এক উইকেট। অধিনায়ক সাকিব ৪ ওভারে ৪০ রানে উইকেটশূন্য থাকেন।