ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের মাঝেও খোলা প্রাথমিক বিদ্যালয়! বিভ্রান্ত-অসন্তুষ্ট অভিভাবকরা
মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় চট্টগ্রাম নগরের কাতালগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যেয়ে দেখা যায়, একাই সন্তানের জন্য অপেক্ষা করছেন গৃহিনী নাজমা বেগম, চোখেমুখে বিরক্তির ছাপ। ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং-এর কারণে সৃষ্ট ভয়াবহ পরিস্থিতি সত্ত্বেও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর কর্তৃক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা রাখার সিদ্ধান্তে অসন্তুষ্ট তিনি।
নাজমা বেগম বলেন, "রাতে নগরের অনেক এলাকায় জোয়ারের পানি ঢুকেছে, একারণে বেশিরভাগ অবিভাবকই সন্তানদের স্কুলে নিয়ে আসতে পারেননি। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে যখন দেশের প্রায় সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ, সেখানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা রাখার সিদ্ধান্ত কিভাবে নেয় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর?"
কাতালগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুপন মল্লিক টিবিএসকে বলেন, "আজ ১০ শতাংশেরও কম শিক্ষার্থী স্কুলে এসেছে। কিন্তু যেহেতু স্কুল বন্ধ রাখার কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি তাই আমরা স্কুলে এসেছি। উল্টো গতকাল রাতে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর নিয়মিত পাঠদান অব্যাহত রাখতে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা ও শিক্ষকদের নির্দেশনা দেয়।"
বেলা ১১ টার দিকে চকবাজার এলাকার গুলএজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায় পুরো স্কুলে সুনসান নিরবতা। দ্বিতীয় শ্রেণির একটি ক্লাসে সাত শিক্ষার্থীকে পাঠদান করছেন শিক্ষিকা সাবিনা সুলতানা।
শিক্ষিকা বলেন, "এ ক্লাসে প্রতিদিন ৫০ জন শিক্ষার্থী উপস্থিত থাকে, কিন্তু আজ মাত্র সাতজন। অন্যান্য ক্লাসগুলোতে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি নেই। আশপাশের অনেক এলাকায় পানি উঠেছে, তাই শিক্ষার্থীরা স্কুলে আসতে পারেনি। কিন্তু যেহেতু স্কুল বন্ধ রাখার কোনো সিদ্ধান্ত নেই, তাই আমাদের আসতে হলো।"
তবে শহরের বেশ কয়েকটি নিম্নাঞ্চলে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলো বন্ধ থাকতে দেখা গেছে।
সকাল ১০ টার দিকে নগরের চান্দগাঁও এলাকার শমসের পাড়া হাজ চাঁন্দমিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সিডিএ প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ বেশ কয়েকটি প্রথমিক বিদ্যালয় বন্ধ অবস্থায় পাওয়া যায়।
স্থানীয় অভিভাবক নুরজাহান বেগম বলেন, "ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং-এর কারণে স্কুল বন্ধ আছে বলে জানি, তাই ছেলে মেয়েদের স্কুলে পাঠাইনি।"
এদিকে সোমবার রাতে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং-এর প্রভাবে চট্টগ্রাম নগরের হালিশহর, কাপাসগোলা, বাকলিয়াসহ নগরীর নিচু এলাকা গুলো পানিতে তলিয়ে যায়।
তাছাড়া, দেশের প্রধান ভোগ্যপণ্যের বাজার খাতুনগঞ্জে দোকান ও গুদামে পানি ঢুকে অর্ধশত কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়িরা।
এদিকে, সোমবার প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক নাসরিন সুলতানা স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং-এর ফলে সৃষ্ট ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যেও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা রাখা হবে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের এ সিদ্ধান্তের সমালোচনা হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, চট্টগ্রাম, খুলনা এবং বরিশাল বিভাগের উপকূলীয় জেলাসমূহসহ অন্যান্য জেলায় ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং-এর সম্ভাব্য প্রভাবের বিষয়ে সর্তকতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণসহ বিদ্যালয়গুলোতে শ্রেণি পাঠদান চালু রাখার বিষয়ে স্থানীয় জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতে হবে।
ঘূর্ণিঝড়ের মাঝেও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা রাখার সিদ্ধান্তের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (পলিসি এবং অপারেশন) মনীষ চাকমা টিবিএসকে বলেন, "বিজ্ঞপিতে বলা হয়েছে স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে বিদ্যালয়ে পাঠদান অব্যাহত রাখার জন্য। আমরা চাইলেই বিদ্যালয় বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত দিতে পারি না।"
এ বিষয়ে জানতে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সংযোগ স্থাপন করা যায়নি।