কাতার বিশ্বকাপ সামনে রেখে চাঙ্গা হয়ে উঠেছে দেশের ক্রীড়া সামগ্রীর বাজার
বৈশ্বিক মন্দা ও মূল্যস্ফীতির মাঝেই বিক্রি বেড়েছে দেশের ক্রীড়া সামগ্রীর বাজারে। কাতারে ২০ নভেম্বর থেকে শুরু হতে যাওয়া ফিফা ফুটবল বিশ্বকাপকে ঘিরে ইতোমধ্যেই সারাদেশের ক্রীড়ামোদীরা জার্সিসহ সবধরনের খেলার সামগ্রীর কেনাকাটায় মেতে উঠেছেন।
বিশ্বকাপকে ঘিরে আগামী দেড় মাসে অন্তত ১ হাজার কোটি টাকার খেলার সামগ্রী বিক্রি হবে বলে আশা করছেন এ খাতের বিক্রেতা ও আমদানিকারকরা।
বাংলাদেশ স্পোর্টস গুডস মার্চেন্টস ম্যানুফ্যাকচারস অ্যান্ড ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএসজিএমএমআইএ)- এর সভাপতি এম আর শামীম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "সারাদেশে স্পোর্টস গুড বিক্রি করে এমন ২৫০ জন ব্যবসায়ী আমাদের সমিতিভুক্ত। এরমধ্যে অন্তত ৫০ জন সদস্যদের প্রতিজন বিশ্বকাপ উপলক্ষ্যে গড়ে ১০ থেকে ১৫ কোটি টাকার পণ্য আমদানি করেছে। এছাড়া, দেশে প্রায় ১০০ কোটি টাকার জার্সি ও খেলার সামগ্রী তৈরি করা হয়েছে।"
"আশা করছি এই বিশ্বকাপ মৌসুমে ব্যবসায়ীরা ৯০০ থেকে ১,০০০ কোটি টাকার ব্যবসা করবেন সারাদেশে," বলেন তিনি।
রাজধানীর বাংলাদেশ স্পোর্টস এর সত্বধীকারী ও বিএসজিএমএমআইএ সাধারন সম্পাদক মো. হাবিবুর রহমান বলেন, "আমরা বিশ্বকাপ উপলক্ষ্যে গত জুন থেকে আমদানি শুরু করেছিলাম। এরমধ্যে দেশে প্রায় ৫০ লাখ পিস জার্সি ও ১ লাখের কাছাকাছি ফুটবল চীন, পাকিস্তান ও ভারত থেকে আমদানি করা হয়েছে।"
তবে সম্প্রতি ডলার সংকটের কারণে ও এলসি খুলতে না পারায় আরও প্রায় ১০ লাখ পিস জার্সি ও ৫০ হাজার ফুটবলের অর্ডার দেশে আনা যাচ্ছেনা বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশ স্পোর্টস গুডস মার্চেন্টস ম্যানুফ্যাকচারস অ্যান্ড ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএসজিএমএমআইএ) তথ্য অনুযায়ী, দেশে খেলার সামগ্রী বর্তমান বাজারের আকার প্রায় ১,৫০০ কোটি টাকা; বছরে এই বাজারের বৃদ্ধির হার ১০ থেকে ১৫ শতাংশ। দেশের চাহিদার প্রায় ৪০ শতাংশ চাহিদা অভ্যন্তরীণভাবে পুরণ করা হচ্ছে। তবে, চাহিদার সিংহভাগ পূরণ হচ্ছে বিদেশি বাজারের মাধ্যমে।
বিএসজিএমএমআইএ নেতারা জানান, সম্ভাবনাময় এ খাতে দেশীয় উৎপাদকদের অবদানও ক্রমেই বাড়ছে। কাতার বিশ্বকাপকে ঘিরে স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলো প্রায় ৪০ লাখ পিস জার্সি তৈরি করেছে। এছাড়া স্থানীয়ভাবে তৈরি প্রায় ৫০ লাখ পিস পতাকা স্পোর্টস সামগ্রীর দোকানগুলোতে বিক্রি হবে। তবে খুচরা পতাকা বিক্রির এই পরিমাণ আরও অনেক বেশি।
এবারের বিশ্বকাপ ফুটবলকে সামনে রেখে ক্রীড়া বাজারে বেচাকেনা ব্যাপক বেড়েছে বলে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানান সারাদেশের ব্যবসায়ীরা।
চট্টগ্রামে খেলার সামগ্রী কেনাকাটার সবচেয়ে বড় ঠিকানা এম এ আজিজ স্টেডিয়াম মার্কেট। বিদেশ থেকে আমদানি করা পণ্য হোক বা দেশে উৎপাদিত স্থানীয় পণ্য- সবই মেলে এম এ আজিজ স্টেডিয়াম মার্কেটে। বিশ্বকাপের ফুটবলকে ঘিরে পাইকারী বা খুচরা সবধরনের ক্রেতার ভিড়ে নিয়মিত জমজমাট স্টেডিয়াম পাড়া। এছাড়া, আসন্ন শীতকালীন খেলাধুলার সামগ্রীর বিকিকিনিও বেড়েছে গত একমাসে।
ব্যবসায়ীরা জানান, বাজারে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের জার্সি। বিক্রি হওয়া জার্সির প্রায় ৯০ শতাংশই এই দুই দেশের। এছাড়া জার্মানি, ফ্রান্স, স্পেন, পর্তুগাল, ইংল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস ও ক্রোয়েশিয়ার জার্সির গ্রাহকও কম-বেশি আছে।
গত রোববার বিকেলে চট্টগ্রামের এম এ আজিজ স্টেডিয়াম মার্কেটের চিটাগং স্পোর্টসে জার্সি কিনতে যান বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী লাবণ্য ও সাজিদ। লাবণ্য টিবিএসকে বলেন, "সাজিদের পছন্দ আর্জেন্টিনা; আমার ব্রাজিল। নিজেদের জন্য ছাড়াও পরিবারের সদস্যদের জন্যও জার্সি কিনেছি।"
অন্যান্যবারের চাইতে এবার ফুটবলপ্রেমীদের উন্মাদনা একটু বেশি। ফুটবল নিয়ে দেশের মানুষের মাঝে সবসময় অন্যরকম আবেগ কাজ করলেও এবারের বিষয়টি একটু ভিন্ন। কারণ এবার মেসি-রোনালদোর শেষ বিশ্বকাপ; তাছাড়া বিশ্বকাপটি হচ্ছেও এশিয়াতেই, ফলে সব মিলিয়ে এবারের বিশ্বকাপে মানুষের আগ্রহটা অনেক বেশি বলে উল্লেখ ক্রেতারা।
কুমিল্লার ক্যান্টনম্যান্ট মার্কেটের ব্যবসায়ী মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "দুই সপ্তাহ আগে আড়াই লাখ টাকার জার্সি ও ফুটবল এনেছিলাম। সেগুলো বিক্রি হয়ে যাওয়ায় আজ আবারও ঢাকা যাচ্ছি। অন্যান্যবারের চাইতে এবার ব্যবসা ভালো হচ্ছে।"
রাজধানীর সরচেয়ে বড় স্পোর্টস বাজার সমবায় টুইন টাওয়ার মার্কেটের ব্যবসায়ী এস এম সিরাজউদৌলা বলেন, "জার্সির পর ফুটবলের দিকে সবচেয়ে বেশি চাহিদা ক্রেতাদের। বিশ্বকাপের অফিসিয়াল বল 'আল রিহলা'র আদলে তৈরি 'কাতার ফুটবল' নামের বিভিন্ন মানের রেপ্লিকা পাওয়া যাচ্ছে মার্কেটে। ৬৮০ টাকা থেকে শুরু করে ১৪০০ টাকা পর্যন্ত দামে বিক্রি হচ্ছে সেগুলো।"
"ফুটবল বা জার্সি ছাড়াও বিভিন্ন দলের থিম অনুযায়ী চাবির রিং, রিস্ট ব্যান্ড ইত্যাদি স্মারকও বিক্রি করছি আমরা," যোগ করেন তিনি।
আগামী ২০ নভেম্বর কাতারের আল বাইত স্টেডিয়ামে শুরু হবে ফুটবল বিশ্বকাপের ২২ তম আসরের; চলবে ১৮ই ডিসেম্বর পর্যন্ত।