তীব্র হয়েছে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং, উপকূলীয় অঞ্চলে আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপটি তীব্র ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে শুরু করেছে। ফলে রবিবার (২৩ অক্টোবর) ১৯টি উপকূলীয় জেলার প্রশাসন আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত ও স্থানীয়দের সতর্ক করতে শুরু করেছে।
পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত গভীর নিম্নচাপটি আরও সামান্য উত্তর–পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে তীব্র ঘূর্ণিঝড় 'সিত্রাং'-এ রূপান্তরিত হওয়ায় বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে- চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৪ নাম্বার স্থানীয় সতর্কতা সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
এর আগে আজ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, সরকার উপকূলীয় জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ও ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছে।
মংলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কমলেশ মজুমদার জানিয়েছেন, 'মোট ১০৩টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে। সরকারি ও বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবীদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
এদিকে সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বন কর্মকর্তা মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন বলেছেন, বন বিভাগ বিভিন্ন স্টেশন ও পেট্রল ফাঁড়িকে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে থাকতে নির্দেশ দিয়েছে।
ভোলায় ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কায় ৭৪৬টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে। জেলার ১,৩০৬টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে কাজ করার জন্য প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক তৌফিক-ই-এলাহি চৌধুরী।
এছাড়া জেলার সাত উপজেলায় আটটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ স্থাপন করা হয়েছে। পাশাপাশি ১৩,৬৬০ জন ঘুর্নিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি'র (সিপিপি) স্বেচ্ছাসেবী প্রস্তুত রয়েছেন।
ভোলা'র ৭০টি ইউনিয়ন ও সাতটি জেলার প্রতিটির জন্য একটি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক জানান, বিচ্ছিন্ন চরের বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয় আনতে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
পটুয়াখালীর জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা সুমন চন্দ্র দেবনাথ জানান, জেলার আটটি উপজেলার ৫০টি চরের বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যাওয়ার জন্য লাউডস্পিকারে সতর্ক করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, জেলায় ৭০৩টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র ও ২৬টি মুজিব কেল্লা প্রস্তুত করা হয়েছে।
প্রয়োজনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকারি-বেসরকারি বহুতল ভবনগুলোও আশ্রয়কেন্দ্র হিসবে ব্যবহার করা হবে বলেও জানান তিনি। গৃহপালিত প্রাণীদের জন্যও নিরাপদ আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজুর রহমান জানিয়েছেন, জেলার নয় উপজেলায় ৩৪৪টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে।
'এসব আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় দুই লাখ আট হাজার ৪৩০ জন মানুষ আশ্রয় নিতে পারবেন। আবহাওয়া অধিদপ্তর ও কর্তৃপক্ষ থেকে নির্দেশনা পেলে মানুষজনকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসা শুরু কবে,' তিনি বলেন।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সাতক্ষীরা, খুলনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, বরগুনা, পিরোজপুর, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, লক্ষীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার জেলা এবং এগুলোর উপকূলীয় এলাকার চরাঞ্চলগুলোতে স্বাভাবিকের চেয়ে ৩ থেকে ৫ ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাস হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে পূর্ভাবাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
জলোচ্ছ্বাসের উচ্চতা সময়ের সঙ্গে বাড়তে পারে বলেও সতর্ক করেছে এটি।
দুর্যোগ মোকাবিলায় আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়েছে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন। জেলায় ৫৭৬টি আশ্রয়কেন্দ্র ও ৯,০০০ স্বেচ্ছাসেবীকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
ট্যুরিস্ট পুলিশ, লাইফগার্ড ও সৈকত কর্মীরা কক্সবাজারের সৈকত থেকে সতর্কতামূলক দূরত্ব বজায় রাখতে পর্যটকদের আহ্বান করছেন।
কানাডা'র সাসকাচোয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ু গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন,
জাপানের কৃত্রিম ভূ-উপগ্রহ থেকে প্রাপ্ত ছবি বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, ঘূর্ণিঝড়ের কারণে সৃষ্ট ভারী বৃষ্টি, শক্তিশালী বাতাস ও জলোচ্ছ্বাসে উপকূলে ব্যাপক ক্ষতি হতে পারে।
'ফলে দ্রুত উপকূলের মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া দরকার,' তিনি বলেন।