বিশ্বকাপে ইংল্যান্ড-ওয়েলস মুখোমুখি কেন?
কাতার বিশ্বকাপে 'বি' গ্রুপে নিজেদের শেষ ম্যাচে মুখোমুখি হবে ইংল্যান্ড এবং ওয়েলস। জিতলে বা ড্র করলে তো বটেই, বড় ব্যবধানে না হারলে ইংল্যান্ডের সামনে সুযোগ থাকবে নক-আউটে উঠার। অপরদিকে ওয়েলসকে জিততে তো হবেই, তাকিয়ে থাকতে হবে ইরান-যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাচের ফলাফলের দিকেও, অর্থাৎ জিতলেও নক-আউটে উঠা নিশ্চিত নয় তাদের।
তাই আজ বাড়ি ফিরে যেতে হবে হ্যারি কেইন কিংবা গ্যারেথ বেলের যেকোনো একজনকে। কিন্তু বিশ্ব ফুটবলের এই দুই তারকা খেলতে পারতেন একই দলে, যদি ইংল্যান্ড-ওয়েলস আলাদা দল না পাঠিয়ে যুক্তরাজ্য হিসেবে একটি দলই বিশ্বকাপে পাঠাতো। কেন কখনো সেটি হয় না?
ভেবে দেখুন তো, বিশ্বকাপে একই দলে খেলছেন হ্যারি কেইন-গ্যারেথ বেল-অ্যান্ড্রু রবার্টসনরা, ইংল্যান্ড-ওয়েলস-স্কটল্যান্ড আলাদা দল না হয়ে খেলছে এক যুক্তরাজ্যের নাম নিয়ে! আদতে সেটি কখনোই ঘটেনি, সুদূর ভবিষ্যতে ঘটার সম্ভাবনা নেই বললেও চলে।
যুক্তরাজ্য নামের নিচে একসাথে থাকার পরেও যে যেকোনো খেলার ক্ষেত্রে নিজেদের আলাদা আলাদা দল পাঠায় ইংল্যান্ড, ওয়েলস, স্কটল্যান্ড এবং নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড। মনে প্রশ্ন জাগতেই পারে, যুক্তরাজ্য হিসেবে কেন একটি দল পাঠায় না তারা?
উত্তর খুঁজতে ফিরে যেতে হবে ১৮৭২ সালে, ইতিহাসের প্রথম আন্তর্জাতিক ফুটবল ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল সেই বছর, ইংল্যান্ড এবং স্কটল্যান্ড মুখোমুখি হয় একে অপরের। তখন থেকেই আন্তর্জাতিক দেশগুলোর মধ্যে ফুটবল ম্যাচ খেলার চিন্তা মাথায় আসে সবার।
অর্থাৎ যুক্তরাজ্য থেকেই আন্তর্জাতিক পর্যায়ে একে অপরের বিপক্ষে খেলার ধারণা উদ্বুদ্ধ হয়। আর সেটির প্রথম উদাহরণ হিসেবে যুক্তরাজ্যেরই দুটি অংশ একে অপরের বিপক্ষে খেলে, ইংল্যান্ড এবং স্কটল্যান্ডের আলাদা আলাদা দল হিসেবে।
১৯ শতাব্দীর শেষ দিকের আগে ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, ওয়েলস এবং আয়ারল্যান্ড ব্যতিত অন্য কোনো দেশ একে অপরের বিপক্ষে ফুটবল খেলেনি। এই চারটি দেশই সবসময় একে অপরের বিপক্ষে খেলতো। তাই ১৯০৪ সালে ফিফা গঠিত হওয়ার পর এই ধারাকে সম্মান করে চার দেশকে চারটি আলাদা দল করেই খেলার অনুমতি দেয়।
এরপর আবার রিপাবলিক অব আয়ারল্যান্ড এবং নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডও ভাগ হয়ে যাওয়ার পর আলাদা আলাদা দল গঠন করা শুরু করে। অর্থাৎ একেবারে প্রথম থেকেই যুক্তরাজ্যের দেশগুলোর এই আলাদা দল হিসেবে খেলার ধারা চলে এসেছে।
এরপর আর কখনো একসাথে দল গঠন না করার পেছনের সবথেকে বড় কারণ হল স্বাধীনতা। নিজেদের আলাদা দল গঠন করার সুযোগ কোনো দেশই ছাড়তে চাইবে না। যার ফলে চার দেশের খেলোয়াড়েরা যুক্তরাজ্যের পতাকাতলে এক হয়ে খেলার সুযোগ কখনোই পাননি। যা দুয়েকবার এমন ঘটেছে সেসবই অগুরুত্বপূর্ণ টুর্নামেন্ট বা ম্যাচে।
শুধুমাত্র একবারই ব্যতিক্রম ঘটেছিল, সেটি ২০১২ লন্ডন অলিম্পিকসে। যুক্তরাজ্যের পতাকাতলে ইংল্যান্ড এবং ওয়েলসের খেলোয়াড়রা খেলেছিলেন অলিম্পিকে। দলের অধিনায়ক ছিলেন ওয়েলসের রায়ান গিগস।
স্কটল্যান্ড কোনো খেলোয়াড় দেয়নি কারণ প্রথমে তারা নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডের খেলোয়াড়দের যুক্তরাজ্যের হয়ে খেলতে দিতে চায়নি। পরবর্তীতে স্কটল্যান্ড এবং নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডের কোনো খেলোয়াড় ছাড়াই যুক্তরাজ্যের দল গঠন করা হয়।
ফুটবলের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফা কখনো বল প্রয়োগ করেনি যুক্তরাজ্যকে একটি একক দল হিসেবে গঠন করার জন্য। নিজেদের আলাদা আলাদা দল নিয়ে গর্বের জায়গায় একচুল ছাড় দিতে রাজি নয় স্কটল্যান্ড, ওয়েলস এবং আয়ারল্যান্ডের মানুষ। তবে ইংল্যান্ডের অনেকের দাবি, বাকি দেশগুলো রাজি হলে তাদের দিক থেকে একক দল তৈরিতে কোনো সমস্যা নেই।
কিন্তু শুধুমাত্র ইংল্যান্ড চাইলেই তো আর হবে না, বাকিদেরও এই বিষয়ে সম্মটি জ্ঞাপন করা জরুরি। যতদিন সেটি না হবে, ততদিন চার দেশের পতাকাতলে চারটি ভিন্ন দলকেই দেখে যেতে হবে ফুটবল প্রেমীদের।