শ্বাসরুদ্ধকর লড়াইয়ে বেঁচে রইল ক্যামেরুন-সার্বিয়ার আশা
কাতার বিশ্বকাপের অন্যতম সেরা ম্যাচ উপহার দিল ক্যামেরুন এবং সার্বিয়া। গ্রুপ 'জি'র এই ম্যাচটি শেষ হয়েছে ৩-৩ সমতায়। ৩-১ গোলে পিছিয়ে পড়েও ম্যাচে সমতা ফেরায় ক্যামেরুন।
কাতারের আল-জানিইউব স্টেডিয়ামে পেন্ডুলামের মতো দুলতে থাকা ম্যাচে সার্বিয়া-ক্যামেরুনের কেউ কাউকে ছাড় দেয়নি একচুলও। হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের সব উপকরণই ছিল দুই দলের এই ম্যাচে।
হারলেই বেজে যেতে পারে বিদায় ঘন্টা, দুই দলের সামনেই ছিল এমন সমীকরণ। সেই হিসেবে ম্যাচটি দুই দলেরই একটু দেখে শুনে শুরু করাটাই স্বাভাবিক ছিলো। কিন্তু সাবধানতার ধার ধারেনি সার্বিয়া কিংবা ক্যামেরুন। দুই দলের দুর্দান্ত আক্রমণাত্মক খেলার সুবাদে কাতার বিশ্বকাপের অন্যতম সেরা ম্যাচ দেখল ফুটবল প্রেমিরা।
ম্যাচের প্রথমার্ধের শুরুতেই দুই দল ঝাঁপিয়ে পড়ে একে অপরের উপর। শারীরিক শক্তিমত্তায় ভরপুর দুই দলের খেলায় ছিল ফাউলের ছড়াছড়ি। প্রথম ১৫ মিনিটের মধ্যে দুটি গোলের সু্যোগ নষ্ট করেন সার্বিয়ার মিত্রোভিচ। তার একটি শট পোস্টে লেগে ফিরে আসে, অপর একটি শট বক্সের মাঝে থেকে বাইরে মারেন।
সার্বিয়ার আক্রমণ সামলে ক্যামেরুনও ধেয়ে আসছিল বারবার। তার ফল হিসেবেই ২৯ মিনিটে কর্নার থেকে কাস্তিলেত্তোর হেডে এগিয়ে যায় আফ্রিকান সিংহরা। গোল খেয়ে যেন আরো তেঁতে উঠে সার্বিয়া। আক্রমণের পর আক্রমণে ক্যামেরুনের রক্ষণকে ব্যতিব্যস্ত করে তুলে তারা। ৪৫ মিনিটে তাদিচের ক্রসে মাথা ছুঁইয়ে ম্যাচে সমতা ফেরান সার্বিয়ার পাভলোভিচ। এর ৩ মিনিট পরই সার্বিয়া এগিয়ে যায় মিলিঙ্কোভিচ সাভিচের বুদ্ধিদীপ্ত ফিনিশিংয়ে। প্রথমার্ধ শেষ হয় সার্বিয়ার ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে থাকার মধ্যে দিয়ে।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেও খেলায় একই রক্ম উত্তেজনা বজায় ছিল। ৫৩ মিনিটে অসাধারণ দলীয় প্রচেষ্টায় গোল করেন সার্বিয়ার মিত্রোভিচ। অনেকেই ক্যামেরুনের শেষ দেখে ফেলেছিলেন তখনই। কিন্তু লড়াই না করে হেরে যাওয়ার পাত্র যে তারা নয়, সেটি দেখিয়ে দিয়েছে আফ্রিকান সিংহরা।
৬৩ মিনিটে ক্যামেরুন অধিনায়ক আবু বকরের গোল ম্যাচে ফিরিয়ে আনে ক্যামেরুনকে। ৩ মিনিট পরই ম্যাচে সমতা ফেরান চুপো মোটিং, উল্লাসে ফেটে পড়েন ক্যামেরুনের খেলোয়াড় এবং সমর্থকেরা।
এরপর দুই দলই জয়সূচক গোলের জন্য হন্য হয়ে খেলতে থাকে। কিন্তু কখনো গোলকিপার, কখনো বাজে নিয়ন্ত্রণের কারণে গোলের দেখা পায়নি কেউই। ম্যাচ শেষ হয় ৩-৩ সমতায়। দুই দলের খেলার বিচারে যেটি ন্যায্য ফলাফলই বলা যায়।
পরিসংখ্যানেও দুই দলের সমানে সমান লড়াইয়ের ছাপ স্পষ্ট। যদিও বল দখলের ক্ষেত্রে সার্বিয়া এগিয়ে ছিল, ৬০% বল দখলে রেখে সার্বিয়ার গোলের প্রচেষ্টা ছিল ১৫ বার, অপরদিকে ১৩ বার গোলের চেষ্টা করে ক্যামেরুন।
এই ড্র'র ফলে ক্যামেরুন এবং সার্বিয়া এখন এক পয়েন্ট নিয়ে যথাক্রমে টেবিলের ৩য় ও ৪র্থ স্থানে অবস্থান করছে। দুই দলের সামনেই নক-আউট পর্বে যাওয়ার পথ খোলা রইল, তবে শর্ত একটাই, নিজেদের শেষ ম্যাচ দুই দলকেই জিততে হবে।
ক্যামেরুনের কাজটা সার্বিয়ার তুলনায় অনেক বেশিই কঠিন, কারণ শেষ ম্যাচে তাদের প্রতিপক্ষ ব্রাজিল, অপরদিকে সার্বিয়া লড়বে তাদের রাজনৈতিক চির-প্রতিদ্বন্দী সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে।