মর্টগেজ রেখে ব্যাংক ঋণ, যশোর বিসিকের শিল্প উদ্যোক্তাদের মধ্যে স্বস্তি
যশোর বিসিকের প্লট গ্রহীতাদের নামে অপ্রত্যাহারযোগ্য পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দলিল রেজিস্ট্রিকরণে আইনের মারপ্যাঁচের অবসান হয়েছে। পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দলিল সম্পাদনে আইনগত বাধা নেই জানিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য যশোর জেলা রেজিস্ট্রারকে চিঠি পাঠিয়েছেন মহা-পরিদর্শক (নিবন্ধন) শহীদুল আলম ঝিনুক। বিষয়টি জেলার সকল সাব-রেজিস্ট্রারকে অবহিতকরণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এর ফলে শিল্প-কলকারখানা কর্তৃপক্ষ চাইলে প্লট মর্টগেজ রেখে ব্যাংক ঋণ নিতে পারবেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন যশোরের ঝুমঝুমপুর বিসিক শিল্প নগরীর প্রধান মেহেদি হাসান। এ খবরে শিল্প উদ্যোক্তাদের মধ্যে উচ্ছ্বাসের সৃষ্টি হয়েছে। সংকট কাটিয়ে ফের ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছেন কুটির ও ক্ষুদ্র শিল্প উদ্যোক্তারা।
ঝুমঝুমপুর বিসিক শিল্প নগরীর প্রধান মেহেদি হাসান জানান, বর্তমানে ১১৯টি শিল্প প্রতিষ্ঠান চালু রয়েছে। কিন্তু বৈশ্বিক মহামারি করোনার ধাক্কায় প্রতিষ্ঠানগুলো আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে। অর্থ সংকটের কারণে অনেকেই পণ্য উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছেন। সংকট উত্তরণ ও নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর আশায় যশোর বিসিকের ৩০টি শিল্প কলকারখানার মালিক বিভিন্ন ব্যাংকে ঋণের আবেদন করেন। কিন্তু যশোরের সাব-রেজিস্ট্রি অফিসগুলো আইনের মারপ্যাঁচ দেখিয়ে বিসিকের প্লট ইজারা গ্রহীতাদের নামে অপ্রত্যাহারযোগ্য পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দলিল সম্পাদনে রাজি হয়নি। যে কারণে প্লট ইজারা গ্রহীতাদের নামে 'পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দলিল' সম্পাদনে আইনগত বাধা নেই মর্মে বিসিক প্রত্যায়নপত্র দেয়। কিন্তু যশোর জেলা রেজিস্ট্রার অপ্রত্যাহারযোগ্য পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দলিল রেজিস্ট্রিকরণে রাজি হননি।
একপর্যায়ে বিসিক কর্মকর্তারা জেলা রেজিস্ট্রারের সাথে দেখা করে আইনগত বাধা না থাকার বিষয়টি অবহিত করেন এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখান। এতকিছুর পরও জেলা রেজিস্ট্রার দৃশ্যমান কোন উদ্যোগ নেননি। এর ফলে ব্যাংক ঋণ পাওয়ার বিষয়টি ঝুলে যায়।
বিসিকের প্রমোশন অফিসার আজাহার আলী জানান, যশোরে নিবন্ধিত ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কলকারখানার সংখ্যা দুই সহস্রাধিক। করোনার ধাক্কায় অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে অর্থ সংকট দেখা দিয়েছে। তিনি বলেন, ফের ঘুরে দাঁড়াতে বিসিক থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হচ্ছে।
যশোর শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপক আবু সাইদ জানান, রেসকো এন্ড ব্রেড ফ্যাক্টরি ও মদিনা অটো নামে দুটি শিল্প প্রতিষ্ঠান ঋণের জন্য আবেদন করে রেখেছে। কিন্তু পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দলিল দিতে না পারায় ঋণ দেয়া সম্ভব হয়নি। বিভিন্ন ব্যাংকে একই কারণে ঋণ বিতরণ আটকে আছে বলেও জানান তিনি।
ঝুমঝুমপুর বিসিকে অবস্থিত মদিনা মেটালের স্বত্বাধিকারী ফারুক হোসেন বলেন, সরকার শিল্প কলকারখানায় প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। কিন্তু যশোর বিসিকের শিল্প উদ্যোক্তাদের ঘুরে দাঁড়াতে দেয়নি যশোর রেজিস্ট্রি অফিস। আইনের মারপ্যাঁচ দেখিয়ে 'পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দলিল' রেজিস্ট্রি করেনি। যে কারণে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন যশোরের ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প উদ্যোক্তারা। তারা ব্যাংক ঋণ পায়নি।
এনায়েত ইঞ্জিনিয়ারিং কারখানার মালিক আকতার হোসেন বলেন, করোনার ধকল যেতে না যেতে এখন চলছে ব্যবসায়ীক মন্দাভাব। পণ্য উৎপাদন অর্ধেকে নেমেছে। বেশিরভাগ ব্যবসায়ী রয়েছে নগদ টাকা সংকটে। এই অবস্থায় বিসিকের প্লট গ্রহীতাদের নামে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দলিল সম্পাদনের নির্দেশ দিয়েছেন মহা-পরিদর্শক (নিবন্ধন)। যে কারণে এখন আর কোন বাধা নেই। এখন থেকে এখানকার উদ্যোক্তারা ব্যাংক ঋণ পাবেন। যদিও ব্যাংকগুলো বর্তমানে কোন ঋণ দিচ্ছে না বলে শুনছি। যদি ব্যাংক ঋণ পাওয়া যায় তাহলে উদ্যোক্তারা ঘুরে দাঁড়াতে পারবে বলে আশা করছি।
এ বিষয়ে যশোর জেলা রেজিস্ট্রার শাহজাহান সর্দার বলেন, আইনি জটিলতা কেটে গেছে। বিসিকের প্লট গ্রহীতাদের নামে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দলিল সম্পাদনের নির্দেশ দিয়েছেন মহা-পরিদর্শক (নিবন্ধন), যে কারণে এখন আর কোন বাধা নেই।
যশোর বিসিক সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) দেশের ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের উন্নয়ন ও সম্প্রসারণে নিয়োজিত সরকারি খাতের মুখ্য প্রতিষ্ঠান। ১৯৫৭ সালে বিসিকের জন্ম। তবে যশোর বিসিকের যাত্রা ১৯৬২ সালে। ৫০ দশমিক ৪ একর জমিতে প্লট রয়েছে ২৯২টি। ১২০ জন শিল্প উদ্যোক্তা এসব প্লটের বরাদ্দ পেয়ে গড়ে তুলেছেন বিভিন্ন ধরনের শিল্প-কলকারখানা।